৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন ও ৮ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসাইনসহ তার চার সহযোগী।
বুধবার গভীর রাতে ঢাকার মিরপুর দারুসসালাম গাবতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জব্দকৃত অস্ত্রগুলো দেশের বিভিন্ন সংগঠনের কাছে বিক্রি করা হতো বলে তারা জানায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আকুল হোসেন (৩৫) বেনাপোলে ঘিবা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে, মো. ফজলুর রহমান (৩০) বেনাপোলের ভবেরবেড় গ্রামের আজিবরের ছেলে, সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন মিলন (২৮) বেনাপোলের বোয়ালিয়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে, মো. ইলিয়াস হোসেন (৩৪) যশোর শহরের আমির হোসেনের ছেলে ও সিএন্ডএফ এজেন্ট ইয়ান ভাজার ছেলে আজিম উদ্দিন আজিম (২৭)। গ্রেপ্তার পাঁচজনকে তিন দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে ডিবি।
অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা আকুল হোসেন যশোর শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি ২০১৯ সালেও অস্ত্রসহ বেনাপোল থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিনে বেরিয়ে একই পেশায় ফিরে যান আকুল।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া আকুল হোসেন যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধ হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, সোনা ছিনতাই, মারামারিসহ কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা সংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে বেনাপোল পোর্ট থানায়। আকুল হোসেন যাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতো তাদের অধিকাংশই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু জানান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বেনাপোল থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি অস্ত্রের একটি বড় চালান পাচার হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে- এমন ধরনের গোপন সংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে আসা ডিবির একটি বিশেষ টিম ঢাকার মিরপুর দারুসসালাম গাবতলী এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকার আটক করে। পরে প্রাইভেটকার থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসাইনসহ ৫ জনের দেহ তল্লাশি করে ৮টি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন ও ৮ রাউন্ড গুলিসহ তাদের আটক করে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
আটক ফজলুর রহমানের পিতা আজিবর রহমান বলেন, ঢাকা ডিবি পুলিশ আমার ছেলে ও আকুল হোসাইনসহ ৫ জনকে ৮টি পিস্তলসহ আটক করেছে। আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন ও মিলন হোসেন ডেকে নিয়ে যায় ঢাকায় যাওয়ার জন্য।
বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু জানান, গত ১০ দিন আগেও ঘিবা সীমান্ত দিয়ে বিদেশি পিস্তলের একটি বড় চালান আকুল হোসেন পাচার করে নিয়ে আসে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মোশাররফ হোসেন বলেন, আকুল হোসাইন দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা ও সোনা ছিনতাই কাজে জড়িত। সে ঘিবা সীমান্ত দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাকারবারী দলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র পাচার করে এনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছিল বলে আমরা জানতে পারি। এই চক্রটির প্রধান আকুল হোসেন ২০১৪ সাল থেকে দুই শতাধিক অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছে। প্রতিটি অস্ত্র চক্রটি কিনেছে ২৮ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এবং প্রতিটি বিক্রি হত ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড স্মাগলিং, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইস মাদক চোরাচালানে জড়িত।
বর্ণনা দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, রাত আনুমানিক সোয়া ৩টায় গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে একটি প্রাইভেটকার দ্রত গতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকে। এসময় দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থান নেওয়া গোয়েন্দা দলকে রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে বলা হয়, অন্য দল দুটি প্রাইভেটকারটির পেছনে ধাওয়া করে। রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় জট তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, জ্যামে আটকে পড়া গাড়িটিকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘিরে ফেললে চালক এবং পেছনের সিটের একজন লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। তাদের দেহ তল্লাশি করার সময় আকুল হোসাইনের কোমরের পেছনে প্যান্টে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও গলায় ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগে ৫টি বিদেশি পিস্তল এবং ৫ রাউন্ড গুলি ও আটটি খালি ম্যাগজিন পাওয়া যায়।
এছাড়া আব্দুল আজিমের কোমরে গোঁজা অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ইলিয়াস হোসেনের কোমরে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়ার কথা জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।