জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোষাধ্যক্ষ হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল মাননান। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পিআরএল ভোগরত)। বৃহস্পতিবার (৬ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মো. নুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের কথা জানানো হয়।
এদিকে সরকারি একজন আমলাকে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকেই এই নিয়োগের সমালোচনা করছেন।
বিষয়টির সমালোচনা করে ইমরান হোসেন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বেশি বেশি বিল্ডিং বানানো মানেই উন্নয়ন নয়। তেমনি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় বানানোও শিক্ষার উন্নয়ন নয়। বরং এটা হতে পারে উচ্চবিলাসী আমলাদের চাল। যাদের শেষ বয়সের উচ্চ আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি ঘটবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা হওয়ার মাধ্যমে। এটা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। কিন্তু শিক্ষকেরা মানলেন না। কোন কোন মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক মনে করলেন এটা সরকার বিরোধিতা। কোন কোন পদলোভী, পদলেহী শিক্ষক মনে করলেন এই তো সুযোগ ভিসি হওয়ার। বেশি বেশি বিশ্ববিদ্যালয় মানে বেশি বেশি ভিসি। কিন্তু এর মাধ্যমে যে বিশ্ববিদ্যালয় টুনু মিয়া ডিগ্রি কলেজে রূপান্তর হয়ে যায়; সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলেন না। আমি সেইসব শিক্ষকদের আহ্বান জানাতে চাই। আসুন। উদযাপন করি। চিয়ার্স আপ!’
নিয়োগের প্রজ্ঞাপনটি ফেসবুকে পোস্ট করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সামিউল ইসলাম লিখেছেন, ‘সকল পেশায় অগ্রজদের নূন্যতম ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থাকে যারা পেশার গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধনে কাজ করে। আর আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রথমে ব্যর্থ হয়েছেন পদপ্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ রক্ষা করে চলা। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষকদের চিন্তা চেতনা সঠিকভাবে উপস্থাপন ও গুরুত্ব অনুধাবন করাতে ব্যর্থ হওয়া। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- ক্ষুদ্র স্বার্থে কাউকে চরমভাবে অপদস্থ করা। আজকের পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষক নেতৃবৃন্দের চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই দেখছি না। সকলের সুমতি হবে এহেন অযাচিত কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে বিরত থাকার জন্য সঠিক পরামর্শ দিবে। এমনিতে প্রজাতন্ত্রে কর্মরত বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে অন্তদ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট। তা নিরসন না করে বরং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধিবদ্ধ পদ দখলের সূচনা করলেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এহেন উদ্যোগকে মনেপ্রাণে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের প্রত্যেকের পেশার জায়গাগুলোয় ভিন্নতা আছে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চলে। স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে আমরা দেখে আসছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে আসছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সরকারি কর্মকর্তারা তাদের জায়গায়, আমরা আমাদের জায়গায় কাজ করবো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কোন সংগত কারণে সরকার সরকারি কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচুর দুর্নীতির খবর পাচ্ছি। আমরা শিক্ষকরা যখন দুর্নীতি করি, তখন আমাদের মধ্যে বন্ডিং কাজ করে। আমরা এটা নিয়ে কোন কথা বলিনা, প্রতিবাদ করিনা। এমনকি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতাও আমাদের মধ্যে আছে। সব চিন্তা করেই সরকার হয়তো নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একজন আমলা ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে যে দুনীতি আছে সেগুলো চিহ্নিত করা উচিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিধিনিষেধ পালন করে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সেভাবে নিতে হবে। নাহলে সরকারি হস্তক্ষেপ এখানে আরো বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বে অন্য পেশাজীবী আসুক সেটা চান না জানিয়ে তিনি বলেন, এই দায়িত্বগুলোতে আমাদের শিক্ষকদের থাকতে হবে। এটা আমাদের শিক্ষকদের ঐতিহ্য। এই দায়িত্বগুলো আমরাই পালন করে আসছি। এর ব্যত্যয় হওয়াটা শিক্ষক সমাজের জন্য সম্মানজনক না। পদগুলোতে শিক্ষকরাই দায়িত্ব পালন করবে।
শিক্ষকদের প্রতি সরকারের একটি অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদেরকে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার জায়গায় পরিষ্কার থাকতে হবে। আমাদের ভুল-ভ্রান্তি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুনীতির বিষয়গুলো গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, তা নিয়ে ইউজিসি রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তাহলে এ ধরণের নিয়োগ ভবিষ্যতে হবে না এবং শিক্ষকরাও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার জায়গায় পরিষ্কার থাকবে বলে উল্লেখ করে এই শিক্ষক।উৎসঃ দা ডেইলি ক্যাম্পাস