একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম বন্ধের দাবি তোলা জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদকে ‘মূর্খ’ বলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
রোববার সংসদে জাতীয় পার্টির নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজী ফিরোজ রশীদ যে নিতান্ত একজন মূর্খ মানুষ, এটা তার বক্তব্যে প্রমাণ করেছে।”
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফিরোজ রশীদ সংসদে বক্তব্যে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ, ফাইল ছবিকাজী ফিরোজ রশীদ, ফাইল ছবিতিনি বলেছিলেন, “আমাদের কিছু সংগঠন আছে। একটি সংগঠন আছে নাস্তিক নির্মূল কমিটি। আরেকটি সংগঠন হচ্ছে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। এই নির্মূল করার ক্ষমতা এদের কে দিয়েছে? আমি জানতে চাই। তুমি কে নির্মূল করার?
“আমার দেশে কোর্ট-কাচারি আছে না? অনেক বিচার করেছে এই সরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হচ্ছে, রাজকারদের বিচার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তুমি কেন?… আমি মনে করি যে এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার।”
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বন্ধের দাবি তুললেন জাপার ফিরোজ
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের আমির ঘোষণার পর তার প্রতিবাদ থেকে ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তার মধ্য দিয়ে জোরদার হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলন।
ওই আন্দোলনে আওয়ামী লীগসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তার ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে, সেই বিচারে অনেকেরই সাজা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগের গণজাগরণেও প্রেরণায় ছিলেন
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম; তাতেও সক্রিয় ছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, যাকে আহ্বায়ক করে গড়ে উঠেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিশহীদ জননী জাহানারা ইমাম, যাকে আহ্বায়ক করে গড়ে উঠেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
শাহরিয়ার কবির বলেন, “নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটাকে তৃণমূলে পৌঁছে দিয়েছিল। একাত্তরের গণহত্যার দেশের বাইরে ভুলেই গিয়েছিল। সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়েছে একাত্তরের গণহত্যার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, বিচারের পথ তৈরি করা। এটা যদি উনি (ফিরোজ রশীদ) না জানেন, এটা তো আমরা ওনার অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই বলব না। মূর্খতা ছাড়া কিছুই বলব না।”
এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ রশীদ সংসদে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির প্রসঙ্গে আরও বলেছিলেন, “তোমরা নিজেরা পুলিশ প্রোটেকশনে থেকে এই ধান্দাবাজি করছ, এইটা জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি মনে করি যে এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার।”
শাহরিয়ার কবির বলেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি যখন তারা দেশের তৃণমূল অবধি পৌঁছে দিতে পেরেছেন, তখন সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশীদ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে তুষ্ট করতেই এই দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে দেখতে গেলে এটার উপর আক্রোশ তো থাকবেই। আমরা যখন এরশাদের সমালোচনা করি, তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বৃক্ষ রোপণ করেছিলেন, সেটার তো পরিণতি আমরা এখন দেখছি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংবিধানের এই সংশোধনী এই সংযোজনের দ্বারা তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছেন। এর চেয়ে ক্রিমিনাল অফেন্স স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ করেননি।
“এরশাদ সাহেব অবৈধ ক্ষমতা দখলকে, অবৈধ সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য মোল্লাদের সাথে আপস করেছিলেন এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। এ রাজনীতি থেকে তিনি এটা করতে পারেন, তার তো বিদ্বেষ থাকারই কথা।”
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরএকাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরবিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ- দুজনই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ‘হত্যা’ করেছেন বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।
জিয়ার মতো এরশাদের সরকারেও যুদ্ধাপরাধীদের স্থান দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কি তারা সরকার গঠন করেননি? চিহ্নিত গণহত্যাকারীরা তো এরশাদের কারণেই মন্ত্রী হয়েছেন। কাজী ফিরোজ রশীদরা তো তাদের সঙ্গেই ঘর করছেন।”
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসায় তাদের রাজনৈতিক চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “এখন তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘর করছে আবার বিরোধী দলে, এটা তো রাজনৈতিক চরিত্রহীনতার চূড়ান্ত।
“আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে পার্লামেন্টে গিয়ে তারা আবার বিরোধী দল সেজেছে। পার্লামেন্টে গিয়ে এই আবোলতাবোল কথা তারা বলছে। জাতীয় পার্টির দেওলিয়াপনা কোন পর্যায়ে গেছে, সেটা সারা দেশের মানুষ জানে। আজকে আওয়ামী লীগ সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে জাতীয় পার্টির একজন সদস্যও পার্লামেন্টে আসতে পারবে?”
ফিরোজ রশীদের কথার জবাব বাংলাদেশের জনগণ দেবে বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।