ভারতের আসামে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে তিন জেলায় ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। বুলডোজার দিয়ে একের পর এক বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সশস্ত্র পুলিশ। মূলত ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিদের ভিটেহারা করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান বলে অভিযোগ করছে রাজ্যটির বিরোধীরা।
আসামের শীর্ষ দৈনিক অসমীয়া প্রতিদিনের এক খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যটির দরং জেলার সিপাঝারে উচ্ছেদের প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই জন প্রতিবাদকারী নিহত হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির উপর ছুটে এসে লাফাচ্ছেন এক ফটোগ্রাফার। পাশে দাঁড়ানো পুলিশেরাও ওই গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির উপর লাঠি চালাচ্ছে। কয়েক জন পুলিশ ওই ফটোগ্রাফারকে টেনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে লাথি, ঘুষি মেরেই চলেছেন তিনি।
পুলিশের বরাতে অসমীয়া প্রতিদিন জানায়, দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময় প্রতিবাদকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে শূন্যে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। এ সময় পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হয়।
দৈনিক যুগশঙ্খের এক খবরে বলা হয়, ‘উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে বসবাস করছে। তাদের পূর্বপুরুষদের নাম ১৯৬৬ বা তার আগের ভোটার তালিকায় আছে। সকলের নাম এনআরসি তালিকায় সন্নিবিষ্ট হয়েছে। কিন্তু বিজেপি সরকার তাদেরকে রোহিঙ্গা তকমা সেঁটে দিচ্ছে। এর আগের সপ্তাহে শোনিতপুর জেলার প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার উচ্ছেদ করে তাদেরকে বাংলাদেশি তকমা দেন বিজেপির নেতারা। হোজাই জেলায় কয়েকটি পরিবার উচ্ছেদ করে একই রকম মিথ্যা প্রচার করছে বিজেপি।
পত্রিকাটি জানায়, রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেস ও এআইইউপিএফ জোট নেতারা বলছেন, নির্বাচনের পর প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। কাউকে ব্যবসায় বাধা দিচ্ছে, কাউকে উচ্ছেদ করছে। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিচ্ছে শাসক দলের কর্মীরা। কোর্টের নির্দেশ মতো উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ না করলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী জোটের নেতারা। এছাড়া, যাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।