সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান রুবেল
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশফাক চৌধুরী প্রায় দুই যুগ ধরে মন্ট্রিয়লে বাস করেন। তাঁর শিল্পচর্চার মধ্যে আবৃত্তি, উপস্থাপনা, সংবাদপাঠ, রেডিও নাটক উল্লেখযোগ্য। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত উপস্থাপক হিসেবে যোগ দেন। উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে তিনি বিবিসি বাংলা সার্ভিসের ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব, ২০০১ সালে লন্ডনে বাংলাদেশ সেন্টার আয়োজিত পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন আয়োজিত ‘ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর’ উদ্বোধনকালে তিনি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। গণ প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার এর বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও কানাডার Québec সরকারের আয়োজনে Fête de voisins এবং CSDM আয়োজিত জাতীয় অনুষ্ঠান গুলোতে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ শীর্ষক কবিতার প্রথম এলবাম বাজারে আসে। ভোরের আলো’র মন্ট্রিয়ল ব্যুরোর মুখোমুখি হন এ গুণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
প্রশ্ন : কেমন আছেন ?
উত্তর : কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর, কখনো বৃষ্টি! এইতো চলছে আমাদের জীবন আর যাপন। অনেকদিন পর প্রিন্ট মিডিয়ার সামনে মুখোমুখি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে রুবেল। আপনার আমন্ত্রণে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে ভালো লাগছে। প্রিয় বাংলা ভাষায় প্রবাসী জনপ্রিয় পত্রিকা ভোরের আলোয় আজকের আড্ডা দারুণ জমবে মনে হচ্ছে তাই নয় কি ?
প্রশ্ন : সত্যিই বলছেন। প্রথম প্রশ্নে আসি। আশি-নব্বই দশক আর এখনকার উপস্থাপনা নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই।
উত্তর : আশি-নব্বই দশকের উপস্থাপনা আর এখনকার উপস্থাপনা বলতে পারেন আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা তো টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং টেকনোলজি। আগের যুগে মঞ্চে উপস্থিত দর্শকদের সামনেই আমরা উপস্থাপনা শুরু করতাম, ‘হ্যালো মাইক্রো ফোন টেস্টিং ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর’ ইত্যাদি নিয়ে। প্রায় অনুষ্ঠানের শুরু ছিল মাইক্রোফোন টেস্টের আওয়াজ দিয়ে। তারপর আমরা সালাম-আদাব দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতাম, কিন্তু মনে পড়ে প্রতিটি সেকেন্ড ছিল কতো শক্তিশালী, রুচির ভান্ডার আর প্রাণবন্ত।
প্রতিটি হলে বা মিলয়নায়তনে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল এবং সেটিই ছিল উপস্থাপনার মূল চালিকা শক্তি। ছিলো না কোনো কম্পিউটার কম্পোজিশন বা আলোকরশ্মির ঝলমলে খেলা। হলের আলোক বাতি নিভে গেলে মঞ্চ থেকে যেটা দেখতে পেতাম শত শত ছোট্ট ছোট্ট আলোক বিন্দু। সেটা হলো, দর্শকদের মুখের চোখের আলোর আর আনন্দের ঝিলিক! কারো হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, ছিল না কোনো বিধিনিষেধ। ধূমপান বিষপান মানুষ জানতোই না। সেকেন্ডহ্যান্ড ধূমপান তো মানুষ জানতোই না।
