হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি আরও চরম আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগ। প্রায় প্রতিদিনই বেশিরভাগ ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়ছে। ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রীরা লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেল্টের সামনে অপেক্ষায় থাকছেন। এরপরও পাচ্ছেন না লাগেজ। এক বেল্টের লাগেজ চলে যাচ্ছে অন্য বেল্টে। এক এয়ারলাইন্সের লাগেজ চলে যাচ্ছে অন্য এয়ারলাইন্সের বেল্টে। পর্যাপ্ত ট্রলি থাকলেও প্রয়োজনের সময় পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের বোডিং কার্ড ইস্যু নিয়ে চলছে অব্যবস্থাপনা। সব মিলে প্রতিদিনই যাত্রীসেবার মানের অবনতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পুরো অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগ। এ বিভাগের কর্মীদের অভিযোগ পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পুরো অচলাবস্থার জন্য তারা বিমানের প্রশাসন বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন। তাদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে তারা ২ মাস আগে প্রশাসন বিভাগের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। শাহজালালে রাতের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে বলেও তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কর্মকর্তা বিষয়টি আমলেই নেননি।
অভিযোগ আছে, তিনি ব্যস্ত ছিলেন বিমানের নিয়োগ, পদোন্নতি আর কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে। যার কারণে পুরো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস লেজেগোবরে অবস্থায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্রুত এই পরিস্থিতি উত্তরণের তেমন উপায় নেই।
বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর অভিযোগ, বিমানের অব্যবস্থাপনার কারণে ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হওয়ায় প্রতিদিনই তাদের জরিমানা করছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, এভাবে কোনো কারণ ছাড়া বিলম্ব চার্জ নেওয়া হলে ফ্লাইট গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হবেন। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করার কথা বিমানকর্মীদের। কিন্তু তারা নিজস্ব জনবল দিয়ে এ সার্ভিস দিচ্ছেন। অথচ এজন্য বিমানকে টাকা দিতে হচ্ছে।
এদিকে বিমানবন্দরের পরিস্থিতি দেখতে বুধবার বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ছুটে যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তিনি সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। যাত্রীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরতদের মধ্যে যারাই দায়িত্বে অবহেলা করবেন তাদের তালিকা তৈরি করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল পৌনে ৩টা পর্যন্ত ব্যাগেজ এরিয়া, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনসহ বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি বিমানবন্দরের আগত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ আছে কিনা তাও জানতে চান।
যাত্রীদের ট্রলির তথ্য দেওয়ার জন্য প্রতিমন্ত্রী ব্যাগেজ এরিয়ার প্রত্যেকটি বেল্টে একজন করে ট্রলিম্যানকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালককে নির্দেশনা দেন। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে কর্মরতদের দ্রুত এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, যাত্রীদের দ্রুত সেবা দিতে হবে। কোনোভাবেই সেবা ব্যাহত বা কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। যাত্রীসেবার মান নিশ্চিতের জন্য বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার লোকজনকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
চেকইন কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিমানের কর্মকর্তারা যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করেন কিনা সে ব্যাপারে নিয়িমত এয়ারলাইন্সগুলো থেকে তথ্য নেওয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি বা দায়িত্বে অবহেলা করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্টারে না এলে চাকরি থাকবে না। যাত্রীসেবার সঙ্গে কোনো আপস নয়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অজুহাত গ্রহণ করা হবে না।