বিড়াল সম্পর্কে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা একেবারেই কম। আমি নিজে যেমন বিড়াল পছন্দ করি না তেমনি বিড়ালরাও সম্ভবত আমাকে তেমন একটা পছন্দ করে না। বিড়ালরা আমাকে কেন পছন্দ করে না সেটি আমি বলতে পারব না বটে; তবে আমি কেন এদের পছন্দ করি না সেটি বলতে পারি। এই প্রাণীটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম আমার বিরক্তির উদ্বেগ হয় শৈশবকালে। আমাদের বাড়িতে একটি বেহায়া বিড়াল ছিল, যাকে ফরিদপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হতো ছোঁচা বিলাই। প্রমিত বাংলায় ছোঁচা শব্দের অর্থ লোভী। তবে সাধারণ লোভ এবং আঞ্চলিক শব্দ ছোঁচার প্রতিশব্দ লোভ এক জিনিস নয়। সাধারণ লোভের বৈশিষ্ট্য হলো- লোভ বেশির ভাগই মনের মধ্যে থাকে। কিছু লোভের কারণে জিহ্বায় লালা চলে আসে এবং শরীরে উত্তেজনা দেখা দেয়। অন্য দিকে কিছু লোভের কারণে জিহ্বা বের হয়ে আসে এবং লোভনীয় বস্তু লেহন না করা পর্যন্ত জিহ্বা মুখের মধ্যে ঢোকে না। আপনি যতই লাথি-গুঁতো, কিল-ঘুষি মারুন অথবা অপমান করুন তাতে লোভের জিহ্বায় কিছুই হবে না- ওটি তার লেহনকর্ম করেই ছাড়বে এবং বিড়ালের লোভ যখন এই পর্যায়ে পৌঁছে তখনই কেবল সেটিকে ছোঁচা বিলাই বলা হয়ে থাকে।
আমাদের বাড়ির ছোঁচা বিলাইয়ের যন্ত্রণায় আমরা যারপরনাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। রান্না করা খাবারে মুখ দেয়ার সব অপকৌশল সে জানত। ফলে আমাদের খাবার যে বিড়াল এঁটো করে দিত সেই সন্দেহ নিয়েই আমরা খাবার খেতাম। অন্য দিকে তার দুর্বৃত্তপনাও ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। খাবারের প্লেট থেকে মাছ-গোশত ছিনতাই করা, শিশুদের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে ভয় দেখানো এবং তাদের খাবার কেড়ে নেয়া ছাড়াও নির্বিচারে সবাইকে আঁচড় দিয়ে আহত করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কোনো শাসন, লাঠিপেটা অথবা অন্য কোনো আঘাতে তাকে কাবু করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় তাকে মারাত্মক আহত করা বা মেরে ফেলা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু এটা করা অসম্ভব ছিল। কারণ প্রাণী হত্যা করে মহাপাপী হয়ে দোজখে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়ার মতো কোনো লোক আমাদের বাড়িতে ছিল না।
উল্লিখিত অবস্থায় বিড়ালটিকে বস্তায় ভরের সাত-আট মাইল দূরের কোথাও ফেলে দিয়ে আসার জন্য আমার ছোট কাকাকে দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি নির্দিষ্ট দিনে কাজটি করলেন এবং অত্যন্ত খুশি মনে বাড়ি ফিরে এলেন। পরের দিন দুপুর বেলায় আমরা সবাই খোশ মেজাজে মধ্যাহ্ন ভোজনে যখন ব্যস্ত ছিলাম তখন লক্ষ্য করলাম যে ছোঁচা বিলাইটি ফিরে এসেছে। আমার শৈশবের এই স্মৃতির কারণে আমি বিড়াল থেকে নিজেকে তেত্রিশ গজ দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পর আমি আর সেটি পারিনি। কারণ আমার বড় সন্তানটি প্রচণ্ড বিড়ালভক্ত হয়ে জন্ম নিলো এবং শিশুকাল থেকেই বিড়াল সান্নিধ্য তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ল। ফলে পুত্রের আবদারে আমি বিড়াল কিনে আনতে বাধ্য হলাম। আমার স্ত্রীর আমার মতোই বিড়ালের বিষয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু পুত্রসন্তানের আগ্রহের কারণে তিনি বিড়ালের যত্নআত্তি করতেন এবং বিড়ালের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতেন। এভাবেই ২০০৫ সাল অবধি চলল। ইতোমধ্যে আমার বড় পুত্র বয়সে বালকে উন্নীত হলো এবং কন্যাটি শিশু থেকে নাবালিকাতে পরিণত হলো। