কংগ্রেস সদস্যসহ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা এক চীনা নারী গুপ্তচরকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভার্জিনিয়াভিত্তিক সংবাদ ওয়েবসাইট এক্সিওসের দীর্ঘ এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিহ্নিত ওই চীনা গুপ্তচর ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনের গোয়েন্দা সংস্থার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় ছিল।
এক্সিওস বলছে, এই ঘটনার উন্মোচন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টাকে স্পষ্ট করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়কালেই এই অপারেশনটি শেষ করা হয়েছিল। তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে বেইজিং হয়তো ডনাল্ড ট্রা¤প সরকারের সময়েও সক্রিয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে, এখনই থামাতে না পারলে তারা পরবর্তী বাইডেন প্রশাসনেও সক্রিয় থেকে যাবে।
যেই নারী গুপ্তচরকে ঘিরে এতো সব ঘটনা তার নাম বলা হচ্ছে ফ্যাং ফ্যাং কিংবা ক্রিস্টিন ফ্যাং।
তিনি চীনের নাগরিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমন নেতাদের টার্গেট করেছিলেন যাদের নিকট ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নিজের স্বার্থ হাসিলে তিনি প্রচারণায় তহবিল গঠনে কাজ করেছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ব্যবহার করেছেন নিজের কারিশমা এবং গড়ে তুলেছেন রোমান্টিক ও শারীরিক সম্পর্ক। যেসব নেতা তার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন তার মধ্যে রয়েছে অন্তত দুই মেয়র। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে, অনেক চেষ্টা সত্যেও ফ্যাং স্পর্শকাতর কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে তিনি যাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন তারা সকলেই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
তবে রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তিতে রাজনীতিবিদদের স্বভাব, সময়সূচি, পছন্দ-অপছন্দ, সামাজিক যোগাযোগ এবং নানা গুজবও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিচ্ছিন্ন তথ্যই অনেক সময় বড় অপারেশন সফল করতে প্রয়োজন হয়। ফ্যাংয়ের সব থেকে বড় সফলতা ছিল রিপ্রেজেন্টেটিভ এরিক সোয়ালওয়েল পর্যন্ত পৌঁছানো। ফ্যাং ২০১৪ সালে তার পক্ষে তহবিল গঠন করতে যোগ দেয়। সোয়ালওয়েল তার প্রচারণার সকল কর্মসূচি সম্পর্কে খোঁজ রাখতো। তবে ফ্যাং নিজে থেকে কোনো অর্থ প্রদান করেনি। মার্কিন আইন অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকরা চাইলে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। তবে কোনো অর্থ প্রদান করতে পারেন না। সোয়ালওয়েলের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, অনেক বছর আগেই ওই চীনা নারী সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছিলেন তিনি। এরপর গত ৬ বছরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোয়ালওয়েল কোনো আইনভঙ্গ করেননি। দ্রুত সন্দেহের তালিকায় উঠে এসেছিলেন ফ্যাং। এরপর ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে আসেন ফ্যাং। এক্সিওস তার সঙ্গে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করে। তবে তিনি ফেসবুক বা ই-মেইলে কোনো সাড়া দেননি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীন দূতাবাসেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। তারাও এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বর্তমান ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার দ্বারস্থ হতে হয় এক্সিওসকে। তবে এই কেস নিয়ে কোনো ধরনের তথ্য প্রদান নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৪ কর্মকর্তা কেসের বিষয়ে ধারণা দেয় এক্সিওসকে। মানবজমিন