নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ পিছু ছাড়ছে না মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। জামালপুরের ডিসির আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের পর তাকে লঘুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাঠ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। এবার এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে বাগেরহাটের ডিসি আ. ন. ম. ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন ওই নারীর স্বামী। এ অভিযোগ ওঠার এক মাসের মাথায় আ. ন. ম. ফয়জুল হককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। আর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব মুহাম্মদ আজিজুর রহমানকে বাগেরহাটের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ই এপ্রিল প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত এক ব্যক্তি তার সংসার ভেঙে যাচ্ছে মর্মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর প্রতিকার প্রার্থনা করেন।ওই ব্যক্তি তার লিখিত অভিযোগে বর্ণনা করেন, ২০২০ সালের ৫ই আগস্ট তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফয়জুল হকের সঙ্গে তার স্ত্রীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে ফয়জুল হক অফিস চলাকালীন ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তাকে কবিতা গান শুনিয়ে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করতেন। ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের চ্যাটিং চলতো। এ সময় ফয়জুল হক তাকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেন এবং কুপ্রস্তাব দেন। তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার এই পর্যায়ে ফয়জুল হক নটরডেম কলেজের পাশে রিও কফি শপে নানা অজুহাতে ওই নারীকে কফি খাওয়ার জন্য ঘন ঘন নিমন্ত্রণ করেন। সে বছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অফিস চলাকালে কফি পানের নামে তারা ঘনিষ্ঠভাবে আড্ডা দিতে থাকেন। পরবর্তীতে নিজের স্বামীকে ঘটনাগুলো অবহিত করেন ওই নারী।
১৩ই অক্টোবর বিকালে ফয়জুল হক ওই নারীকে পুনরায় কফিশপে ডাকেন। ওই নারী সেখানে পৌঁছলে ফয়জুল হক তাকে অসুস্থতার কথা বলে কমলাপুর রেল স্টেশনের পাশে রেলওয়ে রেস্ট হাউজে নিয়ে যান। পথিমধ্যে ওই নারীকে বলেন ‘আমি ওখানে শুয়ে রেস্ট নিবো আর তুমি বসে আমার সঙ্গে গল্প করবে’। ওখানে পৌঁছানোর আগেই ওই রেস্ট হাউজের কর্মচারীকে দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনে আনেন ফয়জুল হক। রেস্ট হাউজের দোতলার একটি রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ফয়জুল হক ওই নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ওই নারী শারীরিক সমস্যার কথা বলেও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি। বিধ্বস্ত অবস্থায় অফিস হয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। ফয়জুল হক পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে ওই নারীর কাছে ক্ষমা চান। এরপর নিজের জন্মদিনের কথা বলে ১৮ই অক্টোবর পুনরায় ওই রেস্টহাউজে তাকে ডেকে নেন। রেস্টহাউজের পৌঁছা মাত্রই ফয়জুল হক রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা অনেক কান্নাকাটি ও প্রতিরোধ করা সত্ত্বেও তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। বিষয়টি নৈতিকভাবে তাকে আহত করায় স্বামীকে জানানোর হুমকি দেন তিনি। এ সময় ফয়জুল হক কাকুতি মিনতি করে বিষয়টি গোপন রাখার এবং বন্ধুত্ব চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে। ২৩শে অক্টোবর ভুক্তভোগী নারী বিষয়টি তার স্বামীকে অবহিত করেন। অভিযোগে আরো বলা হয়, অপকর্ম ফাঁস হওয়ার ভয়ে ফয়জুল হক কৌশল পরিবর্তন করেন। তিনি ওই নারীকে তার স্বামীর কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নানাভাবে প্রলুব্ধ করে যাচ্ছেন। ব্যাংক কর্মকর্তা ওই নারী খুলনায় বদলি হওয়ার পর ফয়জুল হকও বাগেরহাটে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। ইতিমধ্যে ওই নারী তার স্বামীর প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ ও শত্রুভাবাপন্ন হয়ে পড়েন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে তার স্বামীকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন জেলা প্রশাসক ফয়জুল হক। অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, তার স্ত্রী ও ফয়জুল হকের যোগাযোগের বাস্তব ও অকাট্য প্রমাণ তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দাখিল করেছেন। তার সংসারে ৯ বছর ও ৩ বছরের দুটি সন্তান আছে। স্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডে সন্তান নিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজের ও সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত বলে জানান তিনি। আ. ন. ম. ফয়জুল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই নারীকে তার স্বামী ডিভোর্স দিয়েছিল। তাদের পারিবারিক সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। ডিভোর্স দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ওই নারীর স্বামী বলেন, তিনি আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স স্থগিতের আবেদন করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ডিভোর্সের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আ. ন. ম. ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।