মাহমুদুল হাসান রুবেল
মেলা- নামই বলে দেয় উৎসবের সুবাস। বাঙালীর লোকজ ধারায় মাটির গন্ধের আবহ ফুটে তোলে এই মেলা। বাংলা ভাষায় মেলা শব্দটি অনেক বাক্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেমন মিলনমেলা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কাব্যে সঙ্গীতে গল্প কবিতা উপন্যাসে মেলা শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন নানা ব্যঞ্জনায়। ‘ভাঙলো মিলনমেলা ভাঙলো…’ রবীন্দ্রনাথের এই গানের সুর মানুষে মানুষে মেলবন্ধন অটুট রেখেছে। মেলা এই মিলনকেই গেঁথে রেখেছে বহুকাল ধরে। তাই ভিনদেশে এসেও বাঙালীরা এই মিলনমেলার জন্য শহরে শহরে আয়োজন করেন “বাংলা মেলা”। কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরও সে ধারা অব্যাহত রেখেছে।
আর মাত্র কয়েক দিন। অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ। বাংলাদেশ সোসিও-কালচারাল ফোরাম(BSCF)এর আয়োজনে ৫ম বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে মন্ট্রিয়লের ঐতিহ্যবাহী বাংলা মেলা। আগামী ২৭ আগস্ট শনিবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কোদ দ্য নেইজ এলাকার জনপ্রিয় কেন্ট পার্কে বসছে এবারের মেলা। মন্ট্রিয়ল বাংলা মেলার অন্যতম প্রবর্তক এবং সংগঠক সোহেল মিয়া জানান, ২০০৮, ২০০৯, ২০১১ এবং ২০১২ সালের পর দীর্ঘ ১০ বছর পর ৫ম বাংলা মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ মেলায় অতীতের মতোই হরেক রকম দেশীয় স্টলের পাশাপাশি থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যার প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশ থেকে আসা আধুনিক গানের প্রখ্যাত শিল্পী শুভ্র দেব। এছাড়াও গান পরিবেশন করবেন কানাডার অন্যান্য শহর থেকে আসা নামী শিল্পীবৃন্দ। সেলিনা আক্তার চুমকী, দীপ্তি জাহান, ডালিয়া ইয়াসমিন। এছাড়া রয়েছে আরো অনেক চমক। বাংলা মেলাটি উপস্থাপনা করবেন ফরহাদ টিটো। মুমিনুল চৌধুরী এবং সেবুল মিয়ার সৌজন্যে থাকছে আকর্ষণীয় র্যাফল ড্র। পুরষ্কার হিসেবে থাকবে টিভি, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট। ঐতিহ্যবাহী এ বাংলা মেলার গর্বিত স্পন্সর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে থ্রী আমিগো, হুরপরি মেলা, অটো ম্যারি এ্যান, উদ্দিন মিষ্টি, মমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, ফ্লাই অন ট্রাভেলস, মুহিবুর রহমান বাবু, রিনিউ সিস্টেম, বোয়ান্ডারি হাম। মিডিয়া সহযোগী দায়িত্ব পালন করছে সাপ্তাহিক ভোরের আলো, এন আর বি টিভি, সিবিএনএ।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বাংলা মেলা উপভোগ করেন কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
গ্রীষ্মের এই আনন্দ দিনে সবার জন্য উন্মুক্ত, প্রবেশমূল্যবিহীন এই আয়োজনে সবার উপস্থিতি কামনা করছেন বিএসসিএফ কর্তৃপক্ষ।
সবশেষে বলা যায় মেলা বাংলাদেশের লৌকিক ও জনপ্রিয় উৎসব। এদেশে মেলার উৎপত্তি হয়েছে মূলত গ্রাম-সংস্কৃতি হতে। তবে কবে, কীভাবে এদেশে মেলার উৎপত্তি হয়েছে তা সঠিক করে বলার উপায় নেই। গবেষকদের মতে বাংলায় নানা ধরণের ধর্মীয় কৃত্যানুষ্ঠান ও উৎসবের সূত্র ধরেই মেলার উৎপত্তি হয়েছে। সেদিক দিয়ে এদেশের মেলার প্রাচীনত্ব হাজার বছরেরও অধিক পুরানো। তাই প্রবাসী বাংলাদেশীরা স্মৃতিজাগানিয়া শৈশবকে ফিরে পেতে এবং এ দেশে জন্ম ও বেড়ে উঠা সন্তানদের নিজেদের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করতে বাংলা মেলায় অংশ নেন। প্রত্যাশা রইলো জমজমাট ৫ম বাংলা মেলা উপভোগ করার।