১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাদেরকে কেন ২০ কোটি টাকার চেক দিয়েছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের ওরফে প্রিন্স মুসা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মুসাকে। এ ছাড়া ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাদেরের সঙ্গে তার আর কোনও গোপন লেনদেন হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুসার প্রতিষ্ঠানে কাদেরকে লিগাল অ্যাডভাইজার হিসেবে নিয়োগের পেছনে আর্থিক লেনদেন রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ। মোদ্দাকথা, মুসা বিন শমসের নিজে প্রতারণার শিকার নাকি প্রতারক দলের অংশ সেটার সন্ধানেই আছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মুসা বিন শমসের মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) গিয়েছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। ৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে নিয়ে বড় বড় কথা বলেছেন। পুলিশ বলছে, ‘আমাদের ধারণা মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে আমরা যতটা জানতাম সে তুলনায় তার অত সম্পদ নেই। গুলশানে একটি ভবন থাকলেও সেটা তার স্ত্রীর নামে। দেশে কোনও টাকা নেই তার। তবে সুইস ব্যাংকে ৮২ বিলিয়ন ডলার রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেন মুসা। এও বলেন, টাকাটা ফিরিয়ে আনতে পারলে পুলিশের উন্নয়নে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন তিনি। পদ্মা সেতুর মতো আরেকটি সেতু নির্মাণেও সহায়তা করবেন। তবে তিনি এখন কোনও ব্যবসায় জড়িত নন বলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন।
মূলত জনশক্তি রফতানি করেই দেশে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন মুসা। গোয়েন্দাদের বলেন, তিনি ওই কাজ না করলে বাংলাদেশে এত রেমিটেন্স পেত না।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তার আচরণ রহস্যময় মনে হয়েছে। গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় হাজার একর জমি রয়েছে বলে দাবি করেন মুসা। এটাও অবিশ্বাস্য লেগেছে আমাদের। জিজ্ঞাসাবাদের পুরোটা সময় নিজেকে খুবই ধনাঢ্য জাহির করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীও দাবি করেন নিজেকে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও নাকি তার সখ্যতা আছে। এমনকি প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গেও নাকি তার বন্ধুত্ব ছিল।’
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মুসা দাবি করেন, আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঋণ পাওয়ার সূত্র ধরে ভুয়া অতিরিক্ত সচিব কাদেরের সঙ্গে তার পরিচয়। এ সময় মুসা জানতে পারেন আব্দুল কাদের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ঋণ দেন। ঋণ পাওয়ার আশায় কাদেরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। ওই সখ্যতাকে পুঁজি করে আব্দুল কাদের মুসার সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো লোকজনকে দেখাতে থাকেন। মুসার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময় মুসাকে তিনি ঋণ দিয়েছেন বলেও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে কাদের।
গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুসার কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। এত বড় ব্যবসায়ী হয়েও প্রতারক কাদেরের সঙ্গে কেন এত সখ্যতা বা এত মোটা অঙ্কের লেনদেন কেন করলেন সেটা জানতে তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এ ছাড়া প্রতারক আব্দুল কাদের রিমান্ডে রয়েছে। তার কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘মুসা বিন শমসের নিজে প্রতারক দলের সদস্য, নাকি নিজে প্রতারিত হয়েছেন তা তদন্ত করছি। তার দেওয়া অনেক তথ্যই অবাস্তব মনে হয়েছে। গাজীপুরে হাজার একর জমির বিষয়টিরও সত্যতা নেই বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান। এ ছাড়া সুইস ব্যাংকেও তার টাকা নেই বলে দাবি করেন তারা।’