পারষ্পরিক সম্প্রীতি, সংহতি, ঐক্য এবং টিম স্পিরিট তৈরি করতে তার জুড়ি মেলা ভার। পুরো দলকে একটা পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে মাশরাফি অনন্য। ড্রেসিং রুম চাঙ্গা রাখার কাজটিও মাশরাফি খুব ভাল পারেন।
মোটকথা, মাশরাফি থাকা মানেই টিম স্পিরিট বেড়ে যাওয়া। টিম ওয়ার্ক তৈরি হওয়া। আর তাই তার সময়ে দলগত সাফল্যও বেড়েছে অনেক। পরিসংখ্যানই বলছে মাশরাফিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। তার সময়ই ব্যক্তি নির্ভরতা কাটিয়ে ‘একটি দল’ হিসেবে গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
বিপিএলেও অধিনায়ক মাশরাফির সাফল্য সর্বাধিক। সবচেয়ে বেশি ৪ বারের বিপিএল চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মাশরাফি। তার হাতের ছোঁয়ায় বদলে যায় দল। তার গতিশীল নেতৃত্বে মাঠের পারফরমেন্স হয় অনেক সমৃদ্ধ।
এবার ৮ মাস পর বিপিএল দিয়ে আবার মাঠে ফিরলেন তিনি এবং নিয়েছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের নেতৃত্বভার। তার অধিনায়কত্বে কাগজে-কলমের হিসেব পাল্টে মাঠে দূরন্ত, দুর্বার সিলেট স্ট্রাইকার্স।
কাগজে কলমে সিলেটকে সেরা চারেও রাখেননি কেউ; কিন্তু মাঠে সিলেট সবার ওপরে। ঢাকায় হওয়া প্রথম পর্বে ৪ ম্যাচে সিলেটের সঙ্গে পারেনি কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং ঢাকার কেউই।
ঢাকায় হওয়া প্রথম পর্বে টানা ৪ ম্যাচ জিতে মাশরাফির সিলেট এখন পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর সাকিবের ফরচুন বরিশাল আর চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং সব শেষে আজ ঢাকা ডমিনেটর্সকে হারিয়ে শীর্ষে মাশরাফির সিলেট।
মাঠে মাশরাফির সিলেটকে মনে হচ্ছে দুর্দমনীয়। বোলিং, ব্যাটিং আর ফিল্ডিং- তিন শাখায় বাকি দলগুলোর চেয়ে অনেক উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত আর সুবিন্যস্ত মনে হচ্ছে সিলেটকে। যে কারণে জয়রথ সচল এবং কোন দল এখন পর্যন্ত চ্যালেঞ্জও দাঁড় করাতে পারেনি সিলেটের সামনে।
সিলেটের এতটা ভাল খেলার কারন কী? মাশরাফি ম্যাজিক? মঙ্গলবার রাতে খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে উঠলো এ প্রশ্ন। ‘আপনার হাতের ছোঁয়াতেই কি সিলেটের এমন অপরূপ রূপ?
বিনয়ী মাশরাফির জবাব, ‘না না। আমার একার কেন হবে? এটা পুরো টিম ওয়ার্ক। সবাই শুরু থেকে চেষ্টা করছে। পুরো দল একসাথে হয়ে কাজ করছে। দেখেন যে আমাদের ভালো গেম প্ল্যান আছে। প্লেয়াররাও খুব উজ্জীবিত। অনুপ্রাণিত। মুশফিক আছে। টিম আলহামদুল্লিাহ শুরু মানে প্র্যাকটিস থেকেই একটা ছন্দে আছে। আমরা ডিসিপ্লিনড ওয়েতে চেষ্টা করেছি। মাঠের খেলার কথা বলা যায় না। তবে আমরা অফ দ্য ফিল্ড জিনিসগুলো ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। বলতে পারেন, তারই ইফেক্ট। আমার মনে হয় ইটস নট অল অ্যাবাউট মি। ইটস অল অ্যাবাউট ফুল টিম।’
তার দলের ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয় আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলে গেছেন, ‘তরুণদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। নির্ভার হয়ে খেলার কথা বলা হয়েছে।’ সেখানে মাশরাফির ভূমিকা কি?
জানতে চাইলে সিলেট ক্যাপ্টেন একটু ঘুরিয়ে জবাব দেন। তার নিজের কথা না বলে দলের লক্ষ্য ও পরিকল্পনাকেই বড় করে দেখান। এটা যে তারই মাথা থেকে এসেছে, তা না বলে উপস্থাপন করেন এভাবে, ‘আসলে যারা ইয়াং আছে, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির চেয়ে তাদের ওই এক্সেসটা দেয়াই আমরা মনে করেছি বেটার। তারা যেভাবে মন চায় নিজেদের প্রকাশ করতে পারে। যেমন ইচ্ছে খেলতে পারে, তেমনটাই বলা হয়েছে।’
এটুকু বলে দলের তরুণদের প্রশংসা করতেও কম যাননি মাশরাফি। ‘এটাও সত্য যে, তারা দীর্ঘদিন এ টিম, এইচপিতে খেলছে। আন্ডার নাইনটিন ওয়ার্ল্ডকাপও খেলেছে ম্যাক্সিমাম। তাদের মিনিমাম আইডিয়া আছে কিভাবে খেলতে হবে। ওদেরকে যেটা বলা হয়েছে উইকেটের আচরণ, গতি-প্রকৃতি বুঝে যে ধরনের ব্যাটিং লাগসই হয়, তা করতে হবে। যেভবে টি-টোয়েন্টি খেলা উচিৎ সেভাবে খেলতে হবে। সেই ফ্রিডমটা আমরা শুরু থেকেই দিয়েছি। মানে ওদের নিজেদের মেলে ধরার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা তা করতে বলা হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে কোন প্রেসার দেয়া হয়নি।’