আইনীভাবে ড. মাহফুজুর রহমানের সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন বিয়ে করায় কণ্ঠশিল্পী ইভা রহমানকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে। ইভার গাওয়ার বিভিন্ন গান ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পর ইভার রহমান বলেন, ফেইসবুকে ‘বিদ্রুপ’ না করে আমাকে নিয়ে গঠনমুলক সমালোচনা করুন।
সোমবার কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ইভা রহমানকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য শুভ কামনা জানান। এই পোস্টের মাধ্যমেই এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের সংসার ভাঙার খবর প্রথম গণমাধ্যমে আসে। এরপর ইভার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চলতি বছরের ৪ জুন আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর ডিভোর্সের সার্টিফিকেট হাতে পাই। ১৯ সেপ্টেম্বর আমি নতুন করে বিয়ে করেছি।
ইভার নতুন স্বামির নাম সোহেল আরমান। তার সাথে পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিচয়টা হয়েছে খুবই সিম্পলি। একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের যেভাবে পরিচয় হয় সেভাবেই। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই কিংবা সে আমাকে অনেকদিন ধরে চেনে-ব্যাপারটা ওই রকম কিছু না। এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। শুরুতে ওই রকম খুব বেশি কথা হত-তা না, পরে একটা সময় ফোনে একটু বেশিই কথা হত। সে আমার সম্বন্ধে জানতে চাইত। আমি আমার লাইফ সম্বন্ধে বলেছি। তার লাইফ সম্বন্ধে শুনেছি। তখন মনে হয়েছে, আমাদের মন-মানসিকতা প্রায় একই রকম; আমরা একসাথে ভালো থাকব।
তার চেয়ে বড় কথা হল- আমার ছেলে মারুফকে ও অনেক ভালোবাসে, ছেলেও ওকে অনেক ভালোবাসে। দু’জনের মধ্যে বন্ডিংটা সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল। আমি সবসময় সেকেন্ড কিছু ভাবতে ভয় পেতাম। কিন্তু আমি যখনই ফিল করলাম, মারুফের প্রতি ওর আলাদা সখ্যতা আছে তখন ভয় কেটে গেছে। ফেইসবুকে পোস্ট করা ছবিগুলোতে দেখবেন আমার ছেলেও পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে আছে। ছবিগুলোও আমার ছেলেই তুলেছে। তার আগে আমি আরেকটা বিষয় কথা বলতে চাই।
মাহফুজুর রহমানের সাথে সম্পর্ক ভাঙ্গার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে জানে কি না- তা আমি জানি না। ২০০৩ সালে মাহফুজুর রহমানের সাথে আমার বিয়ে হয়। ২০০৬ সালে আমাদের ছেলে মারুফের জন্ম হয়। ও এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। ২০১২ থেকে আমরা আলাদা থাকা শুরু করি। আমি আর আমার ছেলে গুলশানের বাসায় থাকতাম। আর উনি (মাহফুজুর রহমান) বনানীর বাসায় থাকতেন। সবশেষ ৯ বছর ধরে আমরা আলাদা থাকছিলাম। এক সময় আমার মনে হল-এভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় কোনো সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। ৯ বছরে আমি সম্পর্কটা ঠিক করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওই দিক থেকে কোনো সাড়া পাইনি। এক সময় মনে হয়েছে, আমার একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। চলতি বছরের ৪ জুন ডিভোর্সের পেপার সাবমিট করি। ১৭ সেপ্টেম্বর ডিভোর্সের সার্টিফিকেট হাতে পাই। ১৯ সেপ্টেম্বর ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করি।
বিগত বছরগুলোতে ‘মনের না বলা কথা’, ‘মন ভেসে যায়’, ‘মন জোনাকি’, ‘মনে পড়ে যায়’, ‘মনের যে কথা’, ‘মন আঁধার’, ‘মন থেকে দূরে নও’, ’মন আমার’, ‘মন সাগরে ভাসি’ এবং ‘মনের তুলিতে আঁকি’-সহ ২৪টি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন এই শিল্পী।
ইভা বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারজুড়ে সুস্থ-সাবলীল গান করেছি। আমি এমন কোনো গান কখনো করিনি, যেটা খুব উত্তেজনাপূর্ণ কিংবা খুব সহজেই সুপারহিট হওয়া যাবে, দর্শকদের খুব কানে লাগবে। হয়ত বা সেকারণেই আমি খুব বেশি ফেমাস হইনি।’
ফেইসবুকে কেন তাকে নিয়ে মানুষ ‘বিদ্রুপ’ করে, সেই কারণ উদ্ধার করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন ইভা।
তিনি বলেন, ‘ট্রল যারাই করেন না কেন, সেটা যেন গঠনমূলক হয়। অনেক সময় সমালোচনার ফলে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। তখন মনে হয়, আমি দর্শকদের গান উপহার দেয়ার জন্য এত কিছু করলাম আর আমিই এত ট্রলের সম্মুখীন হলাম! এত সমালোচনার সম্মুখীন হলাম।
ইভা বলেন, আমার মনে হচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আমি মরে যাব। সমালোচনা হতে পারে। তবে সেটা এরকম হওয়ার উচিত, উনি গানটা এভাবে গেয়েছেন, এভাবে গাইলেই পারতেন। আরেকটু ভালো গাইলে পারতেন বা উনার কণ্ঠে আমরা এই ধরনের গান শুনতে চাচ্ছি।’
গানের পাশাপাশি পোশাক নিয়েও যে ফেইসবুকে অনেকে ‘বিদ্রুপ’ করেন, সে কথাও বলেন ইভা।
তার ভাষ্যে, ‘অনেকে আমার গান নিয়ে ট্রল করেছে, ‘গানের পাখি ইভা রহমান’, ‘ইভা রহমানের গান দেখলে ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক কিছু দেখা যায়।’ তবে বিদ্রুপের মুখেও নিজের ‘ট্রেন্ড’ ধরে রাখতে চান জানিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ আগামীতেও রঙ-বেরঙের শাড়িও দেখা যাবে, আমি আমার এই ট্রেন্ডটা রাখব।’