আর ছিল দর্শকদের উৎসাহ আর উচ্ছ্বাস, হাততালি আর ‘ওয়ান্স মোর! ওয়ান্স মোর!’ স্লোগান! আগের দিনের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে আপামর জনসাধারণের একমাত্র সংযোগ ছিল রেডিও বা বেতার- যা ছিল ‘সবে ধন নীলমনি’! আর বেতার মাধ্যমের উপস্থাপকরা ছিল বিপুল জনপ্রিয়! একেকজন সেলিব্রিটি তারকা! হোক না সে রেডিও বাংলাদেশের বা বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা বা আকাশবাণী অথবা ডয়েচে ভেলে। তুমুল জনপ্রিয়তার সাথে বসবাস ছিল রেডিও উপস্থাপকদের।
আমার মনে আছে, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের সময়, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শেষ সময়ে হরতালের পর হরতালে যখন সবকিছু ভাঙচুর করছে জনগণ, হঠাৎ রাস্তা-পথে যখন রেডিও বাংলাদেশের লোগো সমৃদ্ধ গাড়ি নিয়ে আমরা চলাচল করতাম, তখন গাড়িতে একটা আঁচড়ও দিতো না কেউ, ভিতরে আমরা শিল্পীরা বসে আছি, জনমানুষের বিশাল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পেতাম।
বৃহত্তর সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আসাম ত্রিপুরাসহ গ্রাম বাংলার বৃহৎ এক জনগোষ্ঠীর শ্রোতা বন্ধুরা ছিল আমাদের প্রেরণার মূল উৎস। বেতার স্টুডিও বা সীমানার ভিতরে জনসাধারণের অনুমতি ছাড়া প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকতো। অনেক দূর অঞ্চল থেকে শ্রোতা-বন্ধুরা আসতো আমাদের দেখতে ও কেউ কেউ অনুমতি নিয়ে ভিতরে আমাদেরকে দেখতে আসতো, আমাদেরকে স্পর্শ করতো, আমাদের কণ্ঠস্বর পরখ করে মিলিয়ে দেখতো ইথারে ভেসে আসা কণ্ঠের সাথে মিলে কিনা! ওরা ছিল আমাদের গ্রাম-বাংলার অতি সাধারণ শ্রোতা বন্ধু।
আমরা যারা পেশাদার উপস্থাপনা করতাম, সেইই জোস ছিল তখনকার দিনগুলো! সম্মান, খ্যাতি আর দর্শক শ্রোতাদের উপচেপড়া ভালোবাসায় আমরা ছিলাম আপ্লুত! আহা! উপস্থাপনা শেষ করে কি অন্তরের প্রশান্তি বা আত্মতৃপ্তি নিয়েই না বাড়ি ফেরা হতো!
পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন ফিরে আর আসবে কি কখনও! আর এখনকার উপস্থাপনা বলুন, আর অনুষ্ঠান বলুন সবকিছুতেই যে বিষয়টার প্রকোপ বেশি সেটা হল ফাঁকিবাজি আর মেকি ভাব। শুধুই স্বার্থের চিন্তা বা বাণিজ্যিক ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন। সেই প্রাণবন্ত দেশি আমেজ কোথায় হারিয়ে গেছে!
প্রশ্ন : উপস্থাপনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করেন?
উত্তর : উপস্থাপনা বা হোস্টিং এখনকার মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে বিশ্বব্যাপী একটা বৃহৎ শিল্প। আমার কাছে উপস্থাপনা হলো, সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো তথ্য বা অনুভূতির প্রকাশ। এই তথ্য বা ভাবনা নানান রকম হতে পারে এবং তা একটি ধারানুক্রমের নিয়ম মেনে সম্পাদিত হয়। উপস্থাপনা মৌখিক হতে পারে আবার দর্শকদের সামনেই হতে পারে। উপস্থাপনা হতে পারে শোনা বা দেখার বিষয় কিন্তু বেতার মাধ্যমে শুধুই শোনার। আর মঞ্চ উপস্থাপনা দর্শকদের সামনেই সরাসরি যোগাযোগ। মঞ্চে উপস্থিত দর্শকদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক উপভোগ করা যায়। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমার কাছে উপভোগ্য স্থান হলো মঞ্চ থেকে উপস্থাপনা এবং লাইভ অনুষ্ঠান সেটা বেতার কেন্দ্র থেকে হোক বা টিভি চ্যানেলের হোক।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে এ সময়ের উপস্থাপনা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? উপস্থাপনায় বাংলা-ইংরেজি মিশ্রণকে আপনি কিভাবে দেখেন ?
