দীন ইসলাম: নতুন ইমিগ্রেশন লেভেল প্ল্যান ঘোষণা করেছে কানাডা সরকার। নতুন ঘোষণা অনুযায়ি ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ এ তিন বছরে প্রায় ১৫ লাখ ইমিগ্র্যান্ট নেবে দেশটি। শ্রমের ঘাটতি মোকাবেলার জন্যই ইমিগ্র্যান্টদের আগমন বাড়ানো হচ্ছে বলে কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণার কথা জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন মন্ত্রী শন ফ্রেজার। ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর এ ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাঙ্গালি কমিউনিটিতে ইমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যারিস্টার এবং ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্টরা। তারা বলছেন, কানাডা সরকারের ঘোষণার দিকে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের আগ্রহীদের তাকিয়ে থাকলে চলবে না। তাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজেকে কানাডা আসার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যায় ইমিগ্র্যান্ট আসবে। এদিকে গত ১ লা নভেম্বর মঙ্গলবার এক ঘোষণায় ইমিগ্রেশন মন্ত্রী শন ফ্রেজার এক বিবৃতিতে জানান, কানাডা তার ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের ইমিগ্রেশন লেভেল প্ল্যান প্রকাশ করছে। আমরা ২০২৩ সালে চার লাখ ৬৫ হাজার নতুন অভিবাসীকে স্বাগত জানানোর লক্ষ্য নিয়েছি। যা ২০২৪ সালে চার লাখ ৮৫ হাজার নতুন অভিবাসীতে উন্নীত হবে। এরপর ২০২৫ সালে পাঁচ লাখ অভিবাসীকে স্বাগত জানাবে কানাডা। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী শন ফ্রেজার বিবৃতিতে আরও জানান, এই বছরের অভিবাসন স্তরের পরিকল্পনা ব্যবসায়িকদের তাদের প্রয়োজনীয় কর্মী খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে কানাডা নিজ দেশে সহিংসতা ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লোকদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৫ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অভিবাসন পরিকল্পনাকে বাড়িয়েছেন। দেশটি এই বছর প্রায় চার লাখ ৩১ হাজার নবাগতদের সহায়তা করার পথে রয়েছে। মূলত এই মুহুর্তে বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান এখন অবসর নিচ্ছেন ও সবচেয়ে দক্ষ কর্মীরা দেশত্যাগ করছেন। এর ফলে দেশটির ব্যবসায়িক অবস্থা এখন ভালো নেই। শ্রমিকের তীব্র ঘাটতির সঙ্গে লড়াই করছে দেশটি। বিশেষ করে দক্ষ ব্যবসায় ও স্বাস্থ্যসেবার মতো শিল্পে। আগস্ট মাসে কানাডায় ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০টি শূন্য পদ ছিল। বেকারদের অনেকেরই সেই উন্মুক্ত পদ পূরণের দক্ষতা নেই বা দেশের ঠিক এলাকায় বসবাস করেন না। নতুন লক্ষ্যণ্ডলো ২০২৩ ও ২০২৫ এর মধ্যে অর্থনৈতিক অভিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ১৩ শতাধিক বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে নগর কেন্দ্রের বাইরের প্রদেশ ও অঞ্চলে ছোট আঞ্চলিক কর্মসূচি বাড়াতে সহায়তা করবে। তবে শরণার্থী পুনর্বাসনের বিষয়ে কানাডার নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা। কানাডার নতুন ইমিগ্র্যান্ট প্ল্যানকে কিভাবে দেখছেন? এনিয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর আরিফ ইমতিয়াজ ভোরের আলোকে বলেন, এই মুহুর্তে কানাডায় প্রচুর স্কিল লোকের প্রয়োজন। যারা কানাডার অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে বলে মনে হয়। কানাডার সরকার সেটা বুঝতে পারছে। তাই তিনধাপে লোকের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছে। তিনি বাংলাদেশের এখনই প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে বয়স যাদের কম তাদেরই সুযোগ বেশি। তাই বসে না থেকে কানাডায় আসার প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই ভাল সময়। বাংলাদেশ থেকে আগ্রহীদের বেশি করে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দেবো। কানাডা সরকারের নতুন ইমিগ্রেশন প্ল্যানকে স্বাগত জানিয়ে ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট মাহমুদা নাসরীন ভোরের আলোকে বলেন, ইমিগ্রেশন প্ল্যাণ অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কারন এর মাধ্যমে ইমিগ্র্যান্ট আসার হার আরও বাড়বে। কিন্তু কানাডায় ইমিগ্রেশন প্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাকলগ তৈরি হয়েছে। আমরা যারা এ কাজের সাথে জড়িত তারাই একমাত্র বুঝতে পারছি। তিনি বলেন, কানাডা সরকারের প্ল্যান দিলেই হবে না। ওই প্ল্যান বাস্তবায়নও করতে হবে। এজন্য আমরা যারা সরাসরি জড়িত তাদের কাজ করতে হবে। তরুণ ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট তানভীর নেওয়াজ মনে করেন, কানাডা সরকারের নতুন ইমিগ্রেশন প্ল্যানের সুবিধা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিরা পেতে পারে। কারন বয়স ৩০ এর কোটায় থাকা বাংলাদেশি তরুণরা প্রস্তুতি নিয়ে সহজেই স্কিল মোই্গ্রশনে কানাডায় আসতে পারেন। বাংলাদেশি তরুণদের বলবো প্রস্তুতি নাও। আগামী তিন বছরই বিভিন্ন প্রোগ্রামে কানাডা আসার সেরা সময়।