রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও কলেজের অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে সর্বত্র। ফোনালাপে অধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, ‘তিনি বালিশের নিচে পিস্তল রেখে ঘুমান’। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বেশ সমালোচনা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুল আর অন্য আট দশটা স্কুলের অধ্যক্ষ, প্রধানশিক্ষক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পার্থক্য কোথায়? প্রতিনিয়ত তাদের অনেকেই এইরকম আলাপ ফোন বা সরাসরি করছে। পার্থক্য হলো কামরুন নাহার মুকুলের ফোনালাপটা ফাঁস হয়েছে অন্যদেরটা এখনো ফাঁস হয়নি। ঘটনা কিন্তু ঠিকই ঘটছে।…
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বালিশের নিচে পিস্তল রেখে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ না ঘুমিয়ে কোন মাদ্রাসার শিক্ষক ঘুমালে কেমন হতো বন্ধুরা? পুরো মাদ্রাসা চারিপাশে ঘেরাও করে এতোক্ষণ জঙ্গি ধরার অভিযান পরিচালনা করা হতো নিশ্চয়ই!’’
তিনি লিখেন, ‘‘ইরফান সেলিমরা অস্ত্র, মাদক, টর্চারসেল, ওয়াকিটকিসহ আটক হয়েও জঙ্গি হয় না! অথচ লিফলেট, ধর্মীয় বই সাথে থাকলেই আজকাল যাকেতাকে সহজেই জঙ্গি বানানো হচ্ছে?’’
পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইমরুল কায়েস অনেকটা রাশেদের প্রশ্নের সঙ্গে মিল রেখে লিখেছেন, একবার শুধু চিন্তা করেন, তামিরুল মিল্লাতের প্রিন্সিপাল ফোনে কাউকে বললো আমি বালিশের নিচে রিভলভার নিয়ে ঘুমাই। আমারে এসব বয়ান দিবেন না। তারপর কি ঘটতে পারে দেশে ভাবতে থাকেন।
তিনি লিখেন, সেকুলার পাড়ায় চুলকানি শুরু হয়ে যাবে, শাহবাগীরা হাটু গেড়ে বসে পড়বে শাহাবাগে, ৭১-টিভি ১৫ মিনিট পর পর লাইভ টেলিকাস্ট করবে দেশের পরিস্থিতি এখন থমথমে যে কোন সময় দেশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে সুশীলরা মাদ্রাসা বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠবে।
তিনি আরও লিখেন, ভিকারুন্নিসার প্রিন্সিপাল রাজনীতি করা মেয়ে, সে ভদ্র না তাই সে বালিশের নিচে পিস্তল রাখতেই পারে!
তবে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সুপার এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফোনালাপের একাংশ প্রকাশ করা হয়েছে। অভিভাবক মীর সাহাবুদ্দিন টিপু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন জানিয়েছিল। আমি ভর্তি করাইনি। এছাড়া আরও কিছু বিষয় নিয়ে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত। এসব কারণে আমারে সরিয়ে দিতে তারা পরিকল্পনা করেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুরো ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের খণ্ডিত অডিওতে অভিভাবক টিপু ঠান্ডা মাথায় কথা বললেও অধ্যক্ষ ছিলেন উত্তেজিত। তবে কেন কী কারণে অধ্যক্ষ উত্তেজিত তা ফোনালাপে স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এ ফোনালাপটি গত ২৬ জুলাই ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রথম নজরে আসে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নায়েক নুর লিখেছেন, ‘বালিশের নিচে পিস্তল’ আর মুখে গালি! কারা আমাদের শিক্ষক? কাদের হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা! আমাদের ভবিষ্যৎ কি?!’’
পাবলিকিয়ান পরিবার নামে এক ফেসবুক পেজ অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের ছবি শেয়ার করে অনেকটা মজা করে লিখেছেন, ‘‘পিস্তল রেখেই কেন ঘুমাইতে হবে? ককটেল, চাপাতি, গ্রেনেড; এসব কি দোষ করলো?’’
এদিকে, অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও অভিভাবক ফোরামের উপদেষ্টা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তারকে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন।