আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে বলা হয় দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দলটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর সে কারণেই সাধারণ সম্পাদক পদটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি হলো দলের চালিকাশক্তি এবং সভাপতির নির্দেশে তিনি দলের সাংগঠনিক দায়িত্বগুলো দেখভাল করেন। কাজেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া যেকোনো নেতারই আরাধ্য বিষয়।
সাধারণ সম্পাদক পদে যারা ছিলেন তাদের কেউ কেউ এই দায়িত্বের ভার সামলাতে না পেরে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেরকম এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন আব্দুল জলিল। তিনি ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ এর নির্বাচনে বিপুল পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। এই সময় দল গোছানোর জন্য কাউন্সিলে দলের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। আব্দুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক করা ছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো তরুণ উদীয়মান জনপ্রিয় নেতাদেরকে এনেছিলেন। আর এই কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি হয়েছিলো সেটা অনেকগুলো জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলো। কিন্তু ২০০৭ সালে ১/১১ এর সময় আব্দুল জলিল গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার একটি মুচলেকাও দিয়েছিলেন। অবশ্য আব্দুল জলিল প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন ৩০ এপ্রিল সরকারের পতন হবে বলে রাজনীতির ট্রাম কার্ড ঘোষণা দিয়ে। সেই ট্রাম কার্ড কি এখনও জাতি জানেনি। ১/১১ এর আগে ২০০৬ সালে বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার সংসদ ভবনে একাধিক বৈঠকে মিলিত হন এবং এই বৈঠকগুলো অর্থহীন এক তামাশায় পরিণত হয়েছিলো।
১/১১ এ তিনি গ্রেফতার হওয়ার প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। এরপর কারাগার থেকে বেরিয়ে আব্দুল জলিল আর তার পদ ফিরে পাননি। এরপর কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে।
এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে উত্তেজনা চলছে বিশেষ করে নোয়াখালীর রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আলোচনা হচ্ছে। আর এই ইস্যুতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রত্যেকের কাছে সমালোচিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ করে দুটি কারণে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। প্রথমত, নোয়াখালী হচ্ছে তার নিজের জেলা। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, নিজের এলাকাকে যদি সামলাতে না পারেন তাহলে তিনি সারাদেশের সংগঠন সামলাবেন কীভাবে। দ্বিতীয়ত, যাকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে তিনি হলেন তার ভাই কাদের মির্জা। এখানেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে যে ছোট ভাইকে যিনি সামলাতে পারেন না তিনি অন্য নেতাকর্মীদের কীভাবে সামলাবেন। তাছাড়া গত দুই দিনে বসুরহাটে যে উত্তেজনা, মারামারি হয়েছে তাতে করে সারাদেশে আলোচনায় রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের ফলে নোয়াখালীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে পরিস্থিতি নিয়য়ন্ত্রণের জন্য। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্য প্রশ্ন উঠেছে যে ওবায়দুল কাদের কি আব্দুল জলিলের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন?
উৎসঃ বাংলা ইনসাইডার