দীন ইসলাম: ক্যারিশম্যাটিক ডলি বেগম। পরোপরকারি। নিরহঙ্কারি। কাজ ও হাসি দিয়ে মন জয় করেছেন সবার। বাঙ্গালি কমিউনিটির সুখ-দুঃখের সাথী। কমিউনিটির মুরব্বিরা তার ফ্যান। মধ্যবয়সীরা তাঁর কাজের পূজারি। তরুণ-তরুণীদের আইডল। ২০১৮ সালে প্রাদেশিক এমপি নির্বাচিত হয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকা স্কারবো সাউথওয়েস্ট চষে বেরিয়েছেন। সব ভাল কাজে তার বিচরন ছিল চোখে পড়ার মতো। সশরীরে বা ভার্চুয়ালি দুইভাবেই ছিলেন সরব। প্রাদেশিক সরকারের এমপি হয়েও দাম্ভিকতা ছিল না। নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের সেবা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এতসব ক্যারিশমার ণ্ডনে এবারও কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের স্কারবো সাউথওয়েস্ট আসন থেকে এমপি প্রার্খী হয়েছেন ডলি বেগম। সবাই তাকে বেশ সাপোর্ট দিচ্ছেন। ডলি বেগমকে নিয়ে বাঙ্গালি কমিউনিটির প্রবীন সদস্যদের মন্তব্য, ডলি বাঙ্গালি কমিউনিটির মুখ উজ্জল করেছে। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। আমাদের উচিত ডলি বেগমকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত করা। এদিকে সর্বশেষ প্রকাশিত জরিপে এগিয়ে ওন্টারিও প্রদেশের বর্তমান প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ডের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ (পিসি) পার্টি। তবে ফেডারেল সরকারের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তার রেটিং দিন দিন বাড়ছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ন্যানো রিসার্চ সার্ভে অনুযায়ি, ডাগ ফোর্ডের নেতৃত্বে পিসি ২৯ পয়েন্ট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ২৪ দশমিক ১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন স্টিভেন ডেল ডুকার নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি। এরপরই ২০ দশমিক ৩ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমান ওন্টারিও প্রদেশের বিরোধী দল এনডিপি এবং চার পয়েন্ট নিয়ে সর্বশেষ অবস্থানে আছে গ্রিন পার্টি। সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ি, নির্বাচনী প্রচারনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পযন্ত সাত পয়েন্ট গেইন করেছেন লিবারেল পার্টির ডেল ডুকা। তবে কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা এক পয়েন্ট কমেছে। এদিকে জরিপে বৃহত্তর টরন্টোতে হা্ড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাষ মিলেছে। বৃহত্তর টরন্টোতে লিবারেল পার্টি ৩৫ দশমিক ২, কনজারভেটিভ পার্টি ৩৫ পয়েন্ট। তাই বৃহত্তর টরন্টোতে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে লিবারেল। তবে ওন্টারিও প্রদেশের অন্য এলাকাণ্ডলোতে কনজারভেটিভ পার্টি বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। বৃহত্তর টরন্টোর বাইরে কনজারভেটি ৩৫ দশমিক ৯, লিবারেল ২৪ দশমিক ৬ এবং এনডিপি ২৮ দশমিক ৯ পয়েন্ট নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করছে। তবে জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি, পুরষ ভোটারদের ভোট বেশি পাবে কনজারভেটিভ পার্টি। ৪০ দশমিক ৯ ভাগ পুরুষ ভোটার কনজারভেটিবকে ভোট দেবে। ২৪ দশমিক ২ ভাগ লিবারেল এবং ২২ দশমিক ২ ভাগ পুরুষ ভোটার ভোট দেবে এনডিপিকে। তবে নারী ভোটারদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৫ ভাগ লিবারেল, ২৯ দশমিক ৭ ভাগ লিবারেল এবং ২৫ দশমিক ৩ ভাগ এনডিপিতে দেবে। তাই নারী ভোটারদের বেশি ভোট পাবে লিবারেল।
বাঙ্গালি কমিউনিটির সিনিয়র সদস্য মাহবুবুর রব চৌধুরী, নুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। তারা চান, ডলি বেগম এবারও এমপিপি নির্বাচিত হউক। মাহবুবুর রব চৌধুরী ভোরের আলোকে বলেন, ডলি বেগম আমাদের অহঙ্কার, অলঙ্কার। ২০১৮ তার বিজয়ে আমাদের মুখ উজ্জল হয়েছে। এবারও চাই আমাদের মেয়েটি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হউক। আশা করছি সবাই মেয়েটিকে ভোট দেবেন। নুরুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটির সবার প্রতি ডলি বেগমের মমতা বলে শেষ করা যাবে না। সুখে দুঃখে ডাকলেই তাকে পাওয়া যায়। কানাডাতে আমাদের বাঙ্গালি কমিউনিটিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে কাজ করছে ডলি। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য হলেও ডলিকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রেজাউর রহমান বলেন, ডলির সবচেয়ে বড়ণ্ডণ সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রার্থী। আমাদের প্রার্থী। চার বছর আমাদের কমিউনিটি নিয়ে ডলি যেসব কাজ করেছেন তা এক কথায় অসাধারণ। আসুন সবাই মিলে ডলি বেগমকে পুনরায় নির্বাচিত করার শ্লোগান তুলি। কমিউনিটির সবার প্রশংসা শুনে আনন্দে ভাসতে চান না ডলি বেগম। তিনি ভোরের আলোকে বলেন, আমি নবীন রাজনীতিবিদ। মুরব্বিদের কাছ থেকে প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখছি। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এর আগে ২০১৮ সালে কানাডার অন্টারিও প্রদেশে প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি প্রাদেশিক এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে ১৪ হাজার ১৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি বেগম। এর মাধ্যমে কানাডার ইতিহাসে প্রথম একজন বাঙালি বাংলাদেশি প্রাদেশিক নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় ডলি বেগমের নির্বাচনীর প্রচারণার স্লোগান ছিল, ‘আমাকে নির্বাচিত করুন, আমি আপনাদের আশাহত করব না।’ ডলির নির্বাচনী শ্লোগানের সঙ্গে তাঁর চার বছরের কাজের পুরোপুরি মিল পাওয়া গেছে বলে মনে করেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে ডলির জন্ম বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায়। ১১ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি কানাডায় যান। সঙ্গে ছিল ছোট ভাই। অল্প বয়সে কানাডায় এসে ডলি মুখোমুখি হন কঠিন বাস্তবতার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা পতিত হন মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায়। তার বাবাকে হাসপাতালে কাটাতে হয় অনেক বছর। পিতার স্বপ্ন পূরণ করেছেন ডলি। ২০১২ সালে তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। আর ২০১৫ সালে উন্নয়ন প্রশাসনে মাস্টার্স করেন টরন্টো ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে। পড়ালেখা শেষ করার পর সিটি অব টরন্টোতে প্রায় দশ মাস কাজ করেন। রিচার্স এনালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন দ্য সোসাইটি অব এনার্জি প্রফেশনালসে। স্কারবোর হেলথ কোলিশনের কো-চেয়ার এবং ওয়ার্ডেন উডসস কমিউনিটি সেন্টারের ভাইস-চেয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। ডোই প্রদেশের ওয়াইড হাইড্রো পাবলিক প্রচারাভিযানের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন, যারা সফলভাবে টরন্টো হাইড্রো এবং ওয়াসগা বিতরণের ব্যক্তিগতকরণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।