জসিম উদ্দিন
হার্ভার্ডের দুই রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ‘হাউ ডেমোক্র্যাসি ডাই’ নামে বইটি রচনা করেছেন – ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় সংসদের সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সম্প্রতি উপনর্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর শাকিল পেয়েছেন এক লাখ ৮৮ হাজার ৩২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী সেলিম রেজা পেয়েছেন ৪৬৮ ভোট। বিএনপির প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। প্রাপ্ত ভোটের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যদি ১০০টি ভোট পেয়ে থাকেন তার বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী একটি ভোটের চার ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়েছেন। এই হিসাব মতে, আওয়ামী লীগের ভোটের বাক্সে যদি ৪০০টির বেশি ভোট পড়ে কেবল তাহলেই বিএনপির বাক্সে একটি ভোট পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি খালি হয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে। তানভীর শাকিল হচ্ছেন নাসিমপুত্র। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উপনির্বাচনগুলোর চিত্র কমবেশি এমনই। এসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের থেকে অবিশ্বাস্য রকম বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন। ১৯৯১ সালের পর বাংলাদেশে দ্বিদলীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’টি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেখা গেছে- দেশের সব এলাকায় দল দু’টি প্রায় সমান জনপ্রিয়। কোনো একটি এলাকায় একবার আওয়ামী লীগ জয় পেলে পরের বার বিএনপি জয় পেযেছে। জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সবসময় খুব সামান্য। এখন এমন কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যে, আওয়ামী লীগ ৪০০টি ভোট পেলেও বিএনপি একটি ভোটও পাচ্ছে না। এটা যে ভোটারের ‘আজগুবি’ আচরণ নয়, সেটা সবাই জানে।
একই সময় ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ দু’টি আসনের ভোটদানের চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে প্রধানত দেখা গেছে, ভোটারের উপস্থিতি নেই। কেন্দ্র ফাঁকা। অন্য চিত্রটি হচ্ছে- বিরোধীদের বাধা দান। ছিটেফোঁটা কেউ যদি ভোটের জন্য কেন্দ্র গিয়েছে, তার ওপর জোরজবরদস্তি হয়েছে। অনেকে কেন্দ্রের বাইরে এসে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের সমন্বয়ে কেন্দ্র পুরোপুরি দখল করে রাখার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন তরুণ ভোটারকেও দেখা গেল, যিনি খুব আগ্রহ নিয়ে ভোটদানের জন্য কেন্দ্রে এসেছেন। তার খুব ইচ্ছা নিজে ভোট দেবেন। তার ভোটটিও জোর করে দিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে তিনি এ কারণে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। তিনি দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য ছাত্রলীগ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি।
প্রায় একই সময় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও প্রত্যক্ষ করলাম। এবারে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ছিল বিশেষ উত্তেজনায় ঠাসা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অগ্রিম ভোট কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করায় এ উত্তেজনা দেখা দেয়। তিনি আগে থেকে বলে রেখেছেন, তিনি পরাজয় মেনে নেবেন না। কেন তিনি এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সচেতন মানুষরা তা অনুমান করতে পেরেছে। নির্বাচন-পূর্ব জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, নবনির্বচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জনগণের সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন। বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যেই তার সমর্থনের হার ছিল অনেক বেশি। ভোটের ফলাফল কী হতে যাচ্ছে ট্রাম্প আগে থেকে বুঝতে পেরেছিলেন। তার লক্ষ্য একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা; কোনো একটি ছুুতা বের করে হোয়াইট হাউজে থেকে যাওয়া। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তিনি যখন পরাস্ত হওয়ার খবর পাচ্ছিলেন তখন এলোপাতাড়ি মামলা করেছেন। তার নির্বাচনী টিম সম্ভাব্য একটি মামলার সুযোগও হাতছাড়া করেনি।
