চাঁদপুরের শাহরে প্রবাসী বাবার অনুপস্থিতিতে মায়ের পরকীয়ায় বাধা ছিলেন মেয়ে। আর সেই পথের কাঁটা দূর করতে মা তাহমিনা সুলতানা রুমি তার প্রেমিক আব্দুল হান্নানকে দিয়ে মেয়ে নওরোজ আফরিন প্রিয়াকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। শুধু তাই নয়, মেয়ে হত্যার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে থানায় মামলাও করেছিলেন মা।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কার্তিক চন্দ্র ঘোষের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য দেন নিহত প্রিয়ার মা। পরে আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত আব্দুল হান্নানের সঙ্গে আর অন্য কেউ জড়িত ছিল কি না। তা নিশ্চিত হতে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড চাইবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলার শাহরাস্তি উপজেলার আহমেদ নগর গ্রামে খুন হন গৃহবধূ নওরোজ আফরিন প্রিয়া (২১)। বসতঘরে একা পেয়ে ঘাতকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকে। এই ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরদিন তার মা তাহমিনা সুলতানা রুমা নিজেই বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামরা করে।
এদিকে, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক আসাদুল ইসলাম জানতে পারেন- নিহত নওরোজ আফরিন প্রিয়ার মায়ের সঙ্গে পরকীয় সম্পর্ক করেছে সদ্য বিদেশ ফেরত প্রতিবেশী আব্দুল হান্নানের সঙ্গে। মায়ের এমন অনৈতিক সম্পর্ক ভালো চোখে দেখেননি প্রিয়া। যে কারণে, পথে কাঁটা দূর করতে মায়ের পরামর্শে প্রেমিক আব্দুল হান্নান প্রিয়াকে হত্যা করে। এই ঘটনার আগে মা তাহমিনা সুলতানা রুমি তার একমাত্র ছেলেকে অন্য কাজে বাজারে পাঠান। আর তিনি নিজেই কৌশলে বড়ি থেকে সরে যান। পরে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাজির হন।
গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবে মামলার প্রাথমিক তদন্ত শেষে গত বুধবার রাতে প্রথমে আটক করা হয় আব্দুল হান্নানকে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার বাদী মা তাহমিনা সুলতানা রুমিকে আটক করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের হাজির করা হয় চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কার্তিক চন্দ্র ঘোষের আদালতে। সেখানে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করেন মা।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, নওরোজ আফরিন প্রিয়ার বাবা ইসমাইল হোসেন দীর্ঘদিন বিদেশ থাকেন। এই সুযোগে প্রতিবেশী আব্দুল হান্নানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান তাহমিনা সুলতানা রুমি। গত কয়েক বছর আগে মায়ের সঙ্গে আব্দুল হান্নানের আপত্তিকর দৃশ্য দেখে ফেলেন মেয়ে। ওই বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত বাবাকে জানান প্রিয়া। পরে এই নিয়ে গ্রামে সালিস বৈঠক হয়। একপর্যায়ে আব্দুল হান্নান নিজেই বিদেশ চলে যান। পরে গত একমাস আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
পুলিশ সুপার আরো জানান, এ সময় তারা আবারো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। শেষপর্যন্ত মেয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় পথে কাঁটা দূর করতে প্রিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মা ও তার পরকীয়া প্রেমিক।