দীন ইসলাম: ভারত ও পাকিস্তানি স্টুডেন্টদের মতো বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের জন্য সুখবর আসছে। স্টুডেন্ট ডাইরেক্ট স্ট্রিম (এসডিএস) এর আওতায় ভিসা শিথিল সুবিধা পাবেন কানাডায় পড়তে আগ্রহী বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডার ইমিগ্রেশন মিনিস্ট্রি। বিষয়টি সর্ম্পকে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে তারা। এর ফলে বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশি স্টুডেন্ট এখন কানাডায় পড়তে আসতে পারবেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত ব্যক্তিত্ব ও রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ি আলম মোড়ল- এর যোগাযোগ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দেন দরবারের কারনে বিষয়টি নিয়ে কানাডা সরকারের টনক নড়ে বলে মনে করছেন বাঙ্গালি কমিউনিটির অনেকেই। এসডিএস- এ যুক্ত হলে বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা মোটা অঙ্কের ব্যংক ব্যালেন্স দেখানো ছাড়াই কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা পাবেন। তবে কানাডিয়ান ব্যাংকে ১০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে রাখতে হবে। এছাড়া ২০ দিনের মধ্যেই ভিসার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। ফলে দিনের পর দিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কানাডার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ঘুরতে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ি আলম মোড়ল প্রথম বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের এসডিএসে যুক্ত করার বিষয়টি প্রথম কানাডিয়ান সরকারের নজরে আনেন। তিনি বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা কোন যুক্তিতে এসডিএসে যুক্ত হচ্ছে না তা জানতে চান। ২০২১ সালে ফিরতি এক ই-মেইলে কানাডার ইমিগ্রেশন মিনিস্ট্রি থেকে আলম মোড়লকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, ২০১৮ সালে কানাডা সরকার এসডিএস চালু করে। শুরু থেকে চীন, ভারত, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের স্টুডেন্টরা এ সুবিধা পেয়ে আসছে। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে পাকিস্তানের স্টুডেন্টরা এসডিএসের আওতায় সুবিধা পাচ্ছে। এরপর ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সেনেগাল ও মরক্কো এসডিএসের আওতায় সুবিধাগুলো পাচ্ছে। আলম মোড়লকে দেওয়া ই-মেইলে আরো বলা হয়, স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারিদের প্রসেসিং টাইম কমিয়ে দেয় এসডিএস। বেশিরভাগ আবেদন তিন সপ্তাহের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হয়। তাই বেশিরভাগ স্টুডেন্ট এসডিএসের মাধ্যমে দ্রুত স্টাডি পারমিট পেয়ে যাবেন। এসডিএসের শর্তের ক্ষেত্রে ই-মেইলে বলা হয়েছে, প্রথম বছরের টিউশন ফি পরিশোধ, ১০ হাজার ডলারের গ্যারান্টেড ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট (জিআইসি), মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন এবং আইএলটিএস স্কোর ৬ হলেই এসডিএস সুবিধা পাবেন। এসডিএসে বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের কেন যুক্ত করা প্রয়োজন। করলে বাংলাদেশিরা কি কি সুবিধা পাবেন এনিয়ে ভোরের আলো’র সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ি ও বাঙ্গালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ আলম মোড়ল। আপনি এসডিএসে বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের যুক্ত করার উদ্যোগ নিলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে প্রায় এক লাখের উপর ভারতীয় স্টুডেন্ট কানাডাতে এসেছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ৮০ হাজারের উপরে। কেন ভারতীয় স্টুডেন্ট বেশি আসছে? আমরা বাংলাদেশিরা কেন বেশি পরিমাণ স্টুডেন্ট নিয়ে আসতে পারছি না? এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়েই স্টুডেন্ট ডাইরেক্ট স্ট্রিম (এসডিএস) প্রোগ্রামের কথা জানতে পারি। এরপর ২০২০ সালের শেষে কানাডা ইমিগ্রেশন মিনিস্ট্রিকে একটি চিঠি দেই। এর ভিত্তি্তেই তারা একটি জবাব দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশের প্রতি নাড়ির টান থেকেই এ কাজটি করছি। এসডিএসে বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে? এমন প্রশ্নে আলম মোড়ল বলেন, বাংলাদেশি হাইকমিশনারের সঙ্গে আমার দুইবার মিটিং হয়েছে। তিনি তাঁর তরফ থেকে কানাডা সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। আমিও আমার নির্বাচনী এলাকার ফেডারেল সরকারের এমপি সালমা জাহিদ-এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের সহায়তা করছেন। কানাডার এসডিএসে যুক্ত হলে বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা কেমন সুবিধা পাবে, এ বিষয়ে আপনার মতামত কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৬৩ ভাগ স্টুডেন্ট-এর ভিসা আবেদন রিজেক্ট হয় আর্থিক অসামর্থ্যতার কারনে। একটি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ৫০-৬০ লাখ টাকার সম্পদ দেখাতে পারে না। তাই বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের ভিসা আবেদন রিজেক্ট হয়। এসডিএসে বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা যুক্ত হলে মাত্র ১০ হাজার ডলার বা সাড়ে সাত লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি কিনলে স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সমস্যা হবে না। এসডিএস নিয়ে বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের জন্য সুখবর আছে কিনা এমন প্রশ্নে আলম মোড়ল বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন মিনিস্ট্রি বাংলাদেশকে এসডিএসে যুক্ত করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফেডারেল এমপি ফ্রেড রিডিকপ এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা দিচ্ছেন। গত ৪ ই মে ফ্রেডের এক প্রশ্নের জবাবে কানাডার ইমিগ্রেশন মিনিস্ট্রি জানিয়েছে, আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি বাংলাদেশ এসডিএস প্রোগ্রামে যুক্ত হতে যাচ্ছে। বিষয়টি কানাডার মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে এসেছে। ২০২২ সালের ৪ ঠা মার্চ ইমিগ্রেশন মিনিস্ট্রি বাংলাদেশ হাইকমিশনকে এ বিষয়ে জানিয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের এ ঘোষণার পর আমরা মনে করি আমাদের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। এসডিএসে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে আর সমস্যা কোথায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভিসা প্রসেস হয় সিঙ্গাপুরে। এসডিএসে বাংলাদেশ যুক্ত হলে ভিসা প্রসেস কানাডা হাইকমিশন, বাংলাদেশ থেকে হতে হবে। না হলে এর সুফল আমরা পাবো না। এজন্য আমরা কানাডা হাইকমিশন, বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থাৎ ভিসা প্রসেস করার জন্য জনবল বাড়ানোর জন্য কানাডা সরকারের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি সফল হবো। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বর সেশন থেকেই বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা এসডিএসে যুক্ত হওয়ার সুফল পাবেন।