উত্তর : বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এখনকার অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা জগতে যারা আছেন এক কথায় বলতে গেলে তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। প্রতিনিয়ত তারা দর্শক শ্রোতাদের ফাঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন, আর নিজেরা নিজেদেরকেই সস্তা করে তুলছেন। কেন বলছি ? চারপাশে আধুনিক টেকনোলজির ছড়াছড়ি, উন্নত কারিগরি কম্পিউটার সিস্টেম রয়েছে, সেটা কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। টিভি চ্যানেলে তাদের উদ্ভট অতি সাজ ও অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলা দেখলে পালিয়ে বেড়াতে হয়। অনুধাবন করুন, কথায় কথায় বাংলার সঙ্গে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার, ‘না ঘরকা, না ঘাটকা।’ কিছু ইংরেজি শব্দের বাংলা মিশ্রিত হতেই পারে, তাই বলে কথায় কথায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার শ্রুতিকটু বটে। হয় পুরো ইংরেজিতে বলবো না হয় বাংলায়।
কোথায় হারিয়ে গেছে আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতি! কোথায় সেই বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর! দিগন্ত বিস্তৃত ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়া দর্শক শ্রোতাদের প্রতি আহ্বান! কোথায় সেই সুন্দর বাচনভঙ্গি! কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই কণ্ঠস্বর, সেই সুমিষ্ট উপস্থাপনা।
প্রশ্ন : একজন উপস্থাপকের কি ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় ?
উত্তর : এটা নির্ভর করছে কোথায় একজন উপস্থাপক উপস্থাপনা করছেন। রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সব জায়গায়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা, তা হলো উপস্থিত জ্ঞান। উপস্থিত জ্ঞান দ্বারা আপনি উপস্থাপনায় ঘটে যাওয়া যেকোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সহজেই আয়ত্তে আনতে পারবেন। উদাহরণ, গেল মার্চ মাসে অস্কার অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছিলেন কমেডিয়ান ক্রিস রক। উনি অভিনেতা উইল স্মিথের স্ত্রীকে নিয়ে হাস্য-কৌতুক করছিলেন, হঠাৎ উইল স্মিথ মঞ্চে এসে উপস্থাপনারত ক্রিস রককে কষে চর মারলেন। পুরো বিশ্বের দর্শক শ্রোতা পুরো দৃশ্য সরাসরি দেখলো, দেখে হতবাক। এবং সবাই দেখলেন কিভাবে ক্রিস রক, চর হজম করার পরও পুরো ঘটনাটি সামাল দিয়ে বাকি অনুষ্ঠান সফলভাবে সমাপ্তি করলেন। কাজেই একজন উপস্থাপকের উপস্থিত জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপস্থিত জ্ঞান দ্বারা উপস্থাপনার সময় ঘটে যাওয়া যেকোনো চ্যালেঞ্জ সহজেই এড়ানো যায়। আমার মনে পড়ে, আমার উপস্থাপনা জীবনে মঞ্চে এবং রেডিওতে কতো যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সহজেই খালাস ও নিয়ন্ত্রণ করেছি আমার উপস্থিত জ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান দ্বারা! সাধারণ জ্ঞান নামে সাধারণ হলেও অনেক সময় উপস্থাপনার ক্ষেত্রে অসাধারণ ফলাফল নিয়ে আসে।
প্রশ্ন : অতিথি সম্পর্কে জানাশোনা, তার সম্পর্কে গবেষণা করা কতটা জরুরি ? আজকাল তো দেখা যায়, সঞ্চালক অনুষ্ঠান শুরুর আগপর্যন্ত জাননেই না অতিথি কে ?
