মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ)।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। তাঁর সঙ্গে র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
অন্য কর্মকর্তারা হলেন র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সরকারের নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮–এর আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ আদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়ালি আডেয়েমো বলেন, তাঁদের এ পদক্ষেপ একটি বার্তা দিচ্ছে যে যারা নিপীড়ন চালাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র কথা বলবে।বিজ্ঞাপন
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আমাদের কিছু জানায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে আমাদের সচিবের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আমরা মতামত জানাব।’
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। আর চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য জানতে রাতে কয়েক দফা এই বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এবং মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। পরে মুঠোফোনে খুদে বার্তা এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
একইভাবে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) কামরুজ্জামানের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। তাঁর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি এবং ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ ছাড়াও র্যাব–৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সেদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের এই দুই কর্মকর্তা ছাড়াও উগান্ডা, চীন, শ্রীলঙ্কা, বেলারুশ ও মেক্সিকোর ১০ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চীনের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জিনজিয়ানে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরর ওপর নির্যাতনের কারণে।
