‘দুর্নীতির বলয়’ ভাঙতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ২২ জনকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করেছিল সরকার। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফারুক হাসান শাস্তির বদলে পেয়েছেন পুরস্কার। তাকে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। ওই চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে চাকরি করার সুবাদে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে। এদের কারণে অধিদপ্তরের সুশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছিল, ‘দুর্নীতির বলয়’ তৈরি করা এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুদকের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ কর্মকর্তাকে বদলি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বদলির আদেশ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারুক হাসানকে প্রথমে রাঙ্গামাটিতে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যোগ দেননি। ২০১৯ সালের ১২ মার্চের ওই বদলি আদেশ প্রভাব খাটিয়ে পরিবর্তন করে বগুড়া সিভিল সার্জন এর কার্যালয়ে নেন। এরপর বগুড়া থেকে গত বছরের ১৬ মার্চ টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন ফারুক হাসান। সেখানে যোগদানের ৯ মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার তাকে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুর্নীতির অভিযোগে বদলি হওয়া কর্মকর্তাকে আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রধান কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্বে আনার মাধ্যমে অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিজের অপকর্মে সহায়তার পুরস্কার দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তার আশীর্বাদপুষ্ট ফারুক হাসান। ওই কর্মকর্তা এক সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার আগ্রহের কারণে ফারুক হাসানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তার অধীনেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজকে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয়ে পদায়নের ফলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। দুদক স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ যে ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল তাতে ফারুক হাসানের নাম ছিল দ্বিতীয় নম্বরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফারুক হাসানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় তাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তির পরিবর্তে পুরস্কৃত করেছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুদক যে অভিযোগে ফারুক হোসেনকে অভিযুক্ত করেছে তা প্রমাণিত হয়নি বলেই তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে পরিচালক বিস্তারিত বলতে পারবেন।’