স্মরণের তীরে স্মৃতি হয়ে রবে অনেক কাল…

কৃষ্ণপদ সেন

সালটা সম্ভবত ১৯৯৪। মাত্র কিছুদিন আগে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ বিদ্ধস্ত। বিএনপি সরকার। সারা দেশে তখন দমবন্ধ করা শাসন আর জামাত বিএনপির নিত্য তান্ডব।

তখনই সিলেট বিভাগীয় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সম্মেলন। সিলেট বিভাগের চার জেলা- হবিগঞ্জ, মৌলবীবাজার, সিলেট আর সুনামগঞ্জের বিভাগীয় সম্মেলন হবে সিলেট শহরের “শারদা স্মৃতি ভবন” এর মঞ্চে। ঢাকা থেকে এসেছেন জেনারেল সি,আর,দত্ত, শ্রী কে,বি রায় চৌধুরী, শ্রী সিরিল শিকদার আর শ্রী শুদ্ধানন্দ মহাথেরো প্রমূখ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সম্মেলনে যোগ দিতে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ আর মৌলবীবাজার থেকে এসেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানেই আমার সাথে প্রথম পরিচয় হয় সদ্য স্বর্গীয় শ্রী ফণীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য মহাশয়ের সাথে। হালকা পাতলা চেহারা। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। আর পানের রসে রাঙ্গানো দুই ঠোঁট। কথা বলছেন আর নির্দ্বিধায় একটার পর একটা পান মুখের মাঝে পুরছেন। সাথে ঘরের তৈরী সাদার গুড়ো। ভাজা সাদা আর মৌরী দিয়ে তৈরী সেই পান মশলার স্বাদ যারা পেয়েছেন, তারাই বলতে পারবেন এই পান মশলাটি স্বাধে গন্ধে কতটুকু লোভনীয়। এই গন্ধটা এখনো যেন আমার নাকে লেগে আছে।
বলা বাহুল্য, ঐ সম্মেলনে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সম্মেলনসভা সঞ্চালনা করার জন্য। সেই সম্মেলন সভায় স্বর্গীয় ফণীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য মহাশয়ের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপরের বছর আমি দেশত্যাগ করি। কানাডা এসে বসতি গড়ছি তাও প্রায় তিন দশক। এখানে তাঁর ছেলে পিনাকীর সাথে পরিচয়, আত্মীয়তা হয়েছে। তখন জানলাম আমাদের পিনাকীর বাবা তিনি। সম্ভবত ২০১২ বা ১৩ সালে তিনি মন্ট্রিয়লে আসেন। আবারও নতুন করে পরিচয় হয়। তাঁর বিশাল জ্ঞানের ভান্ডারে উঁকি মেরে আহরণ করতে চেয়েছি মনি মুক্তো।
২০১৩ সালে মন্ট্রিয়ল রবি অনুরাগী গোষ্ঠী কবির নোবেল জয়ের সার্ধশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিন “আলোর স্রোতে” প্রকাশ করে। এই প্রকাশনার সাথে জড়িত ছিলাম। তাই ম্যাগাজিনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান তাঁর মত একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বের হাতে সম্পন্ন হওয়ায় ম্যাগাজিনের গুরুত্ব স্বভাবতই বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
একাধারে শিক্ষক, আইনজীবী, জন প্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আন্দোলনের অগ্রসর ব্যক্তির প্রতি আমার হৃদয়ের সমস্ত শ্রদ্ধা ভক্তির অর্ঘ্য আজ তাঁরই চরণে সমর্পীত।
“মৃত্যু যদি কাছে আনে তব অমৃতময় লোক…”
সেই অমৃতময় লোকে ভালো থাকবেন মেসো।
প্রণাম।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