ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হয়। কারা কর্র্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাতে পারেনি। কারা কর্র্তৃপক্ষ জানায়, মুশতাক আহমেদ সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
৫৩ বছর বয়সী মুশতাক নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তবে তারা থাকতেন ঢাকার লালমাটিয়ায়। বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন মুশতাক। কুমির নিয়ে মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। আর তাকে কেন্দ্র করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন তিনি। গত বছরের ৬ মে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা হয়। র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানসহ মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে মুশতাক, কিশোর, দিদার ও মিনহাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান দিদার ও মিনহাজ। তবে তদন্তের পর পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এই মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাকিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন করা হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়। মুশতাককে গ্রেপ্তারের পর পাঠানো হয়েছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে ওই বছরের ২৪ আগস্ট তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দ্রুত তাকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেলে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত বলে জানান।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে ওই বন্দিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে।
মুশতাকের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই মুশতাকের মা-বাবা হাসপাতালে যান। আজ (শুক্রবার) সকালে মুশতাক আহমেদের মৃতদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।