উত্তর : যেকোন অনুষ্ঠান শুরুর আগে উপস্থাপকদের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা জরুরি। সত্যিই তাই, আজকাল তো পূর্ব প্রস্তুতি দূরে থাক, উপস্থাপক জানেনই না অনুষ্ঠানে কি থাকছে বা অতিথি সম্বন্ধে। মনে রাখবেন, একজন দক্ষ ও ভালো উপস্থাপকের কারণে, একটি নিম্নমানের বা হালকা অনুষ্ঠান জনপ্রিয় ও বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়ে আনতে পারে, প্রাণবন্ত হতে পারে এবং বাজে আয়োজন ও সফলতা লাভ করতে পারে শুধুমাত্র একজন দক্ষ উপস্থাপকের কল্যাণে। ঠিক তেমনি ভালো অনুষ্ঠানের ভরাডুবি হতে পারে বাজে উপস্থাপনার কারণে।
প্রশ্ন : সঞ্চালক হতে কোন কোন বিষয়ের দিকে জোর দিতে হবে ?
উত্তর : সেই আশি-নব্বই দশকের দিকে যেহেতু রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এই দুটি বিনোদন কেন্দ্র ছিল মানুষের প্রধান বিনোদনের মাধ্যম তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার, উপস্থাপক-উপস্থাপিকাদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং বা কর্মশালার আয়োজন করতো প্রায়ই। সেই সময়ে আমরা সবাই, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট- নিমকো থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেই সময় উপস্থাপনার আলাদা একটা আসন ছিল। সেই সময়ের পুরুষদের ভরাট কণ্ঠস্বর আর মেয়েদের প্রাণবন্ত মিষ্টি কণ্ঠস্বর শোনার জন্য মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতো। কাজেই ভালো উপস্থাপনা বা উপস্থাপক হতে হলে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি, শুদ্ধ উচ্চারণ, উচ্চারণের স্পষ্টতা, কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা, ছন্দ, গতি, অঙ্গভঙ্গি, উপস্থিত জ্ঞান, যে বিষয়ে উপস্থাপনা করবেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা, নিজের পোশাক, হাঁটা-চলা, কথা বলা সবকিছুতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আছে কি না তা পরখ করা এবং ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারলে নিশ্চয়ই যে কেউ একজন দক্ষ ও জনপ্রিয় উপস্থাপক হতে পারবে।
প্রশ্ন : এসময়ের কার কার উপস্থাপনা বা সঞ্চালনা আপনার ভালো লাগে ? বাংলাদেশের মিডিয়ায় আপনার প্রিয় উপস্থাপক কে কে ?
উত্তর : সত্যি বলতে কি, সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী, সুন্দর বাচনভঙ্গিতে অভ্যস্ত, শুদ্ধ উচ্চারণ, সৌন্দর্যের প্রয়োগ ও সংযোজন এবং সুন্দর করে কথা বলার অধিকারী উপস্থাপক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মিডিয়াতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। শুনতে খারাপ লাগলেও অপ্রিয় সত্যি কথাটা আজ বললাম। সত্যিই এই মুহূর্তে কে আছেন বলেন তো ? খুঁজে পাবেন না ও মিডিয়ার অন্য সব শাখাতে বেশ এগিয়ে গেলেও উপস্থাপনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। প্রয়াত ফজলে লোহানি ও আনিসুল হকের মতো উপস্থাপক আর কি ফিরে এসেছে কখনো বাংলাদেশের মিডিয়াতে ? কিংবা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ অথবা মোস্তাফা জামান আব্বাসী ?
সেই একই বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়ার উপস্থাপনা মাধ্যম। আর যে দুজন উপস্থাপকের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ঢুকেছে আমার মন ও মননে, যাদের উপস্থাপনা দেখে বড় হয়েছি, অনেক শিখেছি, তারা হলেন প্রয়াত ফজলে লোহানি ও আনিসুল হক।
প্রশ্ন : যারা এখন কাজ করছেন বা ভবিষ্যতে করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ ?
