সুলতানা পারভীন। ডাক নাম নীলা। আবার কখনো বৃষ্টি। বয়স ৩৭’র কোঠায়। পৈত্রিক বাড়ি মাদারীপুর। বসবাস খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায়। তার বিরুদ্ধে বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে একাধিক পুরুষকে নিঃস্ব করার অভিযোগ উঠেছে। রয়েছে চেক জালিয়াতিসহ প্রতারণার নানা অভিযোগও। এ সংক্রান্ত একাধিক মামলার আসামিও তিনি।
একাধিক অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুলতানা পারভীন নীলা এ পর্যন্ত ৮-এর অধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ের কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দেয়া এবং তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেয়াই তার ব্যবসা। তার মূল টার্গেট সম্পদশালী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষ। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করেন। ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথার মারপ্যাচে আটকে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে সুলতানা পারভীনের প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। নীলার বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় শাহাবুদ্দিন শিকদার মাদারীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যদিও ২০০১ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে নীলার। নীলার দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ৬ই মে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোডস্থ মো. মকবুল হোসেনের ছেলে এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে। তখন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে এক লাখ টাকার কাবিননামায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে নীলার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন এবং ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মুনির। একপর্যায়ে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ নিয়ে ওই বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যান নীলা। এ ঘটনায় একই বছরের ১০ই ডিসেম্বর মুনির হোসেন তাকে তালাক দেন। যদিও পরবর্তীতে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে সুলতানা পারভীন নীলা ২০০৬ সালে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সুলতানা পারভীন আবারো নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোডের ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন। তবে শর্ত থাকে বিয়ের পর নীলা তার আত্মীয়ের মাধ্যমে বনিকে ইতালি নিয়ে যাবে। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই নীলার প্রতারণা প্রকাশ পেতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যেও বিচ্ছেদ ঘটে। এ ঘটনায় স্বামী শেখ মইনুল আরেফিন বনি প্রতারণার অভিযোগে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নীলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে বনি’র বিরুদ্ধেও খুলনার বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন নীলা। সূত্র আরো জানায়, বনি’র সঙ্গে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় নীলা ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে একজনকে বিয়ে করেন। সেখানেও দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়নি তার। একপর্যায়ে ইফতেখার আমেরিকা চলে যান।
অভিযোগ আরো উঠে এসেছে, ২০১২ সালে নীলা বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে, ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিমকে, ২০১৮ সালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রহমানকে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজিরঘাট এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আব্দুল বাকী’র সঙ্গে তার বিবাহ হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নীলার এক সাবেক স্বামী মো. আব্দুল বাকী ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জে অবস্থানকালীন ঢাকার একটি ফ্ল্যাট তার নামে লিখে না দেয়ায় ‘ম’ আদ্যক্ষরযুক্ত আরো এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো এবং জীবন নাশের হুমকি দেন নীলা। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২রা মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
নীলা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে তার পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে আফরীন আহমেদ নামে এক আত্মীয়ের বাসায় কিছুদিন অবস্থান করেন। সেই সুযোগে আত্মীয়ের বাসা থেকে একটি চেকের পাতা চুরি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলাটি বর্তমানে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে সুলতানা পারভীন নীলা বলেন, এ পর্যন্ত তার ৫টি বিয়ে হয়েছে। ছোটবেলাতেই তাকে বিয়ে দেয়া হয়। তবে মৃত্যুসহ নানা কারণে তিনি একাধিক স্বামী পরিত্যক্তা হন। স্বামীদের করা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, তারা যেমন অভিযোগ করেছে, তেমনি তাদের বিরুদ্ধেও তিনি মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়া তিনি কোনো চেক চুরি করেননি বা কাউকে বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেননি। উল্টো সবাই একজোট হয়ে তার পেছনে লেগেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।উৎসঃ মানবজমিন