প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর অবশেষে নিজস্ব ক্যাম্পাস পেতে যাচ্ছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিজস্ব ক্যাম্পাস পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্পটি আজ একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় (ইউনিয়ন- মোল্লারগাঁও; মৌজা-গোয়ালগাঁও ও হাজরাই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ২০১৮ সালে সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্পটির প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হলো- ৮০.৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন, দুটি আবাসিক ও ১০টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, পরামর্শক ব্যয়, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি (এয়ার কুলার, লিফট) সরবরাহ, অফিস ও আইসিটি ইক্যুপমেন্ট এবং আসবাবপত্র ক্রয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও এর আশেপাশের প্রায় দেড় কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ চালুকরণ এবং উন্নতমানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা জনশক্তি ও অন্যান্য সুবিধাদি বাড়ানো সম্ভব হবে।
আলোচ্য প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার জন্য উদ্যোগী বিভাগ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও আইএমইডি কর্তৃক নিবিড় তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিজিএমআর) ঐতিহ্য বহন করছে, যা ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে সরকার আইপিজিএমআরকে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়সমূহে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো এবং স্নাতকোত্তর স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রসারে প্রত্যেক বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা’ করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় চিহ্নিত সূচকগুলোর অগ্রগতিতে গুরুত্বর্পূণ অবদান রাখবে এবং চিকিৎসাসেবার মান বাড়বে।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকইসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৩ হচ্ছে ‘সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ’। এ অভীষ্টের মধ্যে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।