উত্তর : একটাই অনুরোধ, উপস্থাপনা মিডিয়াতে আসার আগে সবার আগে শিখতে হবে সুন্দর করে কথা বলা বা সুন্দর বাচনভঙ্গিতে অভ্যস্ত হওয়া, শুদ্ধ উচ্চারণ, অঙ্গভঙ্গিতে পারদর্শী, কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা, আবেগ, গতি, ছন্দ, সাধারণ জ্ঞান এবং উপস্থিত জ্ঞান এসব নিয়ে তৈরি করুন নিজেকে। নিশ্চয়ই আপনি হয়ে উঠবেন দক্ষ এবং একজন সফল উপস্থাপক। একদিন, শ্রোতা ও দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবেন আপনি।
প্রশ্ন : এখন তো সঞ্চালন করা বা উপস্থাপনা করা ভালো পেশা। আপনাদের সময় কেমন ছিল ?
উত্তর : শিল্পকলার অন্যান্য মাধ্যমের মতো উপস্থাপনাও একটা শিল্প। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো উপস্থাপনাকে একেবারেই পেশাদার দৃষ্টিতে দেখা উচিত। বিদেশে পেশাদার উপস্থাপকরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেন। আর বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশই বিনে পয়সায় উপস্থাপনা করেন। আমি বাংলাদেশ বেতার মাধ্যমে নিয়মিত পেশাদার উপস্থাপক, ঘোষক হিসেবেই জয়েন করেছিলাম সেই পঁয়ত্রিশ বছর আগেই। এছাড়া সেই সময় রেডিও বিজ্ঞাপন করেও আমরা সম্মানি পেতাম। প্রচুর বিজ্ঞাপন থেকে বেতারকেন্দ্রগুলো প্রচুর আয় করতো। বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপন তরঙ্গ ছিল বিপুল জনপ্রিয়। স্রোতের মতো শ্রোতারা কান পেতে রাখতো কখন ইথারে ভেসে আসবে প্রিয় অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপন তরঙ্গ!
আমার রেডিও জীবনের বেশিরভাগই বিজ্ঞাপন তরঙ্গ করা হতো। সেই সময়, আমার এখনো মনে আছে রুবেল, আপনাদেরই পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘রাজ্জাক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর বিজ্ঞাপন, সিলেট বেতারের ‘বিজ্ঞাপন তরঙ্গ’ অনুষ্ঠান জুড়ে থাকতো প্রায়ই।
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বিজ্ঞাপন আপনাদের কোম্পানির ‘মুনাক্কা বনলতা কেশ তেল’ ছিল খুবই জনপ্রিয়। ‘খই গ খই গেলায়’ জিঙ্গলটিতে আমার কণ্ঠ ছিল এবং কাকতালীয়ভাবে আজ আপনি আমার সামনে। সেই সময় বোধ হয় আপনি নিজে ছোট্ট শিশু ছিলেন তাই না ? (হাসি) আর আমি যখন সেই চার-পাঁচ বছরের শিশু তখন আমার মা-ই প্রথম আমাকে রেডিও বাংলাদেশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
