সিলেট আ.লীগের দুই কমিটিতেই বিতর্কিতরা

সংগ্রাম সিংহ, সিলেট

নানা অভিযোগ উঠার পরও সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন। দলের সংশ্লিষ্টরা তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন কেন্দ্রে পাঠালেও কাজ হয়নি। শুধু তাই নয়, নতুন দুটি কমিটিতে প্রায় এক ডজন চিহ্নিত নেতার ঠাঁই হয়েছে যাদের অপকর্মের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা ছবি, তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। তারপরও ঘুরেফিরে অভিযুক্তরাই আগের তুলনায় শক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন নতুন দুই কমিটিতে। এতে সচেতন মহল ছাড়াও খোদ দলের অভ্যন্তরে নানা গুঞ্জন চলছে।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মোস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে রয়েছে পরিবেশ ধ্বংসের বিস্তর অভিযোগ। ছিলেন লোভাছড়া পাথর কোয়ারির ইজারাদার। ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন ব্যবহার করেন সীমান্তবর্তী লোভা নদী ও নদী তীরবর্তী বিস্তৃীর্ণ এলাকার পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে পলাশের হাতে। অথচ তাকেই এবার বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সিলেটের অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত এমসি কলেজের পার্শ্ববর্তী টিলাগড়। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ক্যাডার-কিলারদের অভয়ারণ্য এ টিলাগড়ের নিয়ন্ত্রক দুই বলয় নেতা। তারা হচ্ছেন কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার। একের পর এক খুন, এমসি কলেজ ছাত্রবাস পোড়ানো ও সম্প্রতি গৃহবধূকে গণ ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে ব্যাপক আলোচিত আজাদ ও রণজিৎ। টিলাগড়ে অরাজকতার অবসানের দাবিতে সিলেটে নাগরিক মোর্চার ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ আন্দোলনও অব্যাহত রয়েছে। তারপরও এ দুই বিতর্কিত নেতাকে আরও বড় পদ দেয়া হয়েছে সংগঠনে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের আগের কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদকে এবার মহানগর কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আগের জেলা কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারকে এবার করা হয়েছে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। শুধু তারাই নয়, সম্প্রতি সিলেটের হরিপুরে বন্যপাখির মাংসে ভূরিভোজ করে চরম বিতর্কিত হওয়া সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ কাউন্সিলরই আছেন নতুন কমিটিতে। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ভূরিভোজ করা হোটেলে অভিযান, জরিমানাও হয়েছিল। সেই ঘটনার পরও কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াসকে মহানগর কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং তৌফিক বক্স লিপন ও রকিবুল ইসলাম ঝলককে একই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এতেই শেষ নয় জেলা ও মহানগর দুটি কমিটিতে এ ধরনের আরও প্রায় এক ডজন চিহ্নিত নেতা রয়েছেন যাদের অপকর্মের ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা ছবিসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারপরও সেসব নেতারাও স্থান করে নিয়েছেন নতুন দুই কমিটিতে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, পরিবেশ ধ্বংসকারীকে পরিবেশ বিষয়ক দায়িত্ব দেয়া অপ্রত্যাশিত। বিতর্কিত ও নানা অপকর্মে জড়িতদের সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখলে সেই সংগঠনেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তবে কিছু কিছু পদে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন এবার হয়েছে।

বর্ষীয়ান আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ অনেক গণতান্ত্রিক আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। অথচ এখন লুটেরা, তস্করের দলে পরিণত হয়েছে। এখন এ দলের কাছ থেকে পাওয়ার মতো তেমন কিছু নেই।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা : পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর শনিবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এসময় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহাসহ নতুন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎসঃযুগান্তর

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