বাহরাম খান ,ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্রে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ক্রোড়পত্রে প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়েছে। ওই ক্রোড়পত্রে ব্যবহার করা ‘প্রধানমন্ত্রীর বাণী’ সরকারপ্রধানের অনুমোদন ছাড়াই কিভাবে স্বাক্ষরসহ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেল, এর ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ওসমান গণির পাঠানো চিঠিতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে গত ৭ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি ইংরেজি দৈনিক ও দুটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। ক্রোড়পত্রগুলো পরীক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিশ্চিত হয়, সেখানে প্রকাশিত বাণীতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেই। এমনকি বাণীতে ব্যবহার করা স্বাক্ষরটিও প্রধানমন্ত্রীর নয়। এ ছাড়া বাণীটিতে বেশ কিছু ভুলও ধরা পড়েছে বলে পররাষ্ট্রসচিবকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ক্রোড়পত্রসংক্রান্ত কাজে দায়িত্ব পালন করেছে প্রশাসন অনুবিভাগ। এই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার। তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের পরিবর্তে কাতারে গান-বাজনা ও মেলা অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে কাতারের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর তিনি আর কোথাও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাননি। এবার ক্রোড়পত্র প্রকাশের দায়িত্বে ছিল তাঁরই অনুবিভাগ। তাই তাঁর ভূমিকা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ওই ক্রোড়পত্র প্রকাশের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগ (সাবেক এক্সটারনাল পাবলিসিটি উইং) সরকারি ক্রোড়পত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয় বলে প্রশাসন বিভাগকে জানিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন বিভাগে এই পরামর্শের তোয়াক্কা না করে ৩৭ ব্যাচের একজন জুনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে ক্রোড়পত্র বের করেন অতিরিক্ত সচিব মাসুদ মাহমুদ খন্দকার। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রশ্ন ওঠায় সব দোষ চাপানো হচ্ছে ওই জুনিয়র অফিসারের ওপর। সেই সঙ্গে জনকূটনীতি বিভাগের সব কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, মাসুদ মাহমুদ খন্দকারের মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক আরো কিছু বিতর্কিত কাজের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট। একটি প্রকল্পের লোকবল ব্যক্তিগত কাজে লাগানোর অভিযোগে তাঁর বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ বিষয়ে ভুল হলে মূল দায় উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। কিন্তু জুনিয়র একজন অফিসারের ওপর দায় চাপিয়ে বাকিরা নিরাপদ অবস্থানে থাকতে চাচ্ছেন। গত সোমবার রাতে মাসুদ মাহমুদ খন্দকারকে ফোন দিলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টা দেখভালের দায়িত্বে আমি ছিলাম, এটা ঠিক। বিষয়টা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।’
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি সব ক্রোড়পত্র এখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। এবার প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ৭ই মার্চ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় অনেকগুলো জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সেসব ক্রোড়পত্রে সরকারের কারা কিভাবে ক্রোড়পত্রটি প্রকাশ করছে তা উল্লেখ আছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথকভাবে প্রকাশিত গত ৭ মার্চের পৃথক ক্রোড়পত্রে তেমন কোনো তথ্যই দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু অফিসার নিজেদের পৃথক রাষ্ট্র মনে করেন। তাঁদের মর্জিমাফিক কাজের জন্য সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার ছাড়াই সুদানে মিশনপ্রধান নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। এর পরও তাঁদের শিক্ষা হচ্ছে না। এসব বিষয়ে বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরো ঝামেলার আশঙ্কা থেকে যাবে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠালে তিনি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আছেন জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করার অনুরোধ করেন।