আফ্রিকার যেসব দেশে মেয়েদের খৎনার হার বেশি, সিয়েরা লিওন সেগুলোর মধ্যে একটি। এক নারী এবার পদক্ষেপ নিয়েছেন এই রীতি বন্ধের। নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে ২০০২ সাল থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্যুরে নামের সেই নারী। দ্য অ্যামাজোনিয়া ইনিশিয়েটিভ মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এই নারী ২০২০ সালে জার্মান মানবাধিকার পুরস্কারও জিতেছেন।
ট্যুরের প্রচারণার পর একদল সোয়াইস যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধে একমত হন। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা এই কাজ থেকে বিরত আছেন। বন্দো সমাজে যৌনাঙ্গচ্ছেদ উপলক্ষে প্রাচীন নাচ গানের যে রীতি আছে, সেটাকে আরো প্রচারের আলোয় আনতে চান ট্যুরে। তিনি বন্দো সংস্কৃতির প্রচার ঘটাতে চান। বন্দো সমাজের জন্য ‘নো ব্লেড, নো ব্লাড, নো পেইন’ স্লোগানে নতুন প্রচারণা শুরু করেছেন ট্যুরে। এই প্রচারণায় প্রথমে একশ জন নারী অংশ নিয়েছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে মেয়েদের প্রতকি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি নারী-পুরুষদের সমবেত করে প্রজেক্টারের সাহায্যে তথ্যচিত্র দেখান, যেখানে যৌনাঙ্গচ্ছেদের পুরো ঘটনা বিস্তারিত দেখানো হয়। ভিডিও দেখে সবার মুখ থেকেই আর্তচিৎকার বের হয়। তথ্যচিত্র দেখানো শেষে সবার মতামত জানতে চান তিনি এ বিষয়ে।
সিয়েরা লিওনের বন্দো সমাজে প্রবীণ নারী, যারা যৌনাঙ্গচ্ছেদে দক্ষ, তাদের বলা হয় সোয়াইস। যৌনাঙ্গচ্ছেদ অনুষ্ঠানে মেয়ের পরিবার সোয়াইসদের খাবার, কাপড়, গহনা এবং নগদ অর্থ দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসবে উপহার দেওয়ার চল আছে। ফলে যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধ হলে তাদের উপার্জনের পথ তৈরি করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রকাশিত ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনের নারীদের ৮৬ ভাগ যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার। সিয়েরা লিওনে নারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএমকে বলা হয় ‘কাটিং’। বহু পুরানো এই প্রথায় অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়া ব্লেড, রেজার আর কাঁচের টুকরো দিয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়। এই সময় নারীর যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ আংশিক বা পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো মেয়েদের যৌনাঙ্গের মুখ সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে বিয়ের আগে কোনো যৌনসম্পর্কে জড়াতে না পারে। বিয়ের পর স্বামী সেই সেলাই খোলে, যা অনেক সমাজে বিয়ের পূর্বশর্ত।
সাধারণত মেয়ের বয়স পাঁচ বছর পার হওয়ার আগেই যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়। এর ফলে রক্তক্ষরণ বা সংক্রমণে মেয়েদের মৃত্যুও ঘটে। জরায়ুতে সিস্টের কারণে অনেক নারী বন্ধ্যাত্বের শিকার হন। অনেকের সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা।