আর পাঁচজনের মতো দৃষ্টিময় জগতের বাসিন্দা নন তিনি। জন্ম থেকেই অন্ধ। কিন্তু দৃষ্টিহীন হয়েও প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন অত্যন্ত মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার ও সফল শিল্পপতি হিসাবে। এমনকি মাত্র ৩১ বছর বয়সেই প্রধান নির্বাহী হিসাবে বর্তমানে চার কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৫২ কোটি টাকার সমান) বিশাল এক কোম্পানি সামলাচ্ছেন। তিনি ভারতের অদ্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকান্ত বল্লা।
বিস্ময়কর মেধাবী এই তরুণের জীবনী নিয়ে সিনেমা তৈরি করছে বলিউড। অন্ধ্রপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের অতি দরিদ কৃষক পরিবারে জন্ম শ্রীকান্তের। দৃষ্টিহীন ছেলে কৃষিকাজ পারে না। তাই তাকে গ্রামের স্কুলে পাঠান বাবা-মা। কিন্তু সহপাঠী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে তিনি ছিলেন একেবারেই ‘অনুপযুক্ত’ ও ‘বাতিল’। অবশেষে ৭ বছর বয়সে তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় দৃষ্টিহীনদের জন্য নির্ধারিত এক স্কুলে, যা তার বাড়ি থেকে ২৫০ মাইল দূরে হায়দ্রাবাদ শহরে। এখানে তিনি ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন। শেখেন কম্পিউটার চালনাও। অন্ধ্র শিক্ষা বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সবাইকে চমকে দিয়ে ৯০ শতাংশ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হন শ্রীকান্ত। এত ভালো ফলাফলের পরও একটুও কমেনি শ্রীকান্তের প্রতিকূলতা।
বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাদ সাধল দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। তাকে বলা হলো, শুধু কলা বিভাগেই পড়াশোনা করতে পারবেন তিনি। কিন্তু শ্রীকান্তের স্বপ্ন অন্য কিছু। সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। দীর্ঘ ছয় মাসের আইনি লড়াইয়ে অবশেষে জিতলেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার অনুমতি পান। এবার বোর্ড পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এবার প্রযুক্তিবিদ্যা পড়তে চাইলেন শ্রীকান্ত। এজন্য আইআইটি ও বিআইটিএস’র মতো দেশের প্রথমসারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করলেন। কিন্তু কোনো সুযোগ পাননি। ইন্টারনেটের সাহায্যে আবেদন করেন আমেরিকার বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। যে সুযোগ নিজের দেশ তাকে দিতে পারেনি, সেই সুযোগ তাকে করে দেয় এমআইটি। স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।