প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদকের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এসময় দুইপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক সুশান্ত দাস গুপ্তের অভিযোগ, হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে হবিগঞ্জের পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমের নেতৃত্বে এ হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। হামলা করা হয়েছে তার সম্পাদিত পত্রিকার অফিসেও।
তবে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন মেয়র সেলিম।
সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদরে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার সকালে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় সম্প্রতি হবিগঞ্জের পৌর মেয়র, ছাত্রলীগ সভাপতিসহ অনেকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এনিয়ে মেয়রসহ অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। সোমবার দুপুরে এসব প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধরা একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এসময় আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক সুশান্ত দাস গুপ্ত ফেসবুকে একটি উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসের পরই মানববন্ধনকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা হবিগঞ্জ সদরের চিলাকান্দির সুশান্তের বাসায় হামলা চালায়।
ওসি বলেন, এসময় দুই পক্ষই পরষ্পরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। পরে পত্রিকা অফিসেও ইটপাটকেল ছুঁড়ে কয়েকজন।
বাসায় হামলাকালে পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ওসি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি। শুনেছি আক্রান্তরা মামলা দায়ের করবে। তারা না করলে পুলিশ বাদী হয়েই মামলা করবে। দুই পক্ষের সংঘাত থামাতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
জানা যায়, এ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা এবং রিপন, হাসান ও ইয়াকুব নামে ৩ জনকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক সুশান্ত দাসগুপ্তের অভিযোগ পুলিশের উপস্থিতিতেই মেয়রের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার বাসা ও অফিসে হামলা চালায়। শহরে তার শ্বশুরের বাসায় হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ সুশান্তের।
সুশান্ত বলেন, আমার বাসায় হামলা করে যাওয়ার পথে হামলাকারীরা আশেপাশের ১০ থেকে ১৫টি হিন্দু বাসা-বাড়িতে হামলা করে।
তবে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘একদল বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে সুশান্ত দাস গুপ্তের লোকজনের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু ফেসবুক লাইভে এসে সুশান্ত দাস গুপ্ত যেভাবে অশ্লীল ও অশোভন ভাষায় গালি-গালাজ করেছেন, তা কখনো একটি পত্রিকার সম্পাদকের মুখের ভাষা হতে পারে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, এরআগে স্থানীয় সাংসদ আবু জাহিরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মামলায় গতবছরের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক সুশান্ত দাস গুপ্ত।