দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে কোনোটিতে সংঘর্ষ, আবার কোনোটিতে একরকম শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সিরাজগঞ্জে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর কথা কাটাকাটির জেরে বিজয়ী কাউন্সিলরকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ।
গাইবান্ধায় ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এর আগে ভোটগ্রহণ চলাকালে অন্তত ৭টি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক। শনিবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে- এ নির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও প্রার্থীর এজেন্টদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বের করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি-উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য- দু-একটা নগণ্য ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের চেয়ে তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় ধাপে সহিংস ঘটনা বেশি ঘটেছে। এ ধাপে অন্তত ৯টি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ, প্রার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
ভোটগ্রহণ চলাকালেই নির্বাচনে অনিয়ম, এজেন্টদের বের করে দেয়া, জাল ভোট, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে আটটি পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেন।
তারা এসব পৌরসভায় নতুন করে নির্বাচন দাবি করেন। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ ও ফরিদপুরের বোয়ালমারীর দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের ফলও স্থগিত রয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে ডালিম প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত কাউন্সিলর প্রার্থী তরিকুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয়।
এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত তরিকুল ইসলামের সমর্থকদের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ উটপাখি প্রতীকের প্রার্থী সাহাদৎ হোসেন বুদ্দিন ও তার সমর্থকরা তরিকুলকে হত্যা করেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে শহীদগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তরিকুল নতুন ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
রাত পৌনে ১০টায় সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ওই এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ জানান, তরিকুলের লাশ মর্গে রয়েছে। তার পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি কোন দলের সমর্থক ছিলেন তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম জানান, সম্প্রতি পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তার একটি প্রচারসভায় আনুষ্ঠানিকভাকে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন নিহত তরিকুল।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, তরিকুল আগে বিএনপি করতেন। শুনেছি সম্প্রতি সে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬০টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলে। এর মধ্যে ৩১টিতে কাগজের ব্যালটে ও ২৯টিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
তীব্র শীতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে সকালে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে।
ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। অবার কয়েকটি পৌরসভায় সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় উৎসবের পরিবর্তে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
গত কয়েক দিনে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনায় অনেক পৌরসভায় ভোটগ্রহণ নিয়ে আগ থেকেই শঙ্কা বিরাজ করছিল।
সাভার পৌরসভার তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সেখান থেকে নির্বাচন ভবনে ফিরে তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েছে।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন না হলে এ সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। অপরদিকে ভোটগ্রহণ শেষে বিকাল ৫টার পরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, দু-একটি ঘটনা যা ঘটেছে তা একেবারেই নগণ্য বলা যেতে পারে।
নির্বাচনে সহিংস ঘটনা প্রসঙ্গে তিন বলেন, কিছু কিছু এলাকায় দুষ্কৃতকারী কিছু সুযোগসন্ধানী যারা সব সময় থাকে, তারা নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষুণ্ন ও বিঘ্ন করার চেষ্টা করেছিল।
নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তাদের নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, দু-একটি কেন্দ্রে সহিংস ঘটনার তথ্য পেয়েছি।
এটি বড় কিছু নয়। আমাদের দেশে সহিংসতা ছাড়া কোনো নির্বাচন হয় না। সব নির্বাচনেই কমবেশি সহিংসতা হয়।
প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভায় ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে।
ওই কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই হওয়ায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভায় গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরসভায় কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভায় একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় প্রায় ১ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
গাইবান্ধা সদর পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ভোটগ্রহণ চলাকালে অন্তত সাতটি পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। কয়েকটি জায়গায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররাও ভোট বর্জন করেন।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেহেরপুরের গাংনী, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ ও বাগমারা, ফেনীর দাগনভূঞা, পাবনার ঈশ্বরদী, বাগেরহাটের মোংলাপোর্ট, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা।
অপরদিকে অনেক পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, বান্দরবানের লামা, সুনামগঞ্জের ছাতক, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সান্তাহার ও শেরপুর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া।
ইসি সচিব যা বললেন : পৌরসভা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো ছিল বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। গণমাধ্যমের খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।
তিনি জানান, ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার একটি কেন্দ্রে দুষ্কৃতকারীরা ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ব্যালট পেপার নিয়ে যেতে পারেনি।
তবে ব্যালট বাক্স যেহেতু ভেঙে গেছে প্রিসাইডিং অফিসার ওই নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন। কিশোরগঞ্জের একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সেই কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া ৬০টি পৌরসভার সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সার্বিক হিসাবে ৭০-৭৫ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আর নিরপেক্ষ নির্বাচন ভিন্ন বিষয়।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। নির্বাচনে যদি কেউ না আসে তাহলে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করণীয় নেই। নির্বাচনে আসা না আসার বিষয় রাজনৈতিক দলের একটি কৌশল হতে পারে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা পৌরসভার পূর্ব কোমরনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট গণনা নিয়ে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।
এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্তত ৫০ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ভয়ে আশপাশের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে ভোট শেষে সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের হামলায় লিজু ও জজ নামে দুই যুবলীগ কর্মী আহত হয়েছেন।
তাদের গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকালে হওয়া বাগ্বিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে বিকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জ : বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ৯ জন আহত হয়েছেন।
মোহনগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সকাল ৯টায় প্রতিপক্ষের হামলায় ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক আহত হন।
এতে তার হাত ভেঙে যায়। একই কেন্দ্রের বাইরে দুপুর ২টায় কাউন্সিলর প্রার্থী আল্লাদ মিয়ার সঙ্গে অপর কাউন্সিলরদের বিতর্কের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় দৌলতপুরের মেহেদী হাসান মারাজ, টিটু, রাব্বী, ইমরান, মতি ও গরুহাট্টার স্বপন আহত হন। আহতদের মধ্যে স্বপনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ঘটনার পরপরই দুপুর আড়াইটায় আদর্শ হাইস্কুল কেন্দ্রের বাইরে প্রতিপক্ষের হামলায় কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল আলম আহত হন।
কিশোরগঞ্জ : সহিংসতা-সংঘর্ষ ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এটি হলো শহরের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ কেন্দ্র।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
উভয়পক্ষের অন্তত ৫-৭ নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুরুল মিলাদ।
ফেনী ও দাগনভূঞা : দাগনভূঞা পৌরসভা নির্বাচনে গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরপর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় শাহীন নামে এক ভোটার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আরেক ভোটার মাঈন উদ্দিন ও এক আনসার সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাজী সাইফুর রহমান স্বপন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চারজন আহত হয়েছেন। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে মহসিন (২১) নামে এক যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ডিভাইসে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ভোট দিতে পারেনি অনেকে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ভোটাররা।
ঈশ্বরদী (পাবনা) : ঈশ্বরদী পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নয়ন ভোট বর্জন করেছেন। দুপুর ১টায় শহরের পূর্বটেংরী নিজ বাসভবন থেকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
সাঁথিয়া (পাবনা) : সাঁথিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ভ্রাম্যমাণ আদালত রিপন হোসেন নামে এক যুবককে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করায় তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
গুরুদাসপুর (নাটোর) : দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : কুমারখালীর ৮নং নির্বাচনী কেন্দ্রের কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন, তারা ভোট দিতে পারেননি। স্মার্টকার্ড দেখালেও ইভিএম বুথ থেকে খারাপ আচরণ করা হয়। তাদের সিরিয়ালের স্লিপ আনতে বলা হয়।
মোংলা (বাগেরহাট) : ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, কেন্দ্র দখল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি মেয়র প্রার্থী জুলফিকার আলীসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত ১২ কাউন্সিলর প্রার্থী একযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
শেরপুর (বগুড়া) : জাল ভোট দেওয়ার সময় ভুয়া ভোটার আবু সাঈদকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শেরপুর ডিজে হাইস্কুলের ভোটকেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বান্দরবান : লামা পৌরসভা নির্বাচনে জাল ভোট ও বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকালে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলাতে শুরু করে।
আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে আব্দুর রহিম ও মোজাফফর নামে ২ জনকে আড়াই হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। একই সময় একজনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
হবিগঞ্জ : নবীগঞ্জে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করায় ৪ জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারা হলেন নোয়াপাড়া গ্রামের আক্তার হোসেন, লালন আহমেদ, লালন আহমেদ (২) ও শিবপাশা গ্রামের রিংকু দেব। তাদের প্রত্যেককে ৫শ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মেহেরপুর : ভোটকেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগে গাংনীতে পাঁচ মেয়র প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
তারা হলেন- বিএনপির আসাদুজ্জামান বাবলু (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু হুরাইরা (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র আশরাফুল ইসলাম (জগ) ও আনারুল ইসলাম (বড়শি)।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ত্রিমুখী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এজন্য প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। তবে অন্য সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : ধনবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের ফিঙ্গার রেখে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌকা সমর্থিতদের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামান বকুল ও বিএনপি প্রার্থী এসএমএ ছোবহান (ধানের শীষ) এ অভিযোগ তোলেন। ধনবাড়ী সরকারি ডিগ্রি কলেজ ৮নং কেন্দ্রে সকাল দশটার পর থেকেই এ ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী : বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর এলাকায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন তিনি।
কুষ্টিয়া : মিরপুর পৌরসভার পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে বেলা ২টার দিকে মেয়র প্রার্থী আরিফুল ইসলামের ওপর হামলা করে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট, ভোট কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করেন বিএনপির প্রার্থী রহমত আলী রব্বান।
এছাড়া বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সান্তাহার পৌরসভা, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট ও বাঘার আড়ানী, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর এবং বান্দরবানের লামায় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের খবর পাওয়া গেছে।
উৎসঃ Jugantor