বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আল জাজিরায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে বিভিন্ন মহলে।
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-এই শিরোনামের কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
সরকার প্রধানকে ঘিরে শিরোনাম করার পাশাপাশি প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের সেনা প্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে।
ফলে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনটি আল জাজিরায় প্রচার হওয়ার পর সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
যদিও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রতিবেদনটির ব্যাপারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এরপরও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মানুষের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে দলটির নেতাদের অনেকে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সিনিয়র মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, অসত্য তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করার পর তা যেভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে পুরো ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলে তারা মনে করেন।
“আর্মির চিফ অব স্টাফ ও তার ভাই- তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু তার সাথে আওয়ামী লীগ, সরকার এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি একটি দলের প্রধান-তাকে এই ভাবে জড়ানো, এটা খুবই দুঃখজনক এবং কোন ক্রমেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। সেজন্য আমি বলি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে এবং অনেক তথ্যেরই তেমন কোন ভিত্তি নাই” বলেছেন ড: রাজ্জাক।
আওয়ামী লীগ নেতা ড: রাজ্জাক আরও জানিয়েছেন, তারা দলের ভেতরে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
“আমাদের দলে সর্বক্ষণই আলোচনা হচ্ছে। যেহেতু এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশে ১৭ কোটি মানুষ। সব মানুষ ঐভাবে সচেতন না এবং দলের সাথেও জড়িত না। দলের কর্মীরা ঠিক আছে। সাধারণ মানুষকেতো বিভ্রান্ত করছে। ভুল বোঝাচ্ছে। তবে আমরা ব্যাখ্যা দিলে আস্তে আস্তে সেটা কেটে যাবে,” তিনি বলেন।
আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা কর্মীরাই বিষয়টিতে দলের নেতৃত্ব থেকে একই বার্তা পেয়েছেন।
দলটির মধ্যম সারির এবং তৃণমূলেও নেতা কর্মীরা প্রতিবেদনটি প্রচারের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিসাবে বর্ণনা করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে দলটির একজন নেত্রী সামিমা হারুন বলেছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাদের বিরোধী শিবির থেকে মাঠ পর্যায়েও নানা বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
“কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ এটা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাধারণ জনগণ এ বিষয় নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছে না।”
তিনি উল্লেখ করেছেন, বিরোধীদের নানা বক্তব্যের জবাবে মাঠ পর্যায়ে সরকারের পক্ষে তার দলীয় বক্তব্য তুলে ধরছেন।
“বিষয়টাতে আমাদের নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা যেভাবে এগুচ্ছেন, সেখানে আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আস্থা আছে এবং আমরা এভাবেই এগুতে চাই। আমরা মনে করি, এটা যে মিথ্যা, সেটা প্রমাণ করাই আমাদের কাজ,” বলেন তিনি।
তবে পরিস্থিতিটা যে অস্বস্তিকর, সেটা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের অনেকে স্বীকার করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেছেন, তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা সরকার বা আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর নয় বলে তিনি মনে করেন।
“আওয়ামী লীগকে সারাজীবনই প্রতিপক্ষকে ফেস করেই চলতে হয়। আমরা সব সময়ই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকি। কিন্তু আমাদের খুব দু:খ হয়, যখনই বাংলাদেশ এগিয়ে যায়, তখনই বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন অপশক্তি কাজ করে।”
তিনি আরও বলেছেন, “এটা নতুন নয়। এর সাথে আমরা পরিচিত। এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তো এই সামান্য বিষয়ে কথা বললো একটা ভুল তথ্য দিয়ে, সেটার জন্য আমরা বিব্রত হয়ে যাব-সেটা ভাবি না কিন্তু” তিনি মন্তব্য করেন।
তবে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বিষয়টাতে সরকার এবং আওয়ামী লীগ অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
“সরকার বা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন সমালোচনামূলক প্রতিবেদন হলেই এটা নিয়ে হৈ চৈ হয়, তখন সরকার বিরোধীরা এটার সুযোগ নিয়ে নানান প্রচার চালায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়, আমরা এটা প্রত্যাখান করলাম। সুতরাং এটা নতুন কিছু নয়।”
“যেহেতু এবার বিষয়টি সেনাপ্রধানকে কেন্দ্র করেই মূলত, সেজন্য এটা একটু অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে শুরু থেকেই আমার মনে হয়েছে, সরকার এবং আওয়ামী লীগ এনিয়ে অতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
”আওয়ামী লীগ নেতারা বিব্রত হওয়ার চাইতেও বেশি কিছু হয়েছে বলে মনে হয়। এটা উপেক্ষা করলে ভাল হতো,” মন্তব্য করেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, আল জাজিরার এই প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রচারের পেছনে কেউ আছে কিনা-তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কেউ চিহ্নিত হলে তার রাজনৈতিক পরিচয়ও উন্মোচন করার চেষ্টা তাদের থাকবে।
সূত্র: বিবিসি