মামলাগুলো একে একে প্রায় সব খারিজ করে দিয়েছেন বিচার বিভাগ। কারণ অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি ট্রাম্পের শিবির। নির্বাচনী মামলা যারা পরিচালনা করছেন, সে বিচারকদের বেশির ভাগ ছিলেন দলীয়। এদের একটা অংশ ট্রাম্পের নিয়োগ দেয়া। ট্রাম্পের চরম উসকানির মুখেও কেউ মামলাগুলো আমলে নেননি। তিনি অন্যায়ভাবে নিজেদের দলের নির্বাচিত সদস্যদের ব্যবহার করার চেষ্টাও করেছেন। তারাও ন্যায়ভ্রষ্ট হয়ে কেউ ট্রাম্পের অন্যায় আবদারের প্রতি সাড়া দেননি। এরপরও ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ ছাড়ার লোভ যায়নি। তিনি আস্ফালন করেই যাচ্ছিলেন। এ সময় দেশটির সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর প্রধান মার্ক আলেক্সান্ডার মিলি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, তারা কোনো স্বৈরাচারীকে রক্ষার জন্য শপথ নেননি। রাজা-রানী কিংবা কোনো ধরনের অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে তারা রক্ষা করবে না।
বর্ণবাদী ট্রাম্পের উত্থানে পুরো বিশ্ব ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তিনি মানুষের ধর্ম ও জাতীয় পরিচয়ের স্লোগান দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। আমেরিকায় অভিবাসী ও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় এতে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। তিনি এমন আইন-কানুন চাপিয়ে দিচ্ছিলেন যা অমানবিক। বহু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শিশুসন্তানরা বাবা-মায়ের কাছে থাকার সুযোগ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। তিনি ‘আমেরিকার স্বার্থ’ বলতে ব্রিটেন থেকে আসা, অভিবাসী ইংরেজদের স্বার্থকে ইঙ্গিত করছিলেন। অভিজাত হোয়াইটদের অর্থবিত্তে বড় করাই তার ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ বা আমেরিকা ফাস্টের মূলনীতি। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, ইউরোপ থেকে আসা খ্রিষ্টানরাই আমেরিকায় ইজ্জত সম্পদ নিয়ে শান্তিতে বসবাসের অধিকারী। তিনি যদি আবার হোয়াইট হাউজে তার অবস্থানকে পোক্ত করতে পারেন তাহলে এ নীতিই কার্যকর করবেন। এ জন্য তিনি হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট সংগঠনগুলোকে সরাসরি সমর্থন দেন। সন্ত্রাসী বর্ণবাদী সংগঠন ক্লু ক্লাক্স ক্লানকে পুষতে চান।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে যাওয়ার সব চেষ্টাই করেছেন। তার হাতে থাকা সাংবিধানিক ক্ষমতার পুরো ব্যবহার করেছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে থেকে নিজের লোক নিয়োগ দিয়েছেন। বিচার বিভাগে নিজের একান্ত অনুগত লোকদের বসিয়েছেন। এ অবস্থায় হোয়াইট হাউজ থেকে তার ছিটকে পড়াকে নিশ্চিত করতে যাচ্ছে সম্ভবত দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তার অন্যায়কে প্রতিরোধ করে দিচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ওই সব প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা প্রেসিডেন্টের নির্দেশ শোনার চেয়ে সংবিধানে দেয়া তাদের অধিকারকে চর্চা করছেন। সম্ভবত এ প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার গণতন্ত্রকে ট্রাম্পের মতো স্বৈরাচারীর হাত থেকে রক্ষা করতে যাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্রটি তার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার জোরেই চরম স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনী ফলাফল আষাঢ়ে গল্পকেও হার মানায়। এ নিয়ে অনেকে বিব্রত ও লজ্জিত। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং দায়িত্বে থাকা আরো কিছু ব্যক্তির মূল্যায়ন দেখে আশ্চর্য হতে হবে। তাদের মতে, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুু হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’ একটি করে এ ধরনের বোগাস নির্বাচন হয় আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার রেকর্ডে থাকা ক্যাসেট প্লেয়ার বাজিয়ে দেন। এই সময় তিনি আমেরিকান নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচনী সিস্টেম থেকে আমেরিকার শিক্ষা নেয়ার আছে। আমরা অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফলাফল দিয়ে দিতে পারি। আমেরিকা আমাদের থেকে দ্রুততার সাথে ফলাফল ঘোষণা করার নিয়মটি রপ্ত করতে পারে।’
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটা আগের রাতেই সম্পন্ন হয়ে যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের ফলাফল আরো ‘দ্রুততা’র সাথে ভোটের দিন সকালে দিয়ে দেয়ার রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারতেন। রাতের ভোটের হারের ভিত্তিতে ফলাফল ঘোষণা করলেও বাধা দেয়ার কেউ ছিল না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আর সরকার মিশে একাকার হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে সরকার কর্তৃত্ববান হয়ে তাদের যাতে চালায়। অন্যদিকে সংবিধান নির্বাচন কমিশনের হাতে যে ক্ষমতা দিয়েছে সেটা প্রয়োগ করতে তারা রাজি নন। সাংবাদিকের কেন্দ্র পরিদর্শনে বাধা ও যান চলাচলে বাধা দেয়ার মতো সরকারি ইচ্ছেগুলোকে শতভাগ মেনে চলতে তাদের অতি উৎসাহ। তাই সরকারের উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচন কমিশন যদি ভোটের দিন সকালে শতভাগ আসনে সরকারি দলকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দিত তাতে কিছুই হতো না প্রতিক্রিয়া। প্রতিবাদকারী বিরোধী দলকে রাস্তা থেকে অনেক আগেই ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে সরকার।
