আল জাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্টের প্রথম পর্বটি ব্যাপক প্রচার পেয়েছে, বলা যায় এটি সাড়া ফেলেছে । অতি অল্প সময়ের মাঝেই মিলিয়নের উপর মানুষ এটি দেখেছেন এবং এখনও দেখছেন এটি ভাইরাল হয়েছে। যারা দেখেছেন অবশ্যই তাদের একটি নিজস্ব মতামত ত’ এর উপর হয়েছেই , উপরন্ত তারা এখনও দেখতে পাচ্ছেন পক্ষে বিপক্ষে আরো অনেক বক্তব্য , মন্তব্যঃ। মতামত চলছে এবং আরো যে চলবে তা বলা যায় ।
এই অনুসন্ধানী রিপোর্টটি প্রকাশের পর – সেনা সদর এবং সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ শেষে রিপোর্টটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং এর প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে! তিনটি বিষয় দেখবার আছে । ( কঃ) : আল জাজিরা রিপোর্ট ( খঃ ) : প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদের মূল বক্তব্যঃ। ( গ ) : পক্ষ , বিপক্ষের আলোচনা।
এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করেই বিষয়টি দেখবার এবং বলবার চেষ্টা করব।
( কঃ) : আল জাজিরা রিপোর্ট : আল জাজিরা সব সময় তাদের রিপোর্টকে বস্তুনিষ্ঠ , সত্যনিষ্ঠ ,অনুসন্ধানী, প্রভাব মুক্ত , সময় ও উপযুক্ত অর্থ ব্যয় করে তৈরী বলেই দাবি করে থাকে। এই ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসৃত হয়েছে এটাই তাদের দাবি।
( খঃ ) : প্রতিবাদ। – বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স যে প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছেন তা এই।
Press ReleaseDhaka, 01 February 2021:The Government of Bangladesh has learned of a false and defamatory report titled “All the Prime Minister’s Men” by Al Jazeera news channel. The report is nothing more than a misleading series of innuendos and insinuations in what is apparently a politically motivated “smear campaign” by notorious individuals associated with the Jamaat-i-Islami extremist group, which has been opposing the progressive and secular principles of the People’s Republic of Bangladesh since its very birth as an independent nation in 1971.The fact that the report’s historical account fails to even mention the horrific genocide in 1971 in which Jamaat perpetrators killed millions of Bengali civilians and raped more than two hundred thousand Bengali women, is but one reflection of the political bias in Al Jazeera’s coverage and that of its principal commentator, Mr. David Bergman, convicted by International Crimes Tribunal Bangladesh for challenging the official death toll of 1971 Liberation War.It is noted that the main “source” of Al Jazeera’s allegations is an alleged international criminal claimed to be a “psychopath” by Al-Jazeera itself. There is not a shred of evidence linking the Prime Minister and other State Institutions of Bangladesh to this particular individual, and it is highly irresponsible for an international news channel to draw conclusions on the basis of the words of a mentally unstable person.It is also not surprising that the report aligns with the string of anti-Bangladesh propaganda habitually orchestrated by a few convicted absconding criminals and discredited individuals patronized by Jamaat-i-Islami Bangladesh, which on certain occasions have conspired with international extremist groups and news media. specially the Al Jazeera ..The Bangladesh Government rejects this desperate “smear campaign” instigated by extremists and their allies, working from London and elsewhere, and regrets that Al Jazeera has allowed itself to become an instrument for their malicious political designs aimed at destabilizing the secular democratic Government of Bangladesh with a proven track record of extraordinary socio-economic development and progress.Md. Tohidul IslamDeputy Principal Information OfficerMinistry of Foreign Affairs, DhakaMob-01718543625 *
* ( গ ) : মতামত এবং পক্ষ , বিপক্ষের আলোচনা।
বাংলাদেশে আলজাজিরার বিপক্ষে মিডিয়াতে দু’ একটি লিখা এলেও আলজাজিরার এই অনুসন্ধানী রিপোটের পক্ষে কোন লিখা দিতে কেউ সাহস করেনি।
এপর্যন্ত নজরে পড়েনি। প্রতিবেদনটি যদি কখন চরম সত্যি হয়ে দেখা দেয় – তখন ত’ প্রশ্ন উঠবেই দেশে এত পত্র পত্রিকা থেকেও কেন তারা বিষয়টি তুলে আনতে পারল না ?
অথবা প্রকাশের পরও এর পক্ষে দাঁড়াতে পারল না ? লিখতে পারলনা ?
