পটিয়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সবকিছু একটি পরিবারের সদস্যদের ঘিরে হচ্ছে। হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পরিবারের ওপর ভর করেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোটি কোটি টাকা একটি দুষ্টচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ।
পরিবারটির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দলের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন, অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীদের দলে পদ দেওয়া, মনোনয়ন বাণিজ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়াসহ পরিবারটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে দলের ত্যাগী নেতারা ক্ষুব্ধ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১২ বছরে পটিয়ায় যে উন্নয়ন হয়েছে ৩৫ বছরেও সে উন্নয়ন হয়নি। পটিয়া (চট্টগ্রাম-১২) সংসদীয় আসনে ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। পটিয়ার চেহারাও বদলে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এত কিছুর পরও হুইপ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে থেকে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় ১২ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অর্জন ম্লান হতে বসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মী ও ঠিকাদারদের অভিযোগ, উন্নয়ন কাজের দরপত্রে হুইপ ও তার পরিবারের সদস্যদের বাইরে গিয়ে কেউ অংশ নিতে পারে না। তাদের ‘ম্যানেজড’ করেই কাজ নিতে হয়। বেড়িবাঁধ-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি ও শ্রীমাই খালের বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজ করছে সরকারি দলের নেতাদের সিন্ডিকেট। সাধারণ ও পেশাদার ব্যবসায়ী বা ঠিকাদাররা উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারেন না। তাদের অভিযোগ, হুইপের পরিবারের ওপর ভর করে একটি চক্র নানা কৌশলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বুধবার বিকালে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে রাজাকারপুত্র, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা কথা বলছেন। দলের পরিত্যক্ত নেতা এবং যারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারছেন না তারাও আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেড় শতাধিক একাডেমিক ভবন হয়েছে। ব্রিজ-কালভার্ট ও শত শত কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে। বেড়িবাঁধ হচ্ছে। সমালোচনা করে কেউ উন্নয়ন অর্জন ম্লান করতে পারবে না। স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার করে সফল হতে পারবে না।
হুইপ সামশুল হক বলেন, দলের কেউ কেউ বৈধভাবে দরপত্র জমা দিচ্ছেন। তাদের বৈধ ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে কি আমি অপরাধ করছি! তিনি বলেন, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়নে ইউনিয়নে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি করেছি। তাদের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাই উন্নয়ন কাজে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি কমিশন বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ১২ বছরে পটিয়ায় ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী আমার ছেলে শারুনকে সহ্য করতে পারছে না। তারাই তার বিরুদ্ধে লেগেছে। পরিবারের কোনো সদস্য অনিয়ম-অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নন বলেও তিনি দাবি করেন।
সূত্র জানায়, পটিয়া (চট্টগ্রাম-১২) সংসদীয় আসনে ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থী গাজী শাহাজাহান জুয়েলকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন সামশুল হক চৌধুরী। এ আসনে তিনি টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথম মেয়াদে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে দ্বিতীয় মেয়াদ থেকে নানা অভিযোগ দানা বাঁধতে থাকে। তৃতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য ও হুইপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে।উৎসঃ যুগান্তর