মহান একুশের ঐতিহ্যকে ব্রিটেনের নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচিত করতে প্রতি বছরের মতো এবারও লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রভাতফেরী।
একুশের প্রভাতফেরী আয়োজন পরিষদের আয়োজনে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শিশু, তরুণ প্রজন্ম ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে অনুষ্ঠিত হয়।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি- গানের সাথে আলতাব আলী পার্ক প্রদক্ষিণ করে প্রভাতফেরীর র্যালিটি ফিরে আসে শহিদ মিনার বেদীতে। বিদেশিরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে র্যালিটিকে। অনেকে কাছে এসে জানতে চায় র্যালি সম্পর্কে।
প্রভাতফেরী পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাপনী বক্তৃতায় পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন বলেন, বিলেতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে তার শেকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমাদের ভাষা, ভাষা আন্দোলন, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্যমণ্ডিত সংগ্রামমুখর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারলে তারাও গর্ব করার মতো অনেক বিষয় খুঁজে পাবে। নিজ শেকড়ের সাথে অটুট সেতুবন্ধন তৈরি হবে যা তাদের গর্বিত আত্মপরিচয়ের সন্ধানে সাহায্য করবে।
প্রভাতফেরী পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সভা পরিচালনায় ছিলেন আয়োজন পরিষদের সদস্য সচিব জামাল আহমেদ খান।
এরপর দুপুরে ব্রাডি আট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গুণীজন সম্মাননা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সমগ্র অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একুশের প্রভাতফেরী আয়োজন পরিষদ যুক্তরাজ্যের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সদস্য সচিব জামাল আহমদ খান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় উদীচী, সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস এবং লন্ডনের স্থানীয় শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজন পরিষদের প্রাক্তন সদস্য সচিব আমিনা আলী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরবর্তী সমাপনী অধিবেশনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এছাড়াও এবছর প্রভাতফেরী আয়োজন পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলা ভাষার জন্য অবদান রাখা তিন গুণীজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। তারা হলেন প্রয়াত আবদুল গাফফার চৌধুরী, প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুলতান মাহমুদ শরীফ, ডা. আহমেদ জামান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একুশের প্রভাতফেরী আয়োজন পরিষদের অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, সাবেক স্পিকার মো. আব্বাস হোসেন, মাহমুদ এ রউফ, আবেদ আলি আবিদ, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, হারুনুর রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, নিসার আহমদ, নিলুফা ইয়াসমিন হাসান, নুর উদ্দিন আহমদ, জামাল আহমদ খান, সাংবাদিক মিল্টন রহমান, সাংবাদিক বুলবুল আহসান, সুলতানা জলি, নুরুল ইসলাম, বাবলু খন্দকার, জুবের আক্তার সোহেল, মুনজেরিন রশীদ চৌধুরী, নাসিমা কাজল, সেলিনা শফি, কবি হামিদ, অসীমা দে, মুহাম্মদ, শাহরিয়ার বিন আলী, স্মৃতি আজাদ, সাংবাদিক জুয়েল রাজ, ইফতেখারুল হক পপলু, নাসরিন মঞ্জুরী, সুশান্ত দাস প্রশান্ত প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিলেতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম এবং অপরাপর ভাষাভাষী মানুষের মাঝে অমর একুশের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রাম ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর লন্ডনে প্রভাতফেরীর আয়োজন করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত দুই বছর ভার্চুয়ালি প্রভাতফেরীর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেও এবার পুনরায় লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে সশরীরে প্রভাতফেরী অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ২০১৬ সালে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের আহবানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একুশের প্রভাতফেরী আয়োজন পরিষদ যুক্তরাজ্য।