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিড়াল নিয়ে বেশি সময় কাটাতে ভালোবাসত। ফলে আমার স্ত্রী একদিন রাগ করে আমাকে একখানা কড়া নোটিশ দিলেন। তিনি বললেন- তোমার আদারের ছেলে-মেয়েদের বলে দাও- আমি আর বিড়ালের গু পরিষ্কার করতে পারব না। স্ত্রী মহোদয়ার রেড অ্যালার্টটি আমি পুত্র-কন্যাকে জানালাম। তারা তখন মহাচিন্তায় পড়ে গেল। কিভাবে নিরাপদে বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কার করা যায় তা নিয়ে বালক পুত্র এবং নাবালিকা কন্যা বহু চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করে এক উপায় বের করল।
তারা গোপনে নিউ মার্কেট থেকে কালো চশমা এবং রাবারের হাত মেজো কিনে আনাল। তারপর সেই চশমা পরে এবং মোজা হাতে দিয়ে যেই না বিড়ালের গুয়ের ওপর হাত রাখল ওমনি ভাইবোন একসঙ্গে ভক করে বমি করে দিলো। ফলে আমার বাসার যে অংশটি বিড়ালের গু দ্বারা অপরিচ্ছন্ন ছিল সেখানে মনুষ্য বমনযুক্ত হয়ে এক বীভর্ৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করল, আমি রাতে যখন বাসায় ফিরলাম তখন বাসার তাপমাত্রা কত ডিগ্রিতে ছিল তা নিশ্চয়ই আপনাদের বলতে হবে না। আমি সে রাতে খুব বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করলাম এবং বাসায় বিড়াল নিষিদ্ধ করলাম। এ ঘটনার পর বহু বছর চলে গেছে। আমার বড় ছেলেটি এখন বিদেশে আছে। মেয়েটির বিয়ে হয়েছে এবং তৃতীয় ছেলে সন্তানটি ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেনীতে পড়ছে। আমি যখন বিড়ালসংক্রান্ত আমার অতীত স্মৃতি ভুলতে বসছিলাম তখন মাস কয়েক আগে দেখি সংসারে বিড়াল নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে। করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলেটি আমার সময় পেলেই টিভি দেখা এবং কম্পিউটার গেম খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে। মেয়েটি যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন সে তার ছোট ভাইয়ের প্রভাবে সেই ২০০৩-০৪ সালের মতো নাবালিকা হয়ে যায় এবং একসঙ্গে টিভি দেখা ও গেম খেলায় ভাইবোনে প্রতিযোগিতা করে।
উল্লিখিত সমস্যা নিয়ে আমার স্ত্রী যখন তার প্রবাসী জ্যেষ্ঠ পুত্রের পরামর্শ চায় তখন আমার বিদ্বান পুত্র বিলাই থেরাপির কথা বলে তার মাকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, বিড়াল একটি অলৌকিক প্রাণী। এটি মানুষের মনের দুঃখ-কষ্ট টেনে নেয়ার ক্ষমতা রোখে। যে ঘরে বিড়াল থাকে সেখানে জিন-ভূত-প্রেত ঢুকতে পারে না। অধিকন্তু বিড়াল লালন পালনের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের চরিত্রে একধরনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ সৃষ্টি হয়। এসব কথা শোনার পর আমার স্ত্রী বিড়াল আমদানির বিষয়ে নমনীয় হয়ে পড়েন এবং ভারতীয় চ্যানেলের বধূদের আদলে আমার কাছে আবদার করে বলেন, ওগো! শুনেছ! বিড়ালের নাকি মন ভালো করার ক্ষমতা আছে- ভূত তাড়ানোর যোগ্যতা আছে এবং তারা নাকি ছেলেমেয়েদেরকে ভালো মানুষে পরিণত করে দিতে পারে। আমি তার কথা শুনে শুধু বললাম- হুম! ব্যাস! এটুকুই। পরের দিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি একটি রুগ্ণ শীর্ণ নবজাতক বিড়ালছানা বাসার মধ্যে মিউ মিউ করছে- আর আমার ছেলেমেয়ে সেটিকে সাত রাজার ধন মণি-মাণিক্যের মতো যত্নআত্তি শুরু করেছে। