মন্ত্রিত্ব হারানোর পর ডা. মুরাদ প্রায়ই উন্মাদের মতো আচরণ করতেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান।
কয়েকদিন ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ মানসিক নির্যাতন চালানোর পর বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে যান সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।
হাত তোলার আগেই জরুরি সেবা ৯৯৯ -এ কল করেন তার স্ত্রী। এরপরই মুরাদের ধানমন্ডি ২৮ নম্বরের (পুরাতন) বাসায় যায় পুলিশ।
মুরাদের স্ত্রী পুলিশকে জানান, মুরাদ ও তার স্ত্রীর সংসার গত ১৯ বছরের। তবে গত দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। অডিও ফাঁসের পর থেকেই এর সূত্রপাত। মুরাদ সবসময় তার স্ত্রীকে ছোট করে কথা বলতেন। সন্তানরা কিছু বললে (মুরাদ) ভাবতেন স্ত্রী শিখিয়ে দিয়েছে। এসব বিষয়ে স্ত্রীকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন তিনি।
মুরাদের স্ত্রীর দাবি, মন্ত্রিত্ব হারানোর পর প্রায়ই উন্মাদের মতো আচরণ করেন মুরাদ। সবাইকে ‘দেখে নেব, মেরে ফেলব’ বলে হুমকি দিতেন। বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে তিনি সন্তানদের গালিগালাজ করেন এবং স্ত্রীকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। নিজেকে বাঁচিয়ে ৯৯৯ -এ কল দেন স্ত্রী। সর্বশেষ রাত ৯ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মুরাদ ফেরেননি বাড়িতে।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ শুনে বাড়িতে গিয়েছি। ডা. জাহানারার কাছ থেকে সব কথা শুনে তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিই। অভিযোগে তিনি বলেন, ডা. মুরাদের এমন আচরণ আগে ছিল না, এটা সম্প্রতি হয়েছে। সম্প্রতি তুচ্ছ বিষয় নিয়েই স্ত্রীকে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দেন তিনি। আজ তার সন্তানরাও হুমকি শুনে ভয় পেয়েছে; তাই পুলিশকে বলেছে।
মুরাদের বাসার পাশেই নিয়মিত ডিউটিতে ছিলেন ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব। তিনি বলেন, ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে আমিও ঘটনাস্থলে যাই। তারা পুলিশের কাছে ঘটনা খুলে বলে। পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডা. মুরাদের স্ত্রী ধানমন্ডি থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজীব। তদন্তের বিষয়ে রাজীব বলেন, আমাকে কিছুক্ষণ আগেই থানা থেকে জানানো হয়েছে যে আমি তদন্ত কর্মকর্তা। আমি জিডির কপিটি এখনো হাতে পাইনি। কপি পেলে আমি আমার তদন্ত শুরু করব। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। এরপর তাকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। বিতর্কের মুখে দেশ ত্যাগ করলেও কানাডায় ঢুকতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তারপর থেকেই আড়ালে রয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান।