রংপুর মেডিকেল কলেজের সুইপারের পদ থেকে অবৈধভাবে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছেন এইচএসসি পাস ফজলুল হক। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছেন প্রায় শত কোটি টাকার মালিক। প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ারে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়সহ আট জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য।
নিজের পছন্দের লোকদের বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের টেন্ডার, ওষুধ, গজ-ব্যান্ডেজ, যন্ত্রপাতি সরবরাহের ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ফজলুল হক নিজের ও পরিবারের নামে রংপুর মহানগরীর আলমনগর ও দর্শনা এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল অট্টালিকা।
শুধু তাই নয়, হয়েছেন কয়েক একর সম্পত্তির মালিক। ফাইয়াজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া দর্শনা বড়বাড়ি এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল গরুর খামার। সেখানে রয়েছে বাগানবাড়ি এবং বিশাল পুকুর।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহায়ক/সুইপার হিসেবে যোগ দেন ফজলুল হক। সে সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক। ২০০৪ সালে হন অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর। ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর স্টোরকিপার, ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পান। নন-মেডিকেল কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী আর কোনো পদোন্নতির সুযোগ না থাকলেও ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানের সচিবের চেয়ারে বসেন চলতি দায়িত্ব পেয়ে। এ সময় কলেজটিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৯ সালের ৩ মার্চ রংপুরের বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসে বদলি হন প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে। সুইপার হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতির সুযোগ না থাকলেও শুধুমাত্র ওপর মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি তার পদোন্নতি করিয়েছেন।
এদিকে, ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক সচিব ফজলুল হকসহ তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করলেও অর্থের বিনিময়ে তা ধামাচাপা দেন ফজলুল হক।
এ ছাড়া গত বছরের ২০ ডিসেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজে টেন্ডার জালিয়াতি করে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান চিঠি দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক সচিব ফজলুল হকসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তলব করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম নুরুন্নবী লাইজু বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতির জন্য যাদের তালিকা করা হয়েছিল সেখানে ফজলুল হকের নাম ছিলো না। কীভাবে তার পদোন্নতি হলো তা রহস্যজনক। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. জাকিরুল ইসলাম লেলিন বলেন, ‘আমার যোগদানের আগেই তাকে বিভাগীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ সিদ্ধান্তে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলুল হক বলেন, ‘পদোন্নতি আমি নিজে নিইনি। বোর্ড আমাকে পদোন্নতি দিয়েছে। পদোন্নতি বোর্ডকেই জিজ্ঞাসা করেন, কীভাবে আমার পদোন্নতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র।’