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে উল্লিখিত বিড়ালছানাটি বেশ বড়সড় হয়েছে এবং সবার যত্নআত্তি পেয়ে রীতিমতো বাঘের মতো তর্জন গর্জন শুরু করেছে। তার জন্য বিভিন্ন খেলনা কেনা হয়েছে। সে বাঘের মতো ভাব নিয়ে সেসব খেলনা শিকার করে এবং খেলনাগুলোকে কামড় দিয়ে মুখে তুলে নিয়ে পুরোঘর হেলে দুলে এমনভাবে ঘুরে বেড়ায় যা দেখে মনে হতে পারে সে একটি হরিণ শিকার করেছে এবং শিকারের বস্তুটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেটি বিড়ালটিকে কাঁধের উপর চড়িয়ে এমন একটা ভাব নিয়ে ঘরের মধ্যে হাঁটে যা দেখে মনে হয় সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বশ মানিয়ে মহাবীর শেরখান সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজদরবার ত্যাগ করে আমার ঘরে তসরিফ এনেছেন। আমার কন্যাটি বিড়ালটিকে প্রায়ই সাজুগুজু করায় লিপস্টিক, কাজল ইত্যাদি দিয়ে। তারপর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। সেটি দেখে আমার জামাই বাবাজি আবার বিড়ালটির গুণগান সমেত বিরাট আরেকটি প্রশংসাসূচক গদ্য রচনা তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।
ছেলেমেয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার স্ত্রীও বিড়ালকে আদর-আপ্যায়ন করে এবং তারা অর্থাৎ আমার ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী প্রায়ই মৃদু বিতর্ক শুরু করে বিড়ালের তুলনামূলক ভালোবাসা নিয়ে। তারা পরস্পরের কাছে জানতে চায় বিড়াল আসলে কাকে বেশি ভালোবাসে! এ ব্যাপারে আমার ছেলেমেয়ে তাদের পিতার মতোই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় এবং হাসিমুখে স্বীকার করে নেয়- বিড়ালটি আসলে আম্মুকেই বেশি ভালোবাসে। এসব কথাবার্তা এবং বিড়ালের রোজনামচা আমার প্রবাসী পুত্রের কাছে নিয়মিত জানানো হয়। সে সবকিছু শুনে খুবই খুশি বিশেষ করে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতার বিড়ালপ্রীতিতে যথেষ্ট পুলকিত। সে তার মাকে এই সুখবর দিয়ে রেখেছে যে, দেশে ফিরে সে তার ছোট ভাইটিকে আরো একটি বিড়াল কিনে দেবে। বিড়াল সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত গল্প এখানেই শেষ। এবার বিড়ালের জাতীয় গুরুত্ব ও আদিখ্যেতা নিয়ে কিছু বলি।
আমাদের দেশের হাল আমলের রাজনীতি আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইঁদুর-বিড়াল খেলার মহড়া এবং সেই খেলাতে নিজেদের পোষ্য ইঁদুর এবং বিড়ালগুলো যেন ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারে সে জন্য যেসব মহড়া বা রিহারসাল শুরু হয়েছে তা দেখে শুনে যখন ক্লান্ত শরীর নিয়ে গৃহে ফিরি তখন আমাদের পোষ্য বিড়ালটির মতিগতি, আচার-আচরণ ও ভাবভঙ্গি দেখে অনেক কিছু জানতে পারি এবং সেভাবে নিজেকে প্রবোধ দিতে পারি। গত কয়েক মাসে ঢাকার রাজপথসহ দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে