ইন্দোনেশিয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে গেলে যুবতীদের ‘কুমারিত্ব পরীক্ষা’ দিতে হয়। এবার সেই সিস্টেমের ইতি ঘটতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। কারণ, নারীদের কুমারিত্ব পরীক্ষাকে এক রকম মানসিক নির্যাতন হিসেবে দেখা হয়। দীর্ঘদিন এটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল আন্দিকা পারকাসা ইঙ্গিত দিয়েছেন এই ধারা বাতিল হতে যাচ্ছে। ফলে পুরুষদেরকে যে পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়, একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে যুবতীদের ক্ষেত্রেও। এর আগে যাদেরকে ‘কুমারী’ হিসেবে প্রমাণ পাওয়া না যেতো তাদেরকে সেনাবাহিনীতে নেয়া হতো না।সারাদেশের সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে এক টেলিকনফারেন্সে এ ঘোষণা দিয়েছেন জেনারেল আন্দিকা পারকাসা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর শিক্ষা বিষয়ক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নতুন সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হবে। ১৮ই জুলাই ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ইউটিউবে পোস্ট করা টেলিকনফারেন্সে তার ওই বক্তব্যের অংশবিশেষ প্রকাশ করা হয়েছে। জেনারেল পারাসকা বলেছেন, এ ছাড়া অন্য কোনো কারণে আর কোনো মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে না। এমন কিছু বিষয় আছে, যা প্রাসঙ্গিক নয়। আমরা এমন সব পরীক্ষা আর করতে পারি না। পুরুষদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা যেসব পরীক্ষা করি, সেই একই ধারা অনুসরণ করতে হবে মেয়েদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও।
এর আগে যুবতীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের যোনিদেশে পরীক্ষা করে কুমারিত্ব পরীক্ষা করা হতো। জেনারেল পারসাকার এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাগত জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা বলেছে, ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সব শাখায় নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরে যুবতীদের নির্যাতনমূলক, অবৈজ্ঞানিক এবং বৈষম্যপূর্ণভাবে ‘কুমারিত্ব পরীক্ষা’ করা হয়। জেনারেল পারসাকা সেই ধারা পরিবর্তনের কথা বলেছেন। রিপোর্ট হয়েছে যে, দেশটির নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীও এই ধারা অনুসরণ করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইন্দোনেশিয়ার গবেষক আন্দ্রেয়াস হারসোনো বলেছেন, সেনাবাহিনী ঠিক কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং ব্যাটালিয়ান কমান্ডারদের এই নির্দেশ মানতে হবে। তাদের এই পরীক্ষা অবৈজ্ঞানিক এবং নির্যাতনমূলক এটা স্বীকৃত হয়েছে।
ওদিকে ইন্দোনেশিয়ার নারীরাও এ পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। ২৩ বছর আগে যখন ১৮ বছর বয়স ছিল অনিন্দি’র, তখন তারও এই পরীক্ষা করা হয়েছিল জাকার্তায়। অনিন্দি তার প্রকৃত নাম নয়। তিনি বলেন, এই পরীক্ষা বাতিল করা একটি মাইলফলক। কারণ, এই পরীক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন যুবতীকে অবমাননা করা হয়। এতে মানসিক ক্ষত সৃষ্টি হয় ওই যুবতীর।