লিখেছেন শিহাব উদ্দিন
হাইওয়ে ২০ ওয়েস্ট তথা ৪০১ ওয়েস্ট গামী মুভিং ট্রাকের কাফেলা বিগত ৫০ বছর ধরে কুইবেকের পতন এবং অন্টারিওর উত্থানের প্রতীক। ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখে ইংরেজী ভাষাভাষীর দিগন্ত ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে এই আতঙ্কে ৭০ দশক থেকে লক্ষ লক্ষ কুইবেকার প্রদেশ ছেড়ে অন্টারিও’র ক্রমবর্ধমান সিটিগুলিতে চলে যায়।
অবশেষে ২০২১ সালে, প্রায় অর্ধ শতক পর গত বছর প্রথমবারের মতো বিপরীতমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার মতে, অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় অন্টারিও থেকে অধিক সংখ্যক বাসিন্দা কুইবেকে স্থানান্তরিত হয়েছেন। রিমোট ওয়ার্ক এবং সাশ্রয়ী আবাসনের সুবিধা নেয়ার জন্য অন্টারিও’র অফিস কর্মীরা তাদের ল্যাপটপ গুছিয়ে এই প্রভিন্সিয়াল স্থানান্তর করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কিছু কিছু পর্যবেক্ষকের পর্যবেক্ষণ অবশ্য আরো গভীর। তারা মনে করেন অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার দিক দিয়ে (Debt-to-GDP ratio) কুইবেকের প্রতিবেশী ওন্টারিওকে ধরে ফেলা, কুইবেকের জাতীয়তাবাদী আবেগে শৈথিল্য চলে আসা এবং ফরাসি পরিবেশে ইংরেজী ভাষাভাষীদের খাপ খাওয়ানোর প্রবণতা প্রাদেশিক স্থানান্তরের অন্যতম কারণ।
INRS (ইন্সটিটিউট ন্যাশনাল দ্য লা রিশেখস সায়েন্টিফিক) এর নগর ও আঞ্চলিক অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক মারিও পোলেস বলেছেন যে, “অন্টারিওবাসীদের প্রভিন্সিয়াল মাইগ্রেশনের ব্যাপারে প্রকৃতপক্ষে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার মতে, পড়াশুনা শেষে কুইবেকবাসীদের চিরাচরিত প্রদেশ ত্যাগের প্রবণতা বন্ধ হয়েছে এবং মন্ট্রিয়লে চাকরির বাজার এখন অনেক ভাল। দীর্ঘ সময় ধরে এখানে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। তবে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি।”
১৯৭০ সালে কুইবেকের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা যখন কুইবেকের প্রাদেশিক ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিয়েরে লাপোর্তেকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল, তখন একটি ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের আশঙ্কা জেগে উঠেছিল। আর তখনই টরন্টো দ্রুত বিকাশ লাভ করে। তার ঠিক দুই বছর পরে সিএন টাওয়ারের নির্মাণ শুরু হয়।
১৯৭৬ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে কুইবেকের তথাকথিত রাষ্ট্রনায়ক René Lévesque এবং সার্বভৌমত্ববাদী রাজনৈতিক দল ‘পার্টি কুইবেকওয়া (PQ)’ নির্বাচিত হওয়ার পর অন্টারিওর উত্থান শীর্ষে পৌঁছায়। দুই বছর পর পার্টি কুইবেকওয়া এর যুগান্তকারী ভাষা আইন, বিল ১০১ পাস হলে কুইবেক তার প্রতিবেশী অন্টারিওর কাছে ৫০ হাজারের অধিক বাসিন্দাকে হারায়। Sun Life সহ ৯১টি কানাডিয়ান কোম্পানি এবং অসংখ্য আমেরিকান কোম্পানির সহযোগী সংস্থা তাদের কর্পোরেট সদর দফতর কুইবেকের বাইরে সরিয়ে নেয়। এরপর ১৯৮০ এবং ১৯৯৫ সালে কুইবেকের স্বাধীনতার জন্য গণভোটের আয়োজন হলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক কুইবেক ত্যাগ করে ওন্টারিওতে পাড়ি জমায়। ১৯৯৫ এর গণভোটে স্বাধীনতাকামীরা ১.১৬% ভোটে না হারলে অন্যরকম হতো কুইবেক তথা কানাডার ইতিহাস।
৫০ বছর পর টরন্টো থেকে মন্ট্রিয়লগামী পাল্টে যাওয়া পরিসংখ্যান ধরে রাখা কুইবেকের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। অ-ফরাসিভাষী জনগণের বিরুদ্ধে একের পর এক আরোপিত বৈষম্যমূলক নীতি এবং ইংরজেী-বিরোধী অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী সুবিধা অর্জনের নমুনা দেখলে সংশয়ের অনেক অবকাশ থেকে যায়।
লেখক : প্রকৌশলী, রিয়েলটর