সপ্তাহের প্রতিটি রবিবারের জন্য প্রতীক্ষা করতাম। ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের জন্য অনুষ্ঠান। ‘কিশোলয়’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য। ছড়া, কবিতায় হারিয়ে যেতাম আমরা শিশুরা। মনে পড়ে বিশাল আকৃতির এক মানুষ আমাদের নাক মুখে ওর নোংরা পঁচা গন্ধ মাখা হাত চেপে ধরে রেডিও স্টুডিওর মাইক্রোফোনের সামনে নিয়ে বসাতো, তারপর ছড়া কবিতা শেষ হলে আবার নাক মুখ চেপে ধরে আমাদেরকে একটু দূরে সরিয়ে রাখতো যাতে আমাদের অপ্রাসঙ্গিক শব্দ রেডিওতে কেউ শুনতে পায় না। মন খারাপের কৈশোরের বিকেল বেলাগুলো যখন শুধু শূন্যতায় পরিপূর্ণ ছিল, কাশফুল, বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশ যখন আমার বিকেলকে আরো বিষণ্ণ করে তুলতো। আমার সদ্য কৈশোর পার করা বিষণ্ণ মন যখন আরো বিষণ্ণ লাগতো, ঠিক সেই সময়েই আমার বাবা আমাকে, ছোট্টবোন মুন্নি আর আমাদের বড় ভাবিকে; আমাদের তিন জনের জন্যে রেখে দিলেন একজন গানের গৃহশিক্ষক! পঁচাশি সালের কথা। সেই সময় সিলেটের মতো একটি রক্ষণশীল শহরে, মুসলিম পরিবারের বড় বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে শিক্ষকের কাছে গান ও সঙ্গীতের তালিম নিচ্ছেন, সাথে আমরাও। সেটা ছিল ঠিক যেনো ‘শিকল ভাঙার আওয়াজ’। তো আমাদের গানের শিক্ষক থাকতেন সিলেটের আম্বরখানা কলোনিতে, ষাটোর্ধ্ব মহিলা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের। মিষ্টি কণ্ঠস্বর, দারুণ শুদ্ধ সুন্দর করে কথা বলতেন। সুন্দর কথা বলা যে একটা শিল্প সেটা তখনই আবিষ্কার করলাম। উনাকে আমরা দাদু সম্বোধন করতাম। সহজে গান দিতে চাইতেন না। যদিও হারমোনিয়ামের রিডের সাথে পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকেই। ১৯৭৭ সালের দিকে, মেজো আপা ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদের কাছে গান শিখতেন। তো দাদুর দেয়া প্রথম গান ‘পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়, খুলে দাও প্রিয়া, খুলে দাও বাঁধন’। এই গানটা ছিল আমার জীবনের হারমোনিয়াম নিয়ে প্রথম গান এবং প্রথম মঞ্চ পরিবেশনা। সেই থেকে পালিয়ে গেলো আমার মঞ্চ ভীতি, পালিয়ে গেলো আমার মনখারাপের বিকেল বেলা। রাগ-রাগিনী, সারগম, শুদ্ধ উচ্চারণ আর সুরের ইন্দ্রনীলের সৌন্দর্যের জগতে যেনো আমি সেই থেকেই হারিয়ে গেলাম!
আমার উপস্থাপনা জগতে প্রথম আমি দর্শকদের সামনে উপস্থাপনা করি সিলেট নজরুল একাডেমীর মঞ্চে ১৯৮৭-৮৮ সালে। সিলেট নজরুল একাডেমী আমরা কয়েকজন বন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতিষ্ঠান। আমরা এর প্রতিষ্ঠাতা। এর প্রতিটি ইটের গাঁথুনিতে, ভবনের চারপাশের সিমেন্টের পলেস্তারা আমাদের কথা বলবে। ঠিক সেই সময়েই আমি উপস্থাপনায় বাংলাদেশ বেতার সিলেটে নিয়মিত উপস্থাপক হিসেবে যোগদান করি।
গণপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ছাড়াও দেশে-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছে।
প্রশ্ন : উপস্থাপনার কোন মাধ্যমে আপনি আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ?
