অবসান হলো সকল অপেক্ষার। চার দশক পর মাঠে বসে পুরুষদের ফুটবল উপভোগ করতে পারলেন ইরানের নারীরা। ঐতিহাসিক উপলক্ষকে আরও বেশি স্মরণীয় করতে রাখতে দাপুটে ফুটবল খেললেন দলটির খেলোয়াড়রা। তাতে কম্বোডিয়াকে গোলবন্যায় ভাসাল ইরান।
২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ১৪-০ গোলে জিতেছে ইরান। টানা দুই জয়ে ‘সি’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছে তারা।
পাঁচবার বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইরান ঘরের মাঠে তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে পাত্তাই দেয়নি কম্বোডিয়াকে। দুই অর্ধে সমান সাতটি করে গোল আদায় করে নেয় তারা। একাই চার গোল করেন করিম আনসারিফার্দ। হ্যাটট্রিক করেন তারকা ফরোয়ার্ড সরদার আজমুন। কম্বোডিয়ার ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হার এটি।
১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানে পুরুষদের ফুটবল ম্যাচ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন নারী দর্শকরা। সেই নিষেধাজ্ঞার শৃঙ্খল ভেঙে গেছে এদিন। তিন হাজারের বেশি নারী খেলা দেখেন গ্যালারিতে বসে। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে, মাথায় বাহারি রঙের টুপি পরে ও ভুভুজেলা বাজিয়ে পুরোটা সময় দলকে অকুণ্ঠ সমর্থন জোগান তারা।
কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ উপলক্ষে ৭৮ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন আজাদি স্টেডিয়ামের সাড়ে তিন হাজার আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। তারা নিজেরাই টিকিট কেনার সুযোগ পান। বিক্রি শুরুর মুহূর্তের মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। এরপর নির্দিষ্ট একটি গ্যালারিতে বসে নারীরা খেলা দেখেন।
উল্লেখ্য, এত বছর পর ইরানের নারীরা মাঠে ঢোকার সুযোগ পেয়েছেন সাহার খোদায়ারির আত্মত্যাগের কারণে। গেল মাসে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন এই ফুটবলপ্রেমী নারী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাকে ‘ব্লু গার্ল’ বলে অভিহিত করা হয়।
ছেলে সেজে প্রিয় দল এস্তেঘালের ম্যাচ দেখার চেষ্টা করে আটক হয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী সাহার। এরপর তাকে কারাদণ্ড দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আদালতের বাইরে নিজের জীবন দিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি।
এরপর বৈষম্য নিয়ে সরব হয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। তার প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান পাল্টায় দেশটি, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পুরুষদের ফুটবল ম্যাচে নারী দর্শকদের মাঠে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়।