চলমান সংসদের এক ডজন সংসদ সদস্য দুর্নীতি, অর্থপাচার, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। সংসদের এক ডজন সংসদ সদস্য দুর্নীতি, সরকারি-বেসরকারি জমি দখল, বিদেশে অর্থপাচার, মানবপাচারে জড়িত। সরকারি দলের সর্বস্তরের নেতারা গ্রাম-ইউনিয়ন থেকে রাজধানী পর্যন্ত সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। তারা বিচারহীন দেশে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।’
আজ রোববার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় সিরাজ এসব কথা বলেন। এ সময় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি সরকারকে ‘গণতান্ত্রিক চর্চা’ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।
সিরাজ বক্তব্য রাখার সময় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তবে, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া সবাইকে শান্ত হতে অনুরোধ করে বলেন, ‘তাকে বলতে দেন। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হলে উত্তর দেবেন।’
সিরাজ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা-ধর্ষণ নিয়ে কোনো কথা বলেননি এবং দিক নির্দেশনা দেননি বলে আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে পারছি না।’
স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাতের সমালোচনা করে সিরাজ বলেন, ‘টাকা পাচারকারীরা অদৃশ্য ও অধরা থেকে গেছে। এদের পৃষ্ঠপোষক কারা? এরা সবাই সরকারের মদদপুষ্ট, সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বেসিক ব্যাংকের আব্দুল হাই বাচ্চু থেকে আজকের প্রশান্ত কুমার হালদার পর্যন্ত সরকারের ঘনিষ্ঠ।’
সরকারের ঘনিষ্ঠ মানুষদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘এই সংসদের সদস্য পাপুল। যাকে ঘুষের দায়ে কুয়েত সরকারের বিচারবিভাগ জেল দিয়ছে। পাপুল শুধু সংসদ নয় এই দেশকে কলঙ্কিত করেছে। অর্থপাচার মামলায় রায় আরও কঠিন হবে।’
সিরাজ মন্তব্য করেন, ভোটের মালিক পুলিশ, প্রশাসন আর নির্বাচন কমিশন। ভোট মানে উইং সার্টিফিকেট।
সংসদে তিনি বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা, জনগণের অর্থ ব্যয় করে প্রহসনের নির্বাচন করে কী লাভ? একনায়কতন্ত্র আর গণতন্ত্র দুটো পরস্পর বিরোধী। বর্তমান সরকারকে যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে। গণতন্ত্রের মিথ্যা বুলি বাদ দিয়ে অঘোষিত বাকশাল পন্থা পরিহার করে সরাসরি বাকশাল সরকার গঠন হোক। নতুবা দেশের মালিক জনগণকে দেশটি ফিরিয়ে দিন। ফিরিয়ে দিন মানুষের অধিকার, মানুষের স্বাধীনতা।’
‘রাষ্ট্রপতি শুধু পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ নন তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফলতার কথা। আমিও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। গণতন্ত্র আর সুশাসন বাদ দিয়ে সন্ত্রাস–জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। জনগণ রাষ্ট্রপতির মুখে সত্য ভাষণ শুনতে চায়। তার মুখে সত্যের অপলাপ শুনতে চায় না।’
সিরাজের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা।
সিরাজ বলেন, ‘আমার সহকর্মীরা অযথা হইচই করছেন। জনগণ আমাদের কথা শুনতে চায়। সংখ্যায় কম হলেও শুনতে চায়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা রেখে, স্পিকার আপনাকে শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, এই প্রাকটিস আগে দেখিনি। আমি ৯৬তে এমপি ছিলাম। তখনও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। তখন এমন ছিল না। এইবার এসে কী দেখলাম। শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই এটা ব্যাড প্রাকটিস। আওয়ামী লীগের পলিটিকাল ক্যারেক্টার চেঞ্জ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আবার ফিরে যাক মানুষের কাছে। ফিরে যাক ভালোবাসার কাছে। ভয়ভীতির চর্চা বাদ দিয়ে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করুক। আমার নেতা প্রধানমন্ত্রী আছেন সামনে। আসুন আমরা ফিরে যাই জনগণের কাছে।’
সিরাজের বক্তব্য শেষে ডেপুটি স্পিকার বলেন, সংসদ সদস্য সিরাজ রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে ২-১টি কথা বলেছেন। সেটি সঠিক নয়। আমি চিন্তা করে দেখবো এক্সপাঞ্জ করা যায় কিনা।