উত্তর : উপস্থাপনার মূল তিনটি মাধ্যম হল রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চ । তিনটি মাধ্যমের স্বাদ তিন রকম। আমি যেহেতু রেডিও পরিবার থেকে উঠে এসেছি তাই বেশিরভাগ সময় কাজ করেছি রেডিওতে। রেডিও পরিবার বললাম এ কারণে যে, রেডিওতে যারা পেশাদার উপস্থাপনার সাথে জড়িত, সবাই ছিলাম পরিবারের মতো। একে অন্যের সাথে নির্মল ভালোবাসার সম্পর্কের মিলন মেলা ছিল রেডিও স্টুডিও বা বেতার স্টেশন। বিশে^র সকল রেডিও পারফরমার একই কথা বলবে। তো রেডিও থেকেও অনেক সময় সরাসরি দর্শকদের সামনে মঞ্চে উপস্থাপনা করতে হতো। আমার প্রিয় মাধ্যম মঞ্চ উপস্থাপনা। স্টাইল আর স্ট্যান্ডার্ড মডেল হয়ে দর্শকদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় হারিয়ে যাওয়া সে কি ভোলা যায়! স্তরে স্তরে উত্তেজনা ছড়িয়ে থাকে মঞ্চ উপস্থাপনায়। দর্শকদের সামনেই সরাসরি আপনার পারফরমেন্স। ভালো হলে সাথে সাথে করতালি, আনন্দের বহিঃপ্রকাশ অথবা দর্শকদের উৎসাহে ভাটা, সবিস্তারে উপভোগ্য স্থান হলো মঞ্চ। ফাঁকিবাজি করার কোনো উপায় নেই।
প্রশ্ন : এখন উত্তর আমেরিকায় বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতির কি অবস্থা ?
উত্তর : আমি কানাডায় এসেছি ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে। যেহেতু বাংলাদেশের মিডিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরেই ছিলাম তাই এখানে আসার পরপরই সবাই আমার সাথে যোগাযোগ শুরু করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার জন্য। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, বেশ ভালো কিছু সঙ্গীতশিল্পী এবং শিল্পের অন্যান্য শাখায় পারফরমেন্স করার প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছেন মন্ট্রিয়াল শহরে। এটা ছিল আমার জন্য মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। যেমন প্রয়াত মাসুদ আলী খান উনার মেয়ে তুলি, তৃপ্তি দাস, নাহিদ চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, তাসনীয়া মাহবুব, ডরিন মলি গোমেজ, নিরোজ বড়–য়া, শফিউল ইসলাম, আবু বকর ওসিদ্দিকী, শর্মিলা ধর, প্রয়াত লিজা আলম প্রমুখ এবং যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত মাহফুজ জামান বাবলু, বিশিষ্ট নৃত্য শিক্ষক বিপ্লব কর। আরো কিছুদিন পর পেলাম সোমা, মণিকা, দেবপ্রিয়া, মৃণাল পিংকু, মেহেদী হাসান লিমন সহ আরো অনেককে। এছাড়া আরও পেয়েছিলাম একঝাঁক ঝলমলে শিশুশিল্পী রূপম, রাখি, ক্যান্ডি, শিবলি নাহার, পূর্ণা, ঋক ভট্টাচার্যসহ আরো অনেককে। ওরা সকলেই সত্যি প্রতিভাবান ছিল। জানি না এখন কে কোথায় কি করছে। ওদের সবাইকে নিয়ে তখন অনুষ্ঠান আয়োজন ও উপস্থাপনা সত্যি উপভোগ্য ছিল। তবে আরেকটা কথা না বললেই নয়, এই শহরে বাংলাদেশের অনুষ্ঠানে আমার একটি প্রয়াস বা স্টাইল এখনো উঁকি দেয় মনে, এই শহরে প্রথমেই যেটা শুরু করলাম প্রতিটি অনুষ্ঠানের মাঝে ছড়িয়ে দিলাম কবিতা আবৃত্তি। প্রায় সব অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা মাঝে আমি আবৃত্তি করতাম। দেখলাম দর্শকদের ভালো লাগলো, পরে ধুমধারাক্কা অনুষ্ঠানে আবৃত্তি সংযোজন করলাম, দেখলাম দর্শকদের সাড়া, সব অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ফাঁকে ফাঁকে আবৃত্তি তারা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করলো। যেটা প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার জন্য সত্যিই জরুরি। স্থানীয় এই শিল্পীদের নিয়ে এবং ঢাকা ও কলকাতার শিল্পী সকলকে নিয়ে আমাকে প্রায়ই উপস্থাপনার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হতো এবং আমি তখন নিয়মিত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম। মনের আনন্দে ভেসে বেড়াতাম। ফেরারী পাখির মতো কুলায় ফেরত যেতে ইচ্ছে করতো না। প্রবাসী নতুন প্রজন্মের সন্তানেরাও প্রতিটি অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসতো এবং আমি তা দারুণ উপভোগ করতাম। মোটকথা মন্ট্রিয়াল ছিল উত্তর আমেরিকার বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতির তীর্থ স্থান। প্রতিটি অনুষ্ঠান আয়োজন ছিল প্রাণবন্ত ও স্ট্যান্ডার্ড। মুক্তমনা পরিবেশের সাথে মুক্ত পাখির মতো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা নিয়ে আমি ছিলাম দারুণ তৃপ্ত। আর এখন সবকিছুতেই যেনো অস্থিরতা বিরাজ করছে। করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে পৃথিবীর তাবৎ কার্যক্রমসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোও থমকে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মনে হয় আগের সেই মান বা স্ট্যান্ডার্ড ফিরিয়ে আনা জরুরি। শুধু শুধু কৃত্রিম বা অপছন্দের লোকদেখানো অনুষ্ঠান আয়োজন করে কি লাভ সংস্কৃতির!
