যে সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য কিংবা পাঠপরিক্রমা সহজ করার জন্য গবেষণা করতে চান, ড. মীর্জা হাছানুজ্জামান তাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা কৃষিবিজ্ঞানী। কৃষি গবেষণায় অভাবনীয় অবদানে দেশ-বিদেশে সেরা বিজ্ঞানীর পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার সাফল্যের গল্প জানাচ্ছেন- আকাশ বাসফোর
আমেরিকার বিখ্যাত stanford university বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর একটি তালিকা প্রকাশ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি পৃথিবীর শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর একটি র্যাংকিং প্রকাশ করে plos biology জার্নাল। গত ২০ অক্টোবর ইওয়ানিডিসের দলের প্রকাশিত ২০২১ সালের ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৫ জন সেরা ২ শতাংশ গবেষকের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৭ জন স্থান পেয়েছেন।
এই তালিকায় বাংলাদেশ থেকে প্রথম স্থানে আছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মীর্জা হাছানুজ্জামান। তিনি বিশ্বের ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৫ জন সেরা ২ শতাংশ গবেষকের মধ্যে ৮ হাজার ৩৭৪তম। আর প্লান্ট বায়োলজি ক্ষেত্রে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৪ জন সেরা গবেষকের মধ্যে তার অবস্থান ৯৩তম। বিশ্বসেরা ১০০ প্লান্ট বায়োলজিস্টের মধ্যে একজন বাংলাদেশি গবেষক মীর্জা হাসানুজ্জামান।
‘প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি’ ক্যাটাগরিতে তার অসামান্য অবদানের জন্য এই তালিকায় তালিকাভুক্ত হন। পেয়েছেন ইউজিসি স্বর্ণপদক ২০১৮। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক (পিয়ার-রিভিউড) জার্নালে তার রয়েছে দেড় শতাধিক প্রকাশনা। উদ্ভিদের শরীরতত্ত্ব, ফসল উৎপাদন, বন্যা-খরা সহিষ্ণুতার ওপর রয়েছে তার ত্রিশের অধিক বই-অধ্যায়। স্কোপাস ডেটাবেজ অনুযায়ী তার সাইটেশন সংখ্যা বর্তমানে ৯ হাজারের অধিক। জীববিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে দি ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স (twas) ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। বর্তমানে তিনি bangladesh academy of science (bas)-এর নির্বাচিত ফেলো এবং বিশ্বখ্যাত royel society of bangladesh-এর নির্বাচিত ফেলো। ড. হাছানুজ্জামান বলেন, ‘২০০৪ সালে গবেষণার কাজ শুরু করি। ২০০৯ সালে plant stress physiology এর গবেষণায় হাত দিই। ব্যক্তিজীবনে দেশ-বিদেশে অনেক অর্জন রয়েছে। আমি মনে করি, ব্যক্তি অর্জনের চেয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা এবং সঠিক শিক্ষাদান বেশি জরুরি। শিক্ষার্থীদের ভালোমতো গাইডলাইন দিলে তারা এই কৃষি সেক্টর অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। কৃষি গবেষণার জন্য আগ্রহ, পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দরকার। শিক্ষার্থীদের আরও গবেষণামুখী হতে হবে। আমার মূল লক্ষ্য সীমিত সম্পদ ও অর্থ ব্যবহার করে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ভালোমানের গবেষণা করা এবং তা মানবকল্যাণে ব্যবহার করা।’
ড. মীর্জা হাছানুজ্জামান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও institutional quality assurance cell-এর অতিরিক্ত পরিচালক। জাপান সরকারের (মনবুকাগাকশু) বৃত্তি লাভ করে ইউনাইটেড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস, এহিমে ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স কর্তৃক প্রদত্ত পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ লাভ করে পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ গবেষক হিসেবে দ্বিতীয়বার তার পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করার জন্য কমনওয়েলথ ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের এন্ডেভার গবেষণা ফেলোশিপ অর্জন করেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৫টির অধিক পুস্তক সম্পাদনা করেছেন।