ক্রিটিক চোখে বিষয়টি বুঝতে এখানে ফেস বুক থেকে পাওয়া ডঃ আসিফ নজরুল এবং পিনাকী ভট্টাচার্য এর মন্তব্য তুলে ধরছি।
” ভূয়া ফেসবুক আইডি থেকে একটা পোষ্ট করা হয়েছিল আমার নামে। এক মন্ত্রী সেটা নিয়ে টিভি-তে আমার নাম ধরে হুমকি দিলেন। তার পরদিন তার ভাগনেকে দিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টে মিথ্যে মামলা করালেন।শিক্ষক সমিতির তখনকার সভাপতিকে জানালাম। একটা বিবৃতি দিতে বললাম। তাকে আগ্রহী মনে হলো না। আমাকে বললেন লিখিতভাবে জানান, দেখি কি করা যায়। আমি আর দেইনি।আজকে দেখলাম আল জাজিরার বিরুদ্ধে তারা স্বতপ্রণোদিতভাবে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিটা কিন্ত আদালতে দোষী সাব্যস্ত একজন খুনীর পক্ষেও গেছে প্রকারান্তরে।ধন্য আমার শিক্ষক জীবন!” – আসিফ নজরুল ।
*” সেনাপ্রধানের ভাইদের কাজকর্ম এবং তাদের সাথে উনার যোগাযোগ নিয়ে আল-জাজিরার সচিত্র প্রতিবেদন বহু মানুষ দেখেছে, দেখছে। এর উত্তরে সরকারীভাবে দুটো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এসবে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে পরিবেশিত তথ্যের উত্তর তেমনভাবে নাই। আছে প্রতিবেদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। বলা হচ্ছে আল-জাজিরার প্রতিবেদন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক।এটি যে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক তা আমরাও বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু এজন্য প্রতিবেদনে পরিবেশিত বিষয়গুলোর উপযুক্ত উত্তর দেশবাসীকে জানানো দরকার। যেমন: প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে সেনাপ্রধানের একজন ভাই খুনের দায়ে ফেরারী আসামী হয়ে আছেন। এ অবস্থায় তিনি সরকারের কিছু কর্ম্কর্তার সহায়তায় জালিয়াতি করে বাংলাদেশ থেকে ভূয়া পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করেছেন, নিজের নাম পর্য্ন্ত বদল করেছেন। আল-জাজিরার এসব তথ্য কি মিথ্যে? প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ফেরার আসামী হয়েও সেনাপ্রধানের ভাই বাংলাদেশে এসে এসএসএফ, পুলিশ, গোয়েন্দা এবং প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে সেনাপ্রধানের সন্তানের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। এই তথ্য কি মিথ্যে? এর প্রমাণ হিসেবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে দেখানো ছবি ও ভিডিও গুলো কি কারসাজি করে করা? সেনাপ্রধানের কোন ভাই যদি সত্যি সত্যি আইনের উর্ধ্বে থাকেন, তাহলে এর পেছনে যুক্তিগুলো কি কি? এরকম এবং এরচেয়েও সেনসেটিভ কিছু বিষয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে। সরকারের তরফ থেকে তাই প্রতিবেদনটির জবাব থাকলে তা আরো স্পস্ট করে বলা উচিত। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলকে আরো ভালো করে বলা উচিত।কিশোরদের কার্টুন না, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বাংলাদেশে মাফিয়াতন্ত্র চলছে আল জাজিরার এমন প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন মিথ্যে হলে, তা প্রমান করার সব ব্যবস্থাও তাই সরকারের নেয়া উচিত। আল জাজিরায় প্রতিবাদলিপি পাঠানো উচিত। তাদেরকে ক্ষমা প্রার্থ্না এবং প্রতিবেদন প্রত্যাহার করতে বলা উচিত। এটি করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপুরনের মামলা করা উচিত। সেই সৎসাহসের প্রত্যাশায় থাকলাম।” – আসিফ নজরুল ।
পিনাকী ভট্টাচার্য : ” বাংলাদেশ রাষ্ট্র টিকে যাবে কারণ এখনো অদম্য কিছু মানুষ আছে, মেরুদণ্ড ওয়ালা কিছু মানুষ আছে, বিবেক ওয়ালা কিছু মানুষ আছে। সংখ্যায় অল্প হলেও আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ঠিক একদিন তাদের সেই শক্তির উপরে ভর করে ফিনিক্স পাখির মতো ফ্যাসিবাদের ভষ্ম থেকে উঠে দাঁড়াবে।সেই বিজয়ের দিনে শুধু মনে রেখেন, হাজার হাজার মানুষ এই দিনকে দেখার জন্যই তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়েছিলো। অতি ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে পাহাড়ের মতো বিশাল শত্রুর সামনে অসমসাহস নিয়ে বোকার মতো মোকাবেলা করতে গিয়েছিলো। নিভু নিভু করে প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে রেখেছিলো, এই আশায় সেই স্ফুলিঙ্গ থেকে একদিন দাবানল হবে।বাংলাদেশের মানুষের আর তাদের প্রাণশক্তির জয় হোক।”
অভিযোগ গুরুতর , ভয়াবহ। আরো কিছু পর্ব আসছে। শোনা যাচ্ছে বিষয়টি জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেল অফিসের নজরেও এসেছে।
এখন কোথাকার পানি আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা’ দেখতে আরো কিছু দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।
মাহবুবুর রব চৌধুরী – টরন্টো।