মেহরাব হোসেন জুনিয়র- একসময়ের সাড়া জাগানো ক্রিকেটার। ২০০৬ সালে অভিষেকের পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছিলেন ৭টি টেস্ট, ১৮টি ওয়ানডে ও ২টি টি-টোয়েন্টি। ২০০৯ সালের আগস্টের পর জাতীয় দলে সুযোগ না হলেও আরও এক দশক ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। মাঝখানে মনোযোগ দিয়েছিলেন ধারাভাষ্যেও। তবে এখন তিনি দেশের ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে।
যদিও অতৃপ্তি নিয়ে মেহরাবের এই ‘নীরব প্রস্থান’ সম্পর্কে এখনো অনেকেই জানেন না!
ঘরোয়া ক্রিকেটে আয়ের দিক থেকে ক্রিকেটাররা পিছিয়ে পড়ছেন- এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মেহরাবের ‘দেশ ছাড়ার গৃহীত সিদ্ধান্ত’ যেন সেই অভিযোগকেই সত্যতা দিচ্ছে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পাড়ি জমিয়েছেন কানাডায়। তাহলে কি দেশের ক্রিকেটারদের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তাটুকুও দিতে পারছে না বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট?
পরোক্ষভাবে উত্তর জানা যাক মেহরাবের কণ্ঠেই। তিনি বলেন, ‘কানাডা আসি গত ডিসেম্বরে। পরিবার আসে গত জুলাইয়ে। হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত। দুইটা সন্তান আছে আমার। তাদের কথা চিন্তা করেই চলে এসেছি। চাচ্ছিলাম তারা কানাডায় বড় হোক।’
ক্রিকেটের লোক তিনি, দেশের ক্রিকেট দিয়েই পেয়েছেন পরিচিতি। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা সহজ কাজ নয়। তবুও দুই সন্তানের মঙ্গলের কথা ভেবেই আবাস গড়েছেন উন্নত দেশ কানাডায়।
৩২ বছর বয়সী জাতীয় দলের সাবেক এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা খুবই কষ্টকর। এখনো আমার অবসরের বয়স হয়নি। এজন্য মাঝেমাঝে খারাপ লাগে। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। একটা সময় আপনাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবতে হয়। সেজন্যই মূলত অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।’
কানাডায় একটি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে খেলছেন সুযোগ পেলেই। অবশ্য দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে! বাংলাদেশ কাঁপানো ক্রিকেটার কানাডার ক্রিকেটে দেশের আমেজটাই খুঁজে পান না।
‘হ্যাঁ, ক্রিকেট অবশ্যই মিস করি। দেশের অনেকের সাথেই এখনো যোগাযোগ আছে। কদিন আগে জাতীয় লিগ শুরু হল। খারাপ লাগে মাঝেমাঝে। কদিন আগেও মাশরাফি-রিয়াদের সাথে কথা হচ্ছিল। লিগ শুরু হচ্ছে, অনেকে অনুশীলন শুরু করেছে। খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। দেশের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও এখানে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত আছি। শ্রীলঙ্কান একটা ক্লাবের হয়ে খেলছি। টরোন্ট টপ লিগ বলা হয়, সুপার নাইট- এখানে। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে তুলনা করার মত নয়।’– বলেন তিনি।
মেহরাবের বয়সী ক্রিকেটাররা এখনো দাপটের সাথে খেলে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেট। তার সিনিয়র অনেক ক্রিকেটারও সদ্য শুরু হওয়া জাতীয় লিগে মাঠ মাতাচ্ছেন। অথচ মাত্র ৩১ বছর বয়সে মেহরাব বিদায় বলেছেন দেশের ক্রিকেটকে। এ নিয়ে তাই আফসোস থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলাই এখন তার মূলমন্ত্র। প্রত্যাশা- এগিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট।
মেহরাব জানান, ‘আফসোস তো থাকবেই। কিছু ব্যাপার আছে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়। দেশের ক্রিকেট নিয়ে বলব- একটি দলের ভালো সময়ও যাবে খারাপ সময়ও যাবে। খেলোয়াড় এবং দর্শক সবারই সবসময় দলকে সমর্থন করা উচিৎ।’
কানাডায় পরিবারের দেখাশোনা করছেন, একইসাথে চলছে চাকরি, পড়াশোনা ও টুকিটাকি ক্রিকেট। তাই দেশে আসার সুযোগ ও সময় মেলে না বললেই চলে। জীবন যেন চলে বিশুদ্ধভাবে আর মসৃণ গতিতে, তাই দোয়া চাইলেব সবার কাছে, ‘বাংলাদেশ আসব। গত এপ্রিলেও এসেছিলাম। কানাডায় তো শিক্ষার্থী হিসেবে এসেছি। উচ্চতর পড়ালেখা করছি, পড়ার একটু চাপ থাকে। খণ্ডকালীন চাকরিও করি। পরিবারও এখানে, জীবন বেশ ব্যস্ত। সবসময় সবকিছুর খোঁজ রাখা সম্ভব হয় না। আমার জন্য দোয়া করবেন।’