ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বিচার না পাওয়ায় পাঁচ বছরের মেয়ে ও আট বছরের ছেলেকে হত্যা করে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক মা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রাম থেকে পুলিশ তিনটি লাশ উদ্ধার করেছে।
মৃতরা হলেন পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের শিমুল সরদারের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন (৩০), তার আট বছরের ছেলে লাঙ্গলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মাহাফুজুর রহমান ও পাঁচ বছরের মেয়ে মোহনা খাতুন।
পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের আব্দার সরদারের ছেলে ইয়াকুব আলী সরদার বলেন, তার ভাই শিমুল সরদার ট্রাক্টর চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ কারণে তাকে জেলার বাইরেও দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। প্রায় দুই মাস আগে ভাই শিমুল সরদার বাগেরহাটে ট্রাক্টর নিয়ে কাজ করতে যান। গত সোমবার শবে বরাতের দিন সকাল ১১টার দিকে ভাইঝি মোহনাকে বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে প্রতিবেশী মাদক কারবারি লাল্টু গাজীর ছেলে বখাটে হৃদয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে ভাই শিমুলকে জানিয়ে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে ভাইয়ের আসতে কয়েকদিন দেরি হবে বলে ভাবিকে জানান। এরপর বাবা (শ্বশুর) আব্দার সরদারকে জানালে তিনিও মামলার খরচের ভয়ে থানা পুলিশ না করার পরামর্শ দেন। এরপর প্রতিকার চেয়ে ভাবি মাহফুজা সোমবার বিকেলে লাঙ্গলঝাড়া ইউপি সদস্য সাফিজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন। সামনে ভোট তাই তার কিছু করার নেই বলে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেয় সাফিজুল। মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের কাছে গেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শাহীদা খাতুনের কাছে পাঠিয়ে দেন মাহফুজাকে। সে অনুযায়ী বুধবার সন্ধার পর শাহীদা খাতুন বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে বৃহস্পতিবার থানায় মামলা করতে পরামর্শ দেন। থানায় মামলার কথা জানতে পেরে ভাবিকে হুমকি দেন ধর্ষণের চেষ্টাকারীর বাবা লাল্টু গাজী। বুধবার রাতেই হুমকির বিষয়টি ভাই শিমুলকে মোবাইলে অবহিত করেন ভাবি।
ইয়াকুব আলী আরো জানান, সকালে ভাই শিমুল সরদার বাগেরহাট থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ৮টার দিকে ভাবি পার্শ্ববর্তী লাঙ্গলঝাড়া বাজার থেকে নাস্তা কিনে এনে দুই সন্তানকে খাওয়ান। সকাল ১০টার দিকে ভাবির মা মনোয়ারা খাতুন ঘরের মধ্যে আড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়ে মাহফুজার লাশ, মেঝেতে নাতি লাঙ্গলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মাহফুজুর রহমান ও দরজার মুখের কাছে নাতনি মোহনার লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তিনিসহ স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর খায়রুল কবীর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের চৌধুরী ঘটনাস্থলে আসার পর তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
যশোর জেলার শার্শা থানার বসতপুর গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বলেন, শিশু ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে তার মেয়ে মাহফুজা মোবাইল ফোনে আত্মহত্যার কথা বলে। তিনি তাকে বিরত থাকতে বলে তার বাড়িতে আসছেন বলে মেয়েকে জানান। সকাল ১০টার দিকে মেয়ের বাড়ির দরজার মুখে নাতনির, ঘরের মেঝেতে নাতি ও ঘরের আড়ার সাথে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। শিশু মোহনার ধর্ষণের চেষ্টার বিচার না পেয়ে তার মেয়ে মাহফুজা দুই সন্তানকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, দুই শিশুকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মাহফুজা আত্মহত্যা করেছে না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। লাশ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।উৎসঃ কালের কণ্ঠ