ভোটের গণতন্ত্র যতটা করুণ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের সামগ্রিক গণতন্ত্র চর্চার হাল তার চেয়েও খারাপ। মানুষের অনেকগুলো স্বাধীনতা আমাদের সংবিধান ও কাগজ-কলমের মধ্যে বন্দী হয়ে রয়েছে। এগুলোর কোনো চর্চা এখন আর নেই। বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের পর ধাপে ধাপে এদেশে গণতন্ত্র চর্চা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এখন কোনোমতে নাকটি উঁচিয়ে যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অপেক্ষায় রয়েছে।
স্বৈরাচারী ট্রাম্পকে সামনে রেখে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞানী স্টিভেন লেভিটস্কি ও ড্যানিয়েল জিবলাট ‘হাউ ডেমোক্র্যাসি ডাই’ নামে একটি বই রচনা করেছেন। ২০১৮ সালের রচনা করা এই বইতে গণতান্ত্রিক শাসনের মোড়কে কিভাবে গণতন্ত্র নিজেই ক্ষয় হয়ে যায় সে বিষয়টি দেখানো হয়েছে। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকসহ বিশ্বের অনেক দেশের জবরদস্তি শাসনের সাথে এই রাজনৈতিক বিজ্ঞানীদের তুলে ধরা লক্ষণগুলো মিলে যায়।
তারা দেখিয়েছেন, গণতন্ত্র শুধু বন্দুকের নলের আঘাতে মারা যায় না, যেমন দেখা গিয়েছিল রাশিয়া-আমেরিকার মধ্যকার শীতল যুদ্ধের পর্বে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তখন বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটেছে। এখন গণতান্ত্রিক শাসন ভেঙে পড়ার জন্য প্রধানত গণতন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। তবে নতুন ধাঁচের এই ভাঙন সামরিক ক্যু’য়ের মাধ্যমে ধসের মতোই ক্ষতিকর। সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের বদলে নির্বাচিত জনপ্রিয় নেতারা এ কাজটি করছেন। ভোটের মাধ্যমে ক্ষতিকর কাজটি করতে তারা প্রতারণার আশ্রয় নেন। রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের বদলে, জনপ্রিয় নেতারা ওপরে গণতন্ত্রের মিষ্টি আবরণটি রেখে ভেতর থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলেন। বৈধতার মোড়কে এসব হয়ে থাকে। সংসদ থেকে আইন পাস করিয়ে নেয়া হয়। বিচার বিভাগ যেন তৈরি থাকেন নতুন নতুন ইস্যুর বৈধতা দেয়ার জন্য। অন্যদিকে, বিরোধীদের তীব্র নিন্দা করে সরকার। তাদের চিহ্নিত করা হয় ‘শত্রু’ হিসেবে। ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এর মাধ্যমে লোকচক্ষুর অন্তরালে গণতান্ত্রিক শাসনের অপমৃত্যু ঘটে। এই শাসনের সুবিধাভোগীরা কবরে শায়িত গণতন্ত্রকে ‘তরতাজা’ বলে বকতে থাকেন।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ‘হাউ ডেমোক্র্যাসি ডাই’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লিখেছেন নিজের পত্রিকায়। হার্ভার্ডের দুই রাজনীতি বিজ্ঞানীর বইটি নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করেন তিনি। শিরোনামের নিচে সাব-টাইটেল দিয়ে তিনি বলেছেন, বইটি থেকে অনেক শিক্ষা নেয়ার আছে। লেখকদ্বয় বইতে গণতন্ত্রের মৃত্যুবরণের এক আকর্ষণীয় চিত্র উপস্থাপন করেন। তারা একে ফুটবল খেলার সাথে তুলনা করেছেন। খেলার আগেই যেখানে রেফারিকে কব্জায় নিয়ে নেয়া হয়। এরপর লাইনম্যানকে হস্তগত করা হয়। সব শেষে স্থানচ্যুত করা হয় গোলপোস্টকে। তবুও এটাকে জনপ্রিয় নেতারা ‘ফেয়ার প্লে’ হিসেবে আখ্যা দেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যথেষ্ট আস্থা তৈরি হয়নি। এ কারণে নির্বাচনের সময় দলগুলো কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ফলাফল নিজের পক্ষে না এলে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। এ ধরনের একটি সঙ্কট কাটানোর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদ্ধতি রাখা হয়েছিল। নির্বাচনের সময় তারা রেফারির ভূমিকা পালন করতেন। কথা ছিল, অল্প কিছু সময়ের জন্য এটি সরকারের রুটিন কাজ চালাবে। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্ব বধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আমেরিকা এক স্বৈরাচারীকে তার আপন ক্ষমতাবলে সম্ভবত ঝুড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সুযোগই থাকল না।
রেফারি, লাইনম্যান এমনকি গোলপোস্টও সরকারি দলের দখলে চলে গেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানী স্টিভেন লেভিটস্কি ও ড্যানিয়েল জিবলাট এই অদ্ভুত ব্যবস্থা নিয়ে আরেকটি বই লিখতে উৎসাহ পেতে পারেন।