করোনাকালে ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে সমালোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলমকে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা (পুরস্কার) দেওয়ায় শহরজুরে মুখরোচক আলোচনা চলছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। সময় টিভি
এদিকে এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসায় রোববার সন্ধ্যায় মো. শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি কোনো প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হয়েছে তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যার জন্য জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুল হাসান তাপসকে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
রোববার রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ চিঠি পাঠানো হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।
জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ইতোপূর্বে মো. শাহ আলম ওএমএস ডিলারশিপ নিয়ে বিতর্কিত হওয়ায় তাকে সম্মাননা দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কীভাবে মো. শাহ আলমকে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এ বিষয়টি নিম্ন স্বাক্ষরকারী জ্ঞাত নন। এ অবস্থায় মো. শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হয়েছে তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হলো।
সমাজসেবা দিবস ২০২১ উপলক্ষে গত শনিবার জেলা সার্কিট হাউসে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান তার হাতে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের এ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। এরপর শাহ আলমের সম্মাননা নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মো. শাহ আলম নিজেও ফেসবুকে পোস্ট করেন স্মারক (পুরস্কার) পাওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস বলেন, তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষিত একজন সমাজকর্মী। পাশাপাশি তিনি ১৯৮৮ সালে সরকারি কলেজের এজিএস থাকা অবস্থায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে প্রশংসা কুড়ান। ১৯৯৪ সালে বস্তি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাপক কাজ করেন। ২০০১ সালের সফল সমাজকর্মী হিসেবে তিনি সম্মাননা পান। ২০১১ সাল থেকে তিনি অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া আমাদের শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। এসব বিষয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যাখা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, আমি এই সম্মাননা পেতে সমাজসেবা কার্যালয়ে কোনো ধর্ণা দেইনি। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সমাজকর্মী। তারাই আমাকে এ সম্মাননার জন্য বাছাই করেছে। একটি দুষ্ট চক্র রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তাদের অপঃপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মো. শাহ আলম করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের দেওয়া বিশেষ ওএমএস চাল নিয়ে আলোচিত হন। জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির পরিচালক পদে থাকা এ নেতা ভিক্ষুক, ভবঘুরে শ্রেণির লোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী, কন্যাসহ ১৩ স্বজনের নাম তালিকাভুক্ত করেন। একজন ওএমএস ডিলার হয়ে এ অনিয়মে জড়িত হওয়ায় গত বছরের মে মাসে তার ডিলারশিপ বাতিল করে জেলা ওএমএস কমিটি।
টিসিবির ডিলার হিসেবেও ভোক্তাদের বঞ্চিত করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার) সন্দ্বীপ তালুকদারের নেতৃত্বে শহরের কাউতলী মসজিদপাড়ার লোকমান হোসেনের (৪৫) দোকান সংলগ্ন বাসায় অভিযান চালিয়ে টিসিবির মালামাল পাওয়া যায়। তার বাসা থেকে জব্দ করা মালামালের মধ্যে ছিল ২৪ বস্তায় থাকা ১২শ’ কেজি চিনি, ৪ বস্তা (২শ’ কেজি) মশুরের ডাল এবং ৩ বস্তায় থাকা দেড়শ’ কেজি ছোলা বুট।
এ নেতার যত পদ রয়েছে: তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সর্বশেষ কার্যকরি কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রয়েছেন। ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য পদও রয়েছে তার। জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতা হিসেবে ব্যবসায়িক বিভিন্ন সংগঠনে জায়গা করে নিলেও তার নিজের কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁ না থাকার অভিযোগ রয়েছে। তারপরও তিনি জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ আগলে রেখেছেন কয়েক বছর ধরে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সুইড ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কাউতলী শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদও তার দখলে। এইচএসসি পাস হয়ে তিনি এসব পদ দখল করে রেখেছেন। জেলা জামে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পদেও রয়েছেন শাহ আলম। তার নিজ এলাকা শহরের কাউতলীর ঈদগাহ মাঠের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, কাউতলী কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। আর তাতেই অনিয়মে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।