জন্ম-বেড়ে ওঠা লন্ডনে হলেও শেকড়ের টানে ২০২১ সালে দেশে এসে অংশ নেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথমবারের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে চমকে দেন সবাইকে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ইমরানুর রহমানকে। একের পর এক আসরে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। এবার স্বপ্নটা আরও বড় করে দেখতে ও দেখাতে শুরু করেছেন।
শনিবার যেমন অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন ইমরানুর। দেশের অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে সেরা সাফল্যে দেশকে উপহার দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি এই স্প্রিন্টার। এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে এশিয়ান বড় বড় স্প্রিন্টারদের পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছেন তিনি।
ইমরানুর যে কিছু একটা করে দেখাবেন তা গত বছর কমনওয়েলথ গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসেই বুঝিয়েছিলেন। সেটাই কাজাখস্তানে করে দেখলেন। এবার আরও বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠার চ্যালেঞ্জ। তার আগে অবশ্য এমন সাফল্যে ভিজছেন অসংখ্য মানুষের অভিনন্দন বৃষ্টিতে। যে তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীও।
তবে কেবল অভিনন্দনে যে ভবিষ্যতের পথটা মসৃণ হবে না, সেটা সবার জানা। ইমরানুরকে কেবলমাত্র খেলায় মনোযোগ দিতে ছাড়তে হবে যুক্তরাজ্যে ব্যাংকের আকর্ষণীয় চাকরি। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই সহজ নয়। সে সিদ্ধান্ত তখনই নিতে পারবেন, যখন দেশ তাকে নেবে আর্থিক নিরাপত্তা।
ইমরানুর বলেন, ‘সামনে আরও ভালো কিছু করতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে সোনা জেতানোর লক্ষ্য। এছাড়া এশিয়ান গেমসেও ভালো করতে চাই। আর অলিম্পিকের মতো বড় প্রতিযোগিতায় ভালো করার বড় স্বপ্ন তো আছেই। তবে কাজটা মোটেই সহজ নয়। আরও ভালো করতে হলে হাই পারফরম্যান্স ট্রেনিং লাগবে। ২৪ ঘণ্টাই আমাকে অ্যাথলেটিকস নিয়ে থাকতে হবে। সেটা বড্ড কঠিন।’
মূলত যুক্তরাজ্যে চাকরি করেন বলেই পুরোটা সময় অ্যাথলেটিকসে দিতে পারছেন না ইমরানুর। তাই এক্ষেত্রে তিনি চান সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সমর্থন, ‘এখন চাকরি করে জিম ও অনুশীলন করতে হয়। অবসর তো একদমই পাই না। লন্ডনে আমার কোচ আছে। তার অধীনে অনুশীলন করতে হচ্ছে। এর পেছনেও অনেক খরচা করতে হয়। তবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি দেখছে। আশা করছি একটা সমাধান হবে। হাই পারফরমেন্স ট্রেনিং না হলে সামনের দিকে পদক জেতা কঠিন হবে। এই যেমন শ্রীলঙ্কার অ্যাথলেট আবেকুন ইতালিতে দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলনে রয়েছে। এমন কিছু হলে আমার পক্ষেও আরও ভালো করা সম্ভব।’
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টুও চাইছেন ইমরানুরের স্বপ্ন এগিয়ে নিতে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার। সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তার বিকল্প দেখছেন না তিনি, ‘আসলে অ্যালথেটিকসে আমাদের সম্ভাবনার জায়গা অনেক। ইমরানুর যেটা করেছে সেটা একেবারে ওর নিজস্ব চেষ্টায়। তবে সামনে বড় মঞ্চে ভালো করতে হলে ওকে আরও বেশি করে খেলায় মনোযোগী হতে হবে। ওকে যদি আমরা একটা আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারি, তবে ও অবশ্যই আরও ভালো করবে।’