শোভা আফগানিস্তানে ‘সুখে’ থাকলেও দারুণ অর্থকষ্টে আছেন।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে আফগানিস্তানে বিক্রি হওয়া নরসিংদীর শোভা বিবি বাংলাদেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। দেশ রূপান্তরে তাকে নিয়ে প্রতিবেদনে প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে ফোন করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
করিমপুরের মেয়ে শোভাকে তার দেবর পাকিস্তানের ‘নারী বাজারে’ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ১৩ হাজার রুপিতে তাকে কিনে নেন আফগানিস্তানের আবদুল হাবিব নামের এক ব্যক্তি।
দেশ রূপান্তর প্রায় এক সপ্তাহ আগে শোভার খবর পায়। এই কদিনে অনেক চেষ্টার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন এই প্রতিবেদক।
‘তুমি আমার ভাই। আমাকে ফিরিয়ে নাও। আমি দেশে যেতে চাই,’ শনিবার কাঁদতে-কাঁদতে শোভা হোয়াটসঅ্যাপে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি আর এই দেশে থাকতে চাই না। দেশের মাটিতে মরতে চাই।’
শোভার স্বামী জানিয়েছেন, তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই কান্না থামছে না। দেশের মাটিতে ফেরার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়েছেন।
শোভার ছেলে জানিয়েছেন, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রথম শোভার সন্ধান পান আফগানিস্তানের সাংবাদিক সাইফুল্লাহ মাফতুন। দেশ রূপান্তর তার মাধ্যমে শোভার সঙ্গে কথা বলেছে। মাফতুন শনিবার শোভার একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। ভিডিওটি তার পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
শোভার যেভাবে এমন পরিণতি: বাংলাদেশে তার বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে দুই সন্তান-জাকির হুসেইন এবং মুজিবুর রহমান। শোভা জানিয়েছেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর দেবরদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে তার বিরোধ দেখা দেয়। জায়গা-জমি লিখে না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা।
শোভা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে দেবর তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকের সহায়তায় শোভাকে অজ্ঞান করা হয়।
শোভা বলেন, ‘আমার বাকি ঘটনা মনে নেই। জ্ঞান ফিরে বুঝতে পারি আমি পাকিস্তানে। দেরা ইসমাইল খান নামের এক লোক জানায়, সে আমাকে নারী বাজার থেকে কিনে এনেছে।’
‘লোকটা আমাকে বলেছিল, যারা তার বাড়িতে আসে, সবাইকে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিন জনকে বিক্রি করা হয়।’
এভাবে একদিন শোভাকে কিনে নেন আফগানিস্তানের আবদুল হাবিব। তার সঙ্গে গজনী প্রদেশের কারাবাগ জেলায় সংসার করছেন তিনি।
আফগান স্বামীর সংসারে শোভার কোনো সন্তান নেই। আবদুল হাবিবের আরও দুই স্ত্রী আছেন। তারাও নিঃসন্তান।
শোভা একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বড়ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ভিডিওকলে মাঝেমাঝে কথা বলেন। ছোট ছেলে মারা গেছে আগেই। পানিতে পড়ে তার মৃত্যু হয়। বড় ছেলে থাকেন সৌদি আরবে।
তাকে যে বিক্রি করেছিল তার বিষয়ে জানতে চাইলে শোভা বলেন, ‘ও তো দুশমন হে, জালিম হে, চোর হে। মারগায়া (মারা গেছে)। ওর এক মেয়ে আছে।
শোভার আফগান স্বামী বলছেন, ‘ও বাংলাদেশে গেলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু পাঠানোর মতো অত অর্থ আমার নেই। বিত্তবানদের সাহায্য পেলে শোভা তার ছেলের কাছে ফিরতে পারবে।’
শোভা আফগানিস্তানে ‘সুখে’ থাকলেও দারুণ অর্থকষ্টে ভুগছেন, ‘এরা মিসকিন হে। জায়গা-জমি নেই। এমনিতে সুখে আছি। তবে খুব কষ্ট হয়। আমি আমার বাংলাদেশ দেখতে চাই।’
দেশের কথা কিছু মনে আছে কি না-প্রশ্ন শুনতেই কান্না উবে যায় শোভার। বলিরেখার ওপর হাসি টেনে বলে ওঠেন, ‘সে তো কত আগের কথা। সেই পথ, সেই বাড়ির কথা তেমন কিছু মনে নেই। শুধু ভাইদের কথা, বাবা চাঁনমিয়ার কথা মনে পড়ে।’
(শোভাকে সাহায্য করতে চাইলে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন: ০১৯৯৫৯০৭৫৩৮)