প্রশ্ন : আপনাকে এখন মিডিয়াতে দেখা যায় না কেন ?
উত্তর : শিল্পের সৌন্দর্য এবং সৌন্দর্যের জগতের বাসিন্দা যারা একবার হয়েছেন তাদের জন্য মঞ্চ, উপস্থাপনা, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, লাইট এবং সর্বোপরি দর্শক শ্রোতাদের ভালোবাসা বিসর্জন দেয়া যে কি কঠিন কাজ সেটা নাইবা বললাম। এক নিমেষে সকল অর্জন চুরমার করে দিতে কে চায়! তবে আমার ক্ষেত্রে আমি নিজেই নিজেকে আবৃত করেছি অন্য অনেক কাজের মাঝে। নতুনদের জন্য স্থান দেখিয়ে দেয়া বা ছেড়ে দেয়া সবচেয়ে জরুরি। আমাদের সবার অনেক কিছুই এবং অনেক কাজ এখনো করার বাকি। জীবনের রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা অন্তত করা জরুরি সবার, নিজেকে জানুন। আমাদের জীবন অনেক ছোট। নিজেকে আবৃত করুন নব পল্লবে। নব উদ্দেশ্যে, নব উদ্যোগে। জীবদ্দশায় একই কাজে লেগে থাকা বা একই কাজে সারা জীবন যাপন করা বোরিং আর বোকামিও বৈকি!
প্রশ্ন : আপনাকে আবার কি দেখা যাবে মাইক্রোফোন হাতে ?
উত্তর : সেই কৈশোরের মন খারাপের বিষণ্ণবিকেল বেলাগুলো আমার কাটতো, রোদ্দুরের কথা ভাবতে ভাবতে। ঠিক অমল কান্তির মতো, আমিও একদিন ‘সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! সেই কাক-ডাকা বিকেলের মতো লাজুক রোদ্দুর’! এখনো অনেকেই উঁকি দিয়ে যান আমার জানালার পাশে, বলেন আসেন না আবারো অনুষ্ঠানে, এই শহরের গ্রীষ্মের, শীতের, বসন্তের, জুম, ইন্টারনেট, রিমোটসহ হাজারো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার মাঝে। অনুরোধে অনুরোধে ভরিয়ে তোলেন। সবাইকে আমার হৃদয়ের গভীর থেকে গভীর ভালোবাসা জানাই। সবাইকে একটা কথাই বলি, ‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না/ ফেরারী পাখিরা কুলায় ফেরে না’। কিংবা হয়তো বা আবারো,
‘কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;’
প্রশ্ন : ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে সময় দেয়ার জন্য। আপনার আরো অনেক কথা শোনার জন্য বারবার বসতে চাই আপনার সাথে।
উত্তর : আপনাকেও ধন্যবাদ। আমরা আবারও বসবো, গল্প করবো, আড্ডা দিবো।