কেবল ভাগ্যটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল না। তা না হলে সেরা সুযোগগুলো তৈরি করেছিল বাংলাদেশই। ফরোয়ার্ডরা দিতে পারেননি নিখুঁত ফিনিশিং। তিন তিনবার গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারলেন না। যদিও তিনবার পেরেছিলেন। তার একটি বল ফিরল বারপোস্টে লেগে। আরেকবার গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দিলেন আদিল খান। তাই ড্র মেনেই ভারত থেকে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এদিন ১-১ গোলে ড্র হয় ম্যাচটি। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে সাদ উদ্দিনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সে লিড তারা ধরে রেখেছিল ৮৮ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু আদিল খানের দারুণ এক হেডে জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ।
শেষবার যখন ভারতের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ, তখন প্রতিবেশি দেশটি ছিল র্যাংকিংয়ের ১৭১ নম্বরে। এরপর সময় পেরিয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। ভারত এখন র্যাংকিংয়ের ১০৪ নম্বর দল। মাঝে ৯৬ নম্বর অবস্থানেও গিয়েছিল। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ৮৩ ধাপ। শক্তি ও সামর্থ্যের বিচারে অনেক এগিয়ে গিয়েছে দলটি। আর বাংলাদেশ অবস্থান করছে সেই তলানিতেই। তাই ভারতের বিপক্ষে এমন ফলাফল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য দারুণ বার্তা।
কদিন আগেই ঘরের মাঠে কাতারের বিপক্ষে দারুণ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচে ভালো সুযোগগুলো তারাই সৃষ্টি করে হারতে হয়েছিল ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায়তেই। অন্যথায় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া খুব কঠিন ছিল না জামাল ভুঁইয়াদের। তবে হারলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য তৃপ্তিদায়ক ম্যাচ। তাদের প্রত্যাশার পারদ তখন থেকেই উঁচুতে। এদিন ভারতের বিপক্ষেও আরও একটি স্বস্তিদায়ক ম্যাচ উপহার দিলেন জেমি ডের শিষ্যরা।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এদিন তিনটি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে ভারত। অন্যদিকে কাতারের বিপক্ষে খেলা দল ধরে রাখে বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরুতে এগিয়েও যেতে পারতো তারা। ২১ সেকেন্ডেই নিশ্চিত পেনাল্টিবঞ্চিত হয় অতিথিরা। সতীর্থের পাশে ডি-বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। পেছন থেকে ট্যাকল করে ফেলে দেন ভারতীয় এক ডিফেন্ডার। কিন্তু বিষয়টি এড়িয়ে যান রেফারি।
ভারত প্রথম সুযোগটি পায় চতুর্থ মিনিটে। সুনীল ছেত্রী ডি-বক্সের মধ্য থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন। তবে ধরে ফেলেন বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। দশম মিনিটে ছোট কর্নার থেকে ফাঁকায় হেড নিয়েছিলন রাহুল ভেকে। তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। সাত মিনিট পর কর্নার থেকে আরও একটি ভালো হেড নিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু অল্পের জন্য নিশানা ঠিক থাকেনি।
ম্যাচের ৩১তম মিনিটে প্রথমার্ধের সেরা সুযোগটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতীয় ডিফেন্ডার আদিল খানের ভুলে বল পেয়ে যান বিপলু আহমেদ। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বুদ্ধিদীপ্ত শট নিতে পারেননি তিনি। কর্নারের বিনিমিয়ে ফেরান ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সান্ধু। ৩৪তম মিনিটে প্রায় গোল পেয়ে গিয়েছিল ভারত। থ্রোইন থেকে ফাঁকায় দারুণ হেড নিয়েছিলেন মানবির সিং। তবে তার চেয়েও দারুণ দক্ষতায় লাফিয়ে উঠে পাঞ্চ করে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক রানা।
৩৭তম মিনিটে রায়হানের ট্রেডমার্ক থ্রো থেকে মোহাম্মদ নাবিব জীবনের নেওয়া হেড লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বাড়ানো বলে ভালো হেড নিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী। তবে সে বল ধরতে বড় কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি রানার।
৪২তম মিনিটে সল্ট লেক স্তব্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। অবশ্য এ গোলে বড় দায় রয়েছে ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রিতের। জামাল ভুঁইয়ার ফ্রিকিক থেকে এগিয়ে এসে পাঞ্চ করতে গিয়েছিলেন গুরপ্রিত। কিন্তু বলের নাগাল পাননি। ফাঁকায় বল পেয়ে দারুণ হেডে বল জলে জড়াতে কোন ভুল করেননি সাদ। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
৫০তম মিনিটে ডি-বক্স থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন উদান্তা সিং কুমাম। তবে সে বল ফিরিয়ে দেন ইয়াসিন খান। পরের মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। এক সতীর্থের বাড়ানো বলে গোলরক্ষককে একেবারে একা পেয়ে গিয়েছিলেন জীবন। কিন্তু গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে সে সুযোগ মিস করেন এ ফরোয়ার্ড।
৫৫ মিনিটে তো ভাগ্য বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ইব্রাহিমের দূরপাল্লার শট গোলরক্ষক গুরপ্রিতকে পরাস্ত করলেও লক্ষ্যভেদ হয়নি। বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রিকিক পেয়েছিল ভারত। সুনীল ছেত্রীর শট এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে বার পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৬০মিনিটে মিনিটে প্রায় গোল পেয়ে গিয়েছিল ভারত। আনাস এডাথোডিকার হেড একেবারে গোললাইন থেকে লাফিয়ে উঠে হেড দিয়ে ফেরান বিপলু আহমেদ।
৭২তম মিনিটে বাংলাদেশের ত্রাতা গোলরক্ষক আশরাফুল। ভারতীয় এক খেলোয়াড়ের দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান তিনি। পরের মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশকে হতাশ করেন আদিল। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বলে আলতো টোকায় গোলরক্ষককে পরাস্ত করেছিলেন জীবন। একেবারেই গোললাইন থেকে শেষ মুহূর্তে ব্যাকভলি করে ফেরান আদিল। চার মিনিট পর সুনীলের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
৮১তম মিনিটে ব্রান্ডন ফের্নান্ডেজের দূরপাল্লার শট বার পোস্টের অনেক উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর রাহুলের ভুলে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন বদলী খেলোয়াড় মাহবুবুর রহমান সুফিল। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হাতে লাগায় সে সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৮৮তম মিনিটে দারুণ শট নিয়েছিলেন সুনীল। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন এক ডিফেন্ডার। সে কর্নার থেকেই গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আদিল। এরপর আর গোল না হলে ড্র মেনেই মাঠ ছাড়ে দুই দল।