বিলাই স্বভাবের মানুষের উৎপাত যেভাবে বেড়েছে এবং আমার শৈশবের সেই ছোঁচা বিলাইটির মতো প্রাণীদের দৌরাত্ম্য যেভাবে অসহ্য হয়ে পড়েছে সেখানে আমার গৃহ অভ্যন্তরের বিড়ালটির কৌতুকপূর্ণ আচরণ আমাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। আমি রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে গিয়ে সচরাচর যত বিলাই স্বভাবের মানুষের হম্বিতম্বি শুনি তাতে মনে হয় অনাগত দিনে একটি মারাত্মক এবং জটিল রক্তক্ষয়ী ইঁদুর-বিড়াল খেলার আয়োজন বেশ জোরেশোরেই চলছে। সুতরাং সেই অবস্থায় কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায় তজ্জন্য বিড়ালের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। বিড়ালের চোখ কেন দিনের আলোর চেয়ে রাতের আলোতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং অন্ধকারময় রজনীতে বিড়াল কেন মানুষের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি স্পষ্ট দেখতে পায় তার সঙ্গে গভীর রাতের ভোট চুরি এবং অন্ধকারের মধ্যে নির্ভুলভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারার বিষয়টির কি কোনো সংযোগ রয়েছে তা জানার চেষ্টা করছি।
বিড়ালের প্রবল ঘ্রাণশক্তি এবং ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র শব্দ অনুধাবন করার যে শক্তি রয়েছে তার সাথে রাজনীতির মধু মেওয়ার গন্ধ অনুভব করা এবং রাজনীতির দুঃসময় বা সুসময়ের আগাম ধ্বনি অনুভব করে পালানো অথবা দৌড়ে কাছে আসার মধ্যে কী সংযোগ রয়েছে তা নিয়েও চিন্তাভাবনা আমাকে তাড়িত করছে। বিড়াল কেন বাঘের মতো ভাবসাব দেখায় এবং কিছু বিড়াল কেন ছোঁচা বিলাইতে রূপান্তরিত হয় তা নিয়ে যেমন চিন্তাভাবনা করছি তেমনি ক্রোধের বশে কেউ যদি বিড়ালকে মেরে ফেলে তবে আড়াই সের লবণ মাখিয়ে কেন বিড়ালের দেহ সমাহিত করার বাঙালি প্রথা চালু হয়েছিল তাও জানার চেষ্টা করছি। আমি ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি যে, বিড়ালরা সবসময় নিজেকেই প্রভু বা মালিক মনে করে। তারা তাদের লালন-পালনকারী মানুষদেরও নিজেদের মতো বিড়াল মনে করে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের চিন্তাচেতনা-অনুভ‚তি এবং বিবেচনা শক্তির একটি অভিনব বিষয় বিজ্ঞান আবিষ্কার করে ফেলেছে। আর সেটি হলো- বিড়ালরা তাদের লালন-পালনকারী মানুষদের বিড়াল মনে করে সত্য কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এ কথা মনে করে না যে, তারা তাদের লালন- পালনকারীদের চেয়ে বড় বিড়াল নয় কিংবা সম আকৃতির নয়। তারা মনে করে, লালন- পালনকারীরা হলো বড় বিড়াল, আর তারা হলো ছোট বিড়াল।
মহান আল্লাহ পাকের একটি অনন্য সৃষ্টি বিড়ালের উল্লিখিত মন-মানসিকতার সাথে যদি আমরা বিড়াল স্বভাবের মনুষ্য জাতের মন- মানসিকতার তুলনা করি তবে কী দেখতে পাবো! তারা কি তাদের লালন-পালনকারীদের বিড়াল মনে করে, নাকি মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করে? অথবা তারা কি তাদের লালন-পালনকারীদের নিজেদের চেয়ে ছোট নাকি বড় বিড়াল মনে করে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে বিড়াল স্বভাবের মানুষ তৈরির কারিগররা নিশ্চয়ই এসব জানেন বলেই আমার বিশ্বাস।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি