সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১১ হাজার ৭৯৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৯২৩ জন।
দেশটির অন্টারিও, বৃটিশ কলম্বিয়া, আলবার্টা ও কুইবেক এই ৪টি অঙ্গরাজ্যে নাটকীয়ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে ব্যাপকহারে চাপ পড়ছে।
কানাডার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বড়দিনের এখনো এক মাস বাকি। কিন্তু এমন সময়ে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রিমিয়াররা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে।
কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. থেরেসা ট্যাম জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, মহামারি চলাকালীন ছুটির মৌসুমে সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে কার্যকর উপায় হলো জমায়েত সীমাবদ্ধ করা এবং প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যাওয়া।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, কানাডায় যে অনুপাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মঙ্গলবার জানান, কানাডিয়ানরা ২০২১ সালের গোড়ার দিকে প্রথম ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার আশা করতে পারে। যেসব দেশ নিজেরাই টিকা উৎপাদনে সক্ষম তাদের তুলনায় দেরিতে পাবে তার দেশ।
গত সোমবার থেকে টরন্টো এবং পিল অঞ্চলকে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড। এই লকডাউনে জিমনেসিয়াম ও ব্যক্তিগত পরিষেবাসহ অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে এবং লকডাউনের আওতায় হটস্পট এলাকাগুলোতে হোটেল রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণের চলাচল সীমিত করে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
ম্যানিটোবার প্রিমিয়ার ব্রায়ান প্যালিস্টার তার অঙ্গরাজ্যে সমাবেশ ছাড়াই ক্রিসমাসের পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে কানাডার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো আলবার্টা। সেখানে নতুন করে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাই সংক্রমণ এড়াতে ৩০ নভেম্বর থেকে ৭ম থেকে গ্রেড ১২ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে ক্লাস করার জন্য বলা হয়েছে। আলবার্টার ক্যালগেরির সিটি মেয়র নাহিদ ন্যান্সি ক্যালগেরি সিটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। ক্রমবর্ধমান হারে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার হাসপাতাল ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে (আইসিইউ) চাপ পড়ছে।
এদিকে, ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি আরোপসহ সরকারের বিভিন্ন বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কোনোভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ফাইজারের ভ্যাকসিনটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে কানাডা। ক্রিসমাসের আগেই এটি ব্যবহারের অনুমোদন দিতে পারে দেশটির সরকার।
দেশটির স্বাস্থ্যখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘হেলথ কানাডার’ প্রধান উপদেষ্টা ড. সুপ্রিয়া শর্মা বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, হেলথ কানাডার পর্যালোচনায় ফাইজারের ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে অগ্রসর এবং নিরাপদ মনে হয়েছে। ক্রিসমাসের আগেই এর ব্যবহারের অনুমোদন দিতে হেলথ কানাডা কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও ক্রিসমাসের আগেই ভ্যাকসিন অনুমোদনের পকিল্পনা নিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে কানাডার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা শঙ্কার মধ্যে দিনযাপন করছেন। শীতের প্রকোপের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উদ্বেগ। তবুও প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন আর সুদিনের অপেক্ষায